Thank you for trying Sticky AMP!!

লিটনের খেলা দেখতে দোকানেও টিভি নিয়েছি

দিনাজপুর তখন রাজশাহী বিভাগের অংশ। বিভাগের ১৬টি জেলায় ১৬টি দলের বাছাই চলছে। দিনাজপুরের ১৪ জনকে নিয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ দল গঠন করা হবে। খেলোয়াড় সংগ্রহের জন্য শহরে মাইকিং করা হলো। তা শুনে লিটন তার বড় ভাই বাপ্পীর কাছে ছুটে এল। বলল, ‘দাদা, আমি 

লাইনে দাঁড়াতে চাই।’ কথা শুনে আমি বললাম, ‘বাবা, তুমি তো কাঠের বল খেলতে পারবা না।
বল লাগলে তখন কী হবে?’ সে কোনো উত্তর দিল না।

ওই কথা বলে সেদিন আমি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। পরে রাতে এসে শুনি, লিটন ওর দাদাকে নিয়ে গিয়েছিল মাঠে। লাইনে দাঁড়িয়েছিল এবং ১৪ জনের একজন হিসেবে দলে সুযোগও পেয়েছে। ততক্ষণে সেই আনন্দে সে আত্মহারা। এমন আনন্দ দেখে আমিও আর কিছু বলতে পারিনি।

তবে সেটাই শুরু নয়। সেই ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল ছেলে আমার। দিনাজপুর শহরেই আমার গয়নার দোকান। একদিন বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখি লিটন নেই। ওর মা বলল, ‘বাড়ি এসে ব্যাগ রেখেই খেলতে বেরিয়েছে। দুপুরে খায়ওনি।’ খুব রাগ হলো। বেরিয়ে পড়লাম মাঠের দিকে। মাঠে গিয়ে দেখি কোচের পরামর্শে একমনে প্র্যাকটিস করছে। যে রাগ নিয়ে গিয়েছিলাম, ওর পরিশ্রম দেখে সব রাগ পানি হয়ে গেল।

ক্রিকেটের বেলায় এমনই ছিল লিটন দাস। খাওয়া–দাওয়া ভুলে মাঠে পড়ে থাকত। স্কুল থেকে ফিরে এমন অসংখ্য দিন না খেয়েই মাঠে গিয়েছে।

এ রকম অসংখ্যবার তাকে মাঠ থেকে ধরে আনতে হয়েছে। যে কেউ ওকে খোঁজ করলেই প্রথমত যেত পিলখানার মাঠে। একটা সময় আমিও বুঝে গেলাম খেলার প্রতি লিটনের দরদের কথা। তা ছাড়া খেলাধুলা করলে শরীর–মন ভালো থাকবে, খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে থাকবে এই ভেবে আমিও কিছু বলতাম না। শুধু বলতাম–বাবা, তুমি আর যাই কর পড়াশোনাটা পাশাপাশি চালিয়ে যাও। ছেলে আমার কথা রেখেছে। বিকেএসপি থেকে এইচএসসি পাস করার পরে ছেলে
এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছে। আমি তাকে কোনো বিষয়েই চাপ দিতে পারিনি কখনো।

খেয়ে না–খেয়ে, খেলার প্রতি এই পাগলামিই তাকে আজ জাতীয় ক্রিকেট দলে নিয়ে গেছে। বাবা হিসেবে আমার প্রচেষ্টায় নয়, লিটন নিজের যোগ্যতায় জাতীয় দলে খেলছে। এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে গেছে সে, এটা যে কতখানি গর্বের তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

ছেলের খেলা থাকলে সাধারণত বাড়িতেই দেখি। কিন্তু ব্যবসার ব্যস্ততার মধ্যেও যেন খেলা দেখতে পারি সে জন্য দোকানেও একটি টিভি নিয়েছি।

বাংলাদেশ দলের সবাই ভালো খেলুক, দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনুক এই কামনাই করি।

অনুলিখন: রাজিউল ইসলাম, দিনাজপুর