Thank you for trying Sticky AMP!!

সুখী হওয়ার জন্য নিজের অপূর্ণতাগুলোকেও ভালোবাসতে শিখতে হবে। মডেল: তন্বী

সুখী মানুষেরা যে কাজগুলো কখনো করেন না

সুখের কোনো আদর্শ সংজ্ঞা নেই। কারণ, সুখ একধরনের মানসিক অবস্থা। আজ আমরা যা যা পেয়ে নিজেকে সুখী মনে করছি, ভবিষ্যতে হয়তো সেসব পেয়েও নিজেকে অসুখী ভাবতে পারি। খুব অল্পতে সন্তুষ্ট থাকা মানুষের সংখ্যাও চারপাশে কম। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক মনোবিজ্ঞানী এরিন অলিভো মনে করেন, সুখী হওয়ার জন্য নিজের অপূর্ণতাগুলোকেও ভালোবাসতে শিখতে হবে।

এই মনোবিজ্ঞানীসহ আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে জেনে নিন কীভাবে নিজের অপ্রয়োজনীয় আবেগ আয়ত্ত করবেন।

ভালোবাসার চাপে থাকবেন না

অনেক সময় কারও কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাত পেয়ে আমরা নিজেকে গুটিয়ে নিই। নিজের চারপাশে অদৃশ্য একটি পর্দা টেনে দিই। এটি নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে ভালোবাসা না পাওয়ার ভয় থাকে, কিন্তু সুখী মানুষেরা সরাসরি ভালোবাসা চাইতে শেখেন। এমনকি সুখী মানুষেরা কারও কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেলেও নিজেকে আড়াল করেন না, গুটিয়ে রাখেন না। এতে করে ব্যক্তি মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

দরকার হলে বারবার একই ভুল করুন

বিষয়টি কিন্তু এমন নয় যে সুখী মানুষেরা কখনোই ভুল করেন না বা ব্যর্থ হন না। ভুল থেকে শিখে আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলেই জীবন সুন্দর হয়ে ওঠে। আমেরিকান সমাজকর্মী ও প্রশিক্ষক অ্যামি বেন্টন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জীবন দুর্বিষহ করে তোলার মতো খারাপ অভ্যাসগুলো আঁকড়ে ধরে থাকে। ভালো থাকতে চাইলে এই বাধা আপনাকে অতিক্রম করতেই হবে।’

Also Read: কিসে সুখ, হার্ভার্ডের ৮৫ বছরের গবেষণায় মিলেছে জবাব

ব্যর্থ হওয়ার ভয়কে জয় করতে শিখুন

আত্মবিশ্বাস হচ্ছে আমাদের জীবনের মূল চালিকা শক্তি। সুখী হতে চাইলে নতুন কিছু চেষ্টা করতে বা ঝুঁকি নিতে ভয় পাওয়া চলবে না। সফল হতে চাইলে তাদের ভয়কে অতিক্রম করতেই হবে। অন্যদিকে যাঁরা অসুখী, তাঁরা ব্যর্থতা ভয়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকে, এভাবে ব্যর্থতার ভয় তাঁদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে থাকে। আত্মবিশ্বাস আসলে একটি চলমান শক্তি, যা আপনাকে সব সময় চর্চার মধ্যে রাখতে হবে। সুখী মানুষেরা কখনো ব্যর্থতাকে মোকাবিলা করতে ভয় পান না।

আত্মবিশ্বাস ঠিক থাকলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়

শেষ মুহূর্তে হলেও শুরু করুন

দেরিতে শুরু করায় কঠিন হবে ভেবে বিশেষ কোনো কিছু করতে থেমে যাওয়া চলবে না। মনে রাখতে হবে, আমরা নিজেকে নিজেই সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারি। তাই জীবনে যেকোনো কিছু নতুন করে শুরু করার জন্য সময়সীমা নয়, শুধু দরকার আমাদের সৎ সাহস। শুধু শুরুটা যেন হয় আমাদের চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে। সুখী ও সফল মানুষেরা একবারে খাদের কিনারে থেকেও ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস রাখেন।

অন্যকে দোষারোপ নয়

কেউ কি আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে, আপনাকে খুব ঠকিয়েছে? সম্ভবত এই অভিজ্ঞতা আমাদের সবার জীবনেই দু-একবার ঘটে। তবে সুখী হতে গেলে অন্যকে দোষারোপ করা যাবে না। সুখী হওয়ার জন্য আপনাকে একজন ভুক্তভোগী মানসিকতার খোলস থেকে বের হয়ে এসে নিজের সৃজনশীল মানসিকতাকে আরও বেশি কাজে লাগাতে হবে। সৃজনশীলতা মানুষকে মানসিকভাবেও সমৃদ্ধ করে। অন্যের ওপর দোষ চাপালে শুধু কষ্টই বাড়বে।

