Thank you for trying Sticky AMP!!

যে স্কুলে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়ও এসি লাগে না

গানদো প্রথমিক বিদ্যালয়

ভরদুপুরের কড়া রোদ। গ্রীষ্মের গরমে হাঁসফাঁস দশা। এসি ছাড়া টিকে থাকাই দায়। কিন্তু এমন এক স্কুল আছে, যেখানে বাইরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হোক কিংবা ৫ ডিগ্রি—ভেতরের তাপমাত্রা সব সময়ই এক। সেটাও কোনো প্রকার এয়ার কন্ডিশন (এসি) ছাড়া। বুরকিনা ফাসোর গানদো প্রাইমারি স্কুল এমনই এক স্কুল, যেখানে এসি ছাড়াই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

স্থপতিদের জন্য পশ্চিম আফ্রিকার বুরকিনা ফাসো দেশটা একটা চ্যালেঞ্জই বটে। সীমিত বাজেটে বৈরী আবহাওয়ায় পানি-বিদ্যুৎ-উপকরণের সংকট মাথায় নিয়ে কোনো কাজ হাতে নেওয়া চাট্টিখানি কথা না। শীতকালে যেখানে তাপমাত্রা নেমে যায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, গ্রীষ্মকালে সেখানের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি। এ আবহাওয়ার মাঝেও কোনো ধরনের এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই তৈরি হয়েছে এক স্কুল। আবহাওয়া যেমনই হোক, স্কুলের তাপমাত্রা সেখানে থাকে একই।  

স্থপতি দিবেদো ফ্রান্সিস কেরে

স্থপতি দিবেদো ফ্রান্সিস কেরের ওপর এমনই একটা স্কুল তৈরির দায়িত্ব পড়েছিল। গানদোর ছোট্ট গ্রামে কেরের বেরে ওঠা। যেখানে না আছে বিদ্যুৎ, না আছে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা। মাতৃভূমি বুরকিনা ফাসোর বৈরী আবহাওয়া আর সংগ্রাম নিজ চোখে দেখে বড় হয়েছেন তিনি। তাপমাত্রার হুটহাট পরিবর্তন তাঁর খুব ভালোভাবেই জানা আছে। গ্রামের প্রথম সন্তান হিসেবে কলেজে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। গ্রামের অনেকে মিলে টাকা তুলে কেরেকে কলেজে ভর্তি করেছিলেন। সেখান থেকে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে গেলেন জার্মানি।

Also Read: ধানমন্ডির এই বাড়িটি কি কেউ খেয়াল করেছেন

জার্মানির টেকনিক্যাল স্কুল অব বার্লিনে ভর্তি হন কেরে। সেখানে তাঁর শেষ বর্ষের প্রজেক্ট ছিল নিজের গ্রামের জন্য একটি স্কুল তৈরি করা। যে গ্রাম তাঁকে এত কিছু দিয়েছে, সেই গ্রামের শিশুদের জন্য স্কুল তৈরি করবেন, এর থেকে আনন্দের আর কীই–বা হতে পারে? কিন্তু স্কুল তৈরি করতে এসেই ধরতে পারলেন সমস্যাটি।
আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তনের কারণে স্কুলের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখা বেশ কঠিন। গ্রীষ্মকালে শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন প্রয়োজন পড়বে এয়ার কন্ডিশনারের, তেমনই শীতকালে দরকার হবে হিটার। বুরকিনা ফাসোর এক অজপাড়াগাঁ, যেখানে খাবারের পানির সুব্যবস্থাই ঠিকমতো গড়ে ওঠেনি, সেখানে এসি আর হিটারের ব্যবস্থা করবে কে?

লাল ইট দিয়ে ভবন তোলা হলেও টেকসই, মজবুত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিট

স্কুল তৈরির জন্য কেরে বেছে নিয়েছিলেন সবচেয়ে সহজলভ্য উপকরণ—মাটি। এক সাক্ষাৎকারে কেরে বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমাকে সবাই প্রশ্ন করছিল, জার্মানিতে কাচের বিল্ডিং নিয়ে পড়াশোনা করে কেন আমি মাটি দিয়ে স্কুল বানাচ্ছি? সবাইকে বোঝাতে হয়েছে, কেন মাটি দিয়ে তৈরি করা বিল্ডিং এই পরিবেশের জন্য মানানসই।’
স্কুলের মাঝে থেকে দেয়াল পুরোটাই বানানো হয়েছে মাটি দিয়ে। লাল ইট দিয়ে ভবন তোলা হলেও টেকসই, মজবুত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিট। ভবনটি মাটির হলেও স্কুলের ছাদের জন্য কেরের পছন্দ ছিল মেটাল। ২০০০ সালে যখন প্রথম স্কুলের কাজ শুরু হয়, গ্রামের অনেকেই এগিয়ে এসেছিল কাজ করতে। গ্রামের স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় এক বছরের মধ্যেই দাঁড়িয়ে যায় স্কুলটি।

মাটির তৈরি বিল্ডিং সহজে তাপমাত্রা ঢুকতে বা বের হতে দেয় না। যে কারণে রুমের তাপমাত্রা বছরের বেশির ভাগ সময় একই রকম থাকে। এ ছাড়া বিল্ডিংয়ের ছাদ এবং দেয়ালের মধ্যে সামান্য কিছু জায়গা ফাঁকা রেখেছেন তিনি। এতে গ্রীষ্মকালে গরম বাতাস সহজে বেরিয়ে যেতে পারে। ঠান্ডা বাতাস সে জায়গা দখল করে সহজেই রুমকে ঠান্ডা করে ফেলে। মেটালের তৈরি ছাদকে দুই পাশে বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে সূর্যের আলো সরাসরি বিল্ডিংয়ের গায়ে পড়ে না। ফলে বিল্ডিং সহজে গরমও হয় না। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে সাধারণ মানুষ বারান্দার ছায়ায় সময় কাটাতে পারে।

গানদো প্রথমিক বিদ্যালয়
কয়েক ধাপে তোলা হয়েছে ছাদ

মাটির তৈরি স্কুল নতুন বিপ্লব শুরু করেছে আফ্রিকাজুড়ে। একে একে বুরকিনা ফাসো থেকে মালি, টোগো, কেনিয়া, মোজাম্বিক থেকে সুদান; পুরো আফ্রিকায় ছড়িয়ে গেছে আর্কিটেক্ট ফ্রান্সিস কেরের কাজ। আবহাওয়া ও তাপমাত্রাকে মাথায় রেখে তৈরি হচ্ছে মাটির স্কুল। ফ্রান্সিস কেরে সরাসরি তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে কয়েকটি স্কুল। ২০২২ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে স্থপতিদের সবচেয়ে বড় পুরস্কার প্রিট্‌জকার-এ ভূষিত হন ফ্রান্সিস কেরে।


সূত্র: গার্ডিয়ান

Also Read: ‘আর্কিটেক্ট অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেল নারায়ণগঞ্জের এই বাড়ি