Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে বয়সের ব্যবধান কী প্রভাব রাখে

বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়সের পার্থক্য স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলে না। মডেল : ঊর্বি ও আহসান

ক্যাম্পাসে রীতিমতো জনপ্রিয় জুটি ছিল নিম্মি-রাসেল। ক্লাসে পাশাপাশি বসা থেকে শুরু করে লাইব্রেরি ওয়ার্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে কিংবা আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় দুজনে ছিল সমানতালে। কেবল প্রেমিক জুটি হিসেবেই নয়, ক্লাসের সেরা শিক্ষার্থীও ছিল ওরা। ছয় বছর চুটিয়ে প্রেমের পর মহাধুমধামে বিয়ে। সেই বিয়ের বছর না ঘুরতেই বিচ্ছেদ।

নিম্মি-রাসেলের পরিচিতদের ঘোর কাটে না, এত চমৎকার সম্পর্ক এভাবে শেষ হয় কী করে? দুই পরিবারের গুরুজনেরা তখন বললেন, সমবয়সী হওয়ার কারণে বেশি দিন এক ছাদের নিচে থাকতে পারেনি ওরা। কেউ নাকি কাউকে মানতে পারেনি।

অনেক দম্পতিই মনে করেন, স্বামী–স্ত্রী সমবয়সী হলে ভালো বন্ধু হওয়া যায়। মডেল : ঊর্বি ও আহসান

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম থেকে শুরু হওয়া সম্পর্কের ১৪ বছর পার করেছেন তমা-সাজ্জাদ দম্পতি। এর মধ্যে বিবাহিত জীবনের ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে, সংসার আলো করেছে দুই যমজ সন্তান। তমার কাছে জানতে চাওয়া হলো সমবয়সী হওয়ার কারণে সম্পর্কে কখনো সমস্যায় পড়তে হয়েছে কি না। উত্তরে বললেন, ‘বিয়ের পরপরই চাকরিসূত্রে সাজ্জাদ অন্য দেশে চলে যাওয়ায় বেশ লম্বা সময় লং ডিসট্যান্স সম্পর্কে ছিলাম। তবে আমরা বন্ধুর মতো এই পথটা পাড়ি দিয়েছি। একে অন্যের ক্যারিয়ার গ্রোথে সাপোর্ট দিয়েছি।’ সংসারজীবনে যে সংকট আসেনি, তেমন নয়, কিন্তু তা তিক্ততার দিকে যেতে দেননি কেউ। বরং সমবয়সী হওয়ার কারণে দুজন দুজনকে বেশি ভালো করে বুঝতে পারেন বলেও মনে করেন তাঁরা। ‘সমবয়সী বলেই হয়তো সমস্যাগুলো আমরা বন্ধুর মতো শেয়ার করতে পারি। আমরা এখন একে অন্যের বেস্ট ফ্রেন্ড, যখনই মানসিকভাবে দুর্বল বোধ করি, পরস্পরকে আশ্রয় দিই।

Also Read: বিচ্ছেদের পরও সহজ সম্পর্ক কেন জরুরি

স্বামী বা স্ত্রী যে–ই বয়সে বড় হোক না কেন, পরস্পরকে বোঝাটা খুব জরুরি। মডেল : ঊর্বি ও আহসান

সংসারে বোঝাপড়ার জন্য বয়সের ব্যবধান থাকাটা জরুরি কি না, এ নিয়ে আমাদের সমাজে নানা মত রয়েছে। একদল বলেন, সমবয়সী বিয়ে করা ভালো নয়। আরেক দল মনে করেন, এই যুগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য বেশি থাকাও সমীচীন নয়। আর স্ত্রী স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হবেন, এটা তো আমাদের সমাজে ভাবাই যায় না।

স্বামী–স্ত্রী সমবয়সী হলে সেই সম্পর্কে দ্রুত ফাটল ধরে, এটা সমাজ বা পরিবারের ভুল ধারণা। মডেল : ঊর্বি ও আহসান

সংবাদকর্মী আশফাক রহমান (ছদ্মনাম) ভালোবেসে বিয়ে করেছেন তার চেয়ে চার বছরের বড় অনন্যাকে। নানা কাঠখড় পুড়িয়ে, দুই পরিবারকে বুঝিয়ে দুজনে যৌথ জীবন শুরু করেছেন, তা–ও ১০ বছর হতে চলল। জানতে চেয়েছিলাম, তাঁদের দাম্পত্যে বয়সের এই পার্থক্য কোনো প্রভাব ফেলেছে কি না। আশফাক বললেন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পুরোটাই পারস্পরিক বোঝাপড়াভিত্তিক। এ ক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্য কোনো বাধা নয়। স্বামী সমবয়সী বা বড় হলেও পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়া খারাপ হতে পারে। বিয়ের পর অবশ্য অনন্যাকে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে, তার বয়স নিয়ে। আশফাক চার বছরের বড় মেয়েকে বিয়ে করছেন, এটা জেনে পরিবারের অনেক সদস্যের মধ্যে অস্বস্তিও ছিল। তবে দীর্ঘ সংসারজীবনে সেসব অস্বস্তিও কাটিয়ে উঠেছেন তাঁরা।

