Thank you for trying Sticky AMP!!

আমি কেন যে এমন করলাম!

মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে মডেল: বেনজির ছবি: অধুনা

কিছুদিন আগে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে অনিন্দিতার (ছদ্মনাম) সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তৈরি হওয়া সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া তাঁর জন্য খুব কষ্টের। বন্ধুবান্ধব সবাই তাঁকে বলছে মনোযোগ অন্যদিকে ফেরাতে, কিন্তু কিছুতেই তা পারছে না অনিন্দিতা। খানিক পরপরই কান্না পাচ্ছে মেয়েটির, ভুলে থাকার চেষ্টা করলেও বারবার অতীতের সেই সম্পর্কের কথা মনে পড়ছে। মনে শঙ্কা জাগছে; হয়তো কখনোই স্মৃতির এই চোরাবালি থেকে সে বের হয়ে আসতে পারবে না।

জীবনে চলার পথে আমাদের নানা রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কখনো পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে কখনোবা প্রতিকূলে। ফলে মনে তৈরি হয় নানা রঙের আবেগ। এই আবেগ আমাদের মধ্যে রাগ, হিংসা, ঘৃণা কিংবা ভালোবাসা ও আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। তবে সবটা কিন্তু সময়োপযোগী নয় বরং প্রায়ই অনাকাঙ্ক্ষিত আবেগের বেড়াজালে আটকা পড়ি আমরা। সংকটের শুরু হয় তখনই।

আমরা কি ভেতরের আবেগ নিয়ে ভাবি কিংবা খেয়াল রাখি যে ঠিক এই মুহূর্তে ঠিক কী অনুভূতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি? দেখা যাবে খুব একটা খেয়াল করা হয় না। বেশির ভাগ সময় মন ভালো কিংবা খারাপ লাগছে—এসব দায়সারা কথা বলে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাই আমরা।

ভালোলাগার মধ্যে ভালোবাসা, আনন্দের অনুভূতি এবং খারাপ লাগার মধ্যে রাগ, বিরক্তি অথবা হিংসার অনুভূতি থাকতে পারে, তা সুনির্দিষ্টভাবে ভেবে দেখা হয় না। এর প্রমাণ মেলে অভিধানেও। ইংরেজির চেয়ে বাংলা শব্দভান্ডারে আবেগের নাম অনেক কম। তাই আমরা যখন ভাবতে বসি কেমন অনুভব করছি তখন ঠিক আবেগ প্রকাশের যথোপযুক্ত শব্দ খুঁজে পাই না।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে কেন আবেগ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। ধরুন কোনো এক ঘটনায় আমাদের একেকজনের একেক রকম চিন্তা কাজ করে। এই চিন্তা আমাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে এবং সেটা ব্যবহারে একেকভাবে প্রকাশ পায়। কেউ রেগে গেলে হয়তো চিৎকার করছে আবার কেউবা চুপ করে বসে থাকছে। এর সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়াও স্বাভাবিক; যেমন হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হাত–পা ঘেমে যাওয়া, মাথাব্যথা—আরও কত–কী!

এখন যদি আবেগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকে তবে তা এসব প্রতিক্রিয়া বুঝতেও সাহায্য করবে। কোনো ঘটনার পেছনে একটি অথবা একাধিক আবেগ কাজ করছে কি না, তা অনুধাবন করতেও সুবিধা হবে। অনেকে প্রায়ই বলেন, ‘আমি কেন যে এমনটা করলাম, বুঝতে পারিনি।’ যদি নিজেদের আবেগের সংস্পর্শে থাকা যায় তবে তা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও সচেতন করবে এবং একই সঙ্গে নিজের সম্পর্কেও বুঝতে সাহায্য করবে।

আবার নেতিবাচক আবেগকে অনেকে উপেক্ষা করেন। যেমন যদি হিংসা হয় তাহলে সাধারণত সচেতনভাবে মেনে নেন না। কিংবা মন খারাপ হলে সেটাকে সরিয়ে অন্য কিছু করতে চান, যা আপাত দৃষ্টিতে ধামাচাপা দেওয়া মনে হলেও কোনো না কোনোভাবে সেটা প্রকাশিত হয়েই যায়।

তাই প্রথমেই আবেগ চিহ্নিত করতে হবে এবং আরও অন্য অনুভূতির মতো এটাও একটা অনুভূতি, তা মেনে নিতে হবে। খেয়াল করতে হবে এই আবেগ আমাকে কী বলতে চাইছে। তারপর সেটার মূল্যায়ন করতে হবে। চাইলে কারও সঙ্গে শেয়ার করা যেতে পারে অথবা দিন শেষে ডায়েরিতে টুকে রাখা যেতে পারে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হলেও পিছপা হওয়া যাবে না।

আবেগের নিয়ন্ত্রণ নিজেকে বুঝতে এবং তার ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে। একই সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতেও সাহায্য করে। তবে এই আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অর্জন সময়সাপেক্ষ হলেও এটি মানুষের জীবনে নিয়ে আসতে পারে নতুন পরিবর্তন।