অন্যের মতামত নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন

কেউ কিছু বললেই আপনাকে সেটা বিশ্বাস করে নিতে হবে—এই ভাবনা ছাড়ুন। সুখী মানুষেরা তাঁদের জন্য গঠনমূলক মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং ভালো উদ্দেশ্য হলেও অপ্রয়োজনীয় মতামত এড়িয়ে যান। দ্য জিনিয়াস গুরুর প্রতিষ্ঠাতা ও জীবনচর্চাবিষয়ক প্রশিক্ষক জিনা মারোটা বলেন, ‘আপনি যাঁদের প্রশংসা করেন আর যাঁদের মতো হতে চান, শুধু সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে জীবন সম্পর্কে পরামর্শ নিন।’

Also Read: ফিনল্যান্ড কেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ, এই ৪ প্রবাদ থেকেই বোঝা যায়

ঝড় মোকাবিলা করুন

যখন জীবনে কোনো ঝড় আসে, তখন কীভাবে সেটা মোকাবিলা করছেন ভেবে দেখুন। মনে রাখবেন, প্রথমে ভয়ানক ঝড়ে আমাদের টিকে থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর ঝড় থেমে গেলে প্রতিকার খুঁজুন। আসলে জীবন বা প্রকৃতি যেখানেই হোক না কেন, কোনো ঝড়ই স্থায়ী নয়। একদিন ঝড় থেমেই যায়। আর সুখী মানুষেরা সহজে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

নিজেকে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান ভাবুন

অন্যের জন্য কিছু করা সব সময়ই খুব আনন্দের ও গৌরবের কাজ। কিন্তু নিজের জন্য কিছু করেও একইভাবে গর্ববোধ করুন এবং আনন্দ খুঁজে নিন। বিয়ে ও পরিবারবিষয়ক থেরাপিস্ট মেগান বিয়ার্স বলেছেন, ‘প্রায়ই শুনি, অনেকে অন্যের ঠিক করে দেওয়া লক্ষ্য বা সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবনের একটি লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত হয়ে যান। জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পান না। এটি একেবারেই ঠিক নয়। নিজের জীবন–নৌকার মাঝি নিজেকেই হতে হবে। তাহলেই জীবন সুন্দর।’ আর সুখী মানুষেরা এই পদ্ধতি মেনেই জীবন যাপন করেন।

নিজের জীবন–নৌকার মাঝি নিজেকেই হতে হবে। মডেল: কল্প ও মিল্টন।

জীবন থেকে এই দুই শব্দ বাদ দিন

আপনার কী করণীয়, সেই তালিকায় ‘আমার উচিত’ কথাটি বাদ দিয়ে ‘আমি চাই’ বলুন। কথাটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলুন ও বাস্তবায়ন করুন। ‘কেন আমি এত বোকা?’ বা ‘এমন খারাপ জিনিস সব সময় আমার সঙ্গেই ঘটে!’—এসব বলা থেকে বিরত থাকুন। নিজেকে দোষারোপ করায় আপনার কোনো উপকার হবে না, বরং আপনাকে অসুখী করবে। বেদনাদায়ক অনুভূতি মনে পুষে রাখা এবং সারাক্ষণ বিচলিত হওয়া আপনার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। অসুখী মানুষ সবচেয়ে বড় যে মানসিক রোগে ভোগেন তা হলো, তাঁদের আবেগনির্ভর বিচার করার অভ্যাস।

সুস্থতা সবার আগে

সুখী হতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা দরকার। এর মানে এটা নয় যে সিক্স-প্যাক অ্যাবস আর বিলাসবহুল জীবনযাপন থাকতে হবে। বরং পুষ্টিকর খাবার খেয়ে, পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে, শারীরচর্চা ও মেডিটেশন করে নিজের যত্ন নিন। অবসরেও কর্মব্যস্ত সময় কাটান। আপনার শরীর আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই নিজের যত্ন নিন। আপনি যেখানে যেতে চান, আপনার সুস্থ শরীর আপনাকে সেখানেই নিয়ে যাবে। সুখী মানুষেরা শরীরের যত্ন নেন। তাঁরা নিজের ছোটখাটো সমস্যাকেও কখনো অবহেলা করেন না। তাই মনের যত্ন নিন আর শরীর রাখুন রোগমুক্ত।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Also Read: যে ৭ কায়দায় জীবন কাটান পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশের মানুষেরা