সংসারে মতবিরোধ হলে দুজন একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে।মডেল : ঊর্বি ও আহসান

সাধারণত আমাদের দেশে স্বামীরা বয়সে বড় হন, ফলে স্ত্রীর চেয়ে বেশি বোঝেন—এই যুক্তিতে বড় সিদ্ধান্তগুলো তাঁরাই নিয়ে থাকেন। আশফাক-অনন্যা দম্পতির ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন? বয়সের ব্যবধানের কারণে অনন্যার চিন্তাভাবনা অনেক পরিণত, বললেন আশফাক রহমান। সে কারণে পরিবারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাটিও তার হাতে। আশফাক বলেন, সম্পর্কের শুরুতে তিনি দেখেছেন যে অনন্যা যে সিদ্ধান্ত নিতে বলতেন, দিন শেষে সেটিই সঠিক প্রমাণিত হতো। এরপর থেকে অনন্যার সিদ্ধান্তেই আস্থা রাখেন তিনি। পাশাপাশি নিজেরা আলোচনা করেও সিদ্ধান্ত নেন। দুজনে যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন। একে অন্যের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রাখেন। পারস্পরিক বোঝাপড়া, ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা—এসব দিয়েই দুই সন্তানসহ দাম্পত্যের ১০ বছর পার করে দিয়েছেন এই দম্পতি।

রেনু-শাহেদ দম্পতিকে ঠিক উল্টো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। দুজনের বয়সের পার্থক্য ৮ বছর। রেনুর অভিযোগ, শাহেদ তার সবকিছুতেই ভুল ধরেন, খুঁত বের করেন। অন্যদিকে শাহেদের ধারণা, বয়সের পার্থক্যের কারণে রেনুর সঙ্গে অনেক কিছুতেই তার মিল পড়ছে না। তাই রেনুর ভুলগুলো তিনি ধরিয়ে দেন। এদিকে রেনু বলেন, তিনি অনেকবার মুখোমুখি বসে নিজের আবেগ বা অনুভূতিটুকু বোঝাতে চেয়েছেন, প্রয়োজনে কাউন্সেলিংয়ের সহায়তা নিতে চেয়েছেন। কিন্তু শাহেদ এটাকে রেনুর বয়সের পাগলামি ভেবে উড়িয়ে দিয়েছেন।

Also Read: এই ৪ কাজে তাড়াহুড়া করা যাবে না

সঙ্গীদের মধ্যে পরিপক্বতা থাকা জরুরি। মডেল : ঊর্বি ও আহসান

আসলেই আদর্শ দাম্পত্যের ক্ষেত্রে বয়স কি কোনো বিষয়, জানতে চাইলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলছিলেন, সুখী দাম্পত্যের জন্য বয়সের পার্থক্যে কোনো বিষয় না। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে বয়সের পার্থক্যের চেয়ে বড় হলো বুঝতে না পারার অক্ষমতা। ধরুন, ১০ বছরের বড় কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে বুঝছেন না। এটা যতটা না বয়সের জন্য, তার চেয়ে বেশি ওই স্বামীর অন্যকে বা অন্যের মতকে গ্রহণ করতে না পারার মানসিকতার জন্য। সমবয়সী কারও সঙ্গে বিয়ে হলেও হয়তো তার একই সমস্যা হতো। তিনি হয়তো বড় হওয়ার সময় তেমন কোনো মেয়ের সঙ্গে মেশেননি। ফলে মেয়েদের বিষয়গুলো তার কাছে অচেনা।

নারী-পুরুষের কেবল শারীরিক গঠনই নয়, মানসিক গঠনও আলাদা। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তাই কোনো সম্পর্কে ফাটল ধরলে সেখানে স্বামী–স্ত্রীর বয়সের পার্থক্যকে দোষারোপ করা ঠিক না। সংসারে মতবিরোধ হলে দুজনে একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ হলো সঙ্গীদের মানসিক গঠনপ্রকৃতি ও পরিপক্বতা। বয়স বেশি হলেও কারও কারও পরিপক্বতা না–ও থাকতে পারে। আবার কম বয়সী কেউ মানসিকভাবে যথেষ্ট পরিপক্ব হতে পারেন। দাম্পত্য সম্পর্কে দুজন সঙ্গীর মধ্যে পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকতে হবে, একে অন্যকে বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। আলোচনার সময়েও সম্মানের সঙ্গে একে অন্যের কথা শুনতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য পক্ষের কথা ক্লিশে শোনাতে পারে, কিংবা মনে হতে পারে যে আবেগের মূল্য দিচ্ছেন না সঙ্গী। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে সমস্যাটি শুনতে হবে, নিজের জায়গা থেকে চিন্তা করতে হবে। বয়সের পার্থক্যের দোহাই না দিয়ে পরিবারের সদস্যদেরও বুঝতে হবে যে কেউই শতভাগ নিখুঁত নয়। দুজনে মিলে চর্চা করলেই সুখী দাম্পত্য পাওয়া সম্ভব।

Also Read: অনুপম বারবার বলছেন, ‘আমি সেই মানুষটা আর নেই’