Thank you for trying Sticky AMP!!

তোমার মতো ডাক্তার আমি হয়তো কখনো হতে পারব না

আজ জুন মাসের তৃতীয় রোববার, বাবা দিবস। এ উপলক্ষে আমার পাঠকের কাছে আহ্বান করেছিলাম ‘বাবার কাছে খোলা চিঠি’। এই চিঠিটি লিখেছেন এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক আদিবা তাহরীন

বাবার পথ ধরে মেয়েও চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়েই পড়েছেন

আব্বা,

তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা যে খুব সহজ, তা নয়। আবার খুব কঠিনও নয়। আমার মেডিকেলে পড়তে আসাটা পুরোপুরি তোমার ইচ্ছায়। সঙ্গে আমার ইচ্ছাও এখন যোগ হয়েছে। কিন্তু আব্বা, এখন কেন যেন মনে হয় এই পেশা আসলে আমার জন্য নয়। এই যে এখন ইন্টার্ন করছি, ভর্তি হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত জীবনটাকে সহজভাবে চালাতে পারিনি। হয়তো এটা আমারই ব্যর্থতা। চারদিকে মানুষের স্বার্থপরতা, পেছনে লেগে থাকা, আড়ালে কথা বলা, এগুলো দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত। বিষণ্নতায় ডুবে থাকি সারাক্ষণ। আমি যদি অন্য কোনো বিষয়ে পড়তাম, কে জানে, হয়তো ভালো থাকতাম।

ছোটবেলা থেকে দেখেছি, তুমি খুব ব্যস্ত। আম্মাও ব্যস্ত ছিল। তার মধ্যেও আম্মা হয়তো আমাদের জন্য কিছু সময় বের করে নিত, কিন্তু তোমার এত ব্যস্ততা আমার ভালো লাগত না। এখনো লাগে না। কিন্তু এই কথা কখনো তোমাকে বলতে পারিনি আব্বা। আম্মা যখন ইওসি ট্রেনিংয়ে ইভিনিং আর নাইট ডিউটিতে থাকত, তখন নাকি তুমি আমাকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, গোসল করানো—সবই করতে। মাঝেমধ্যে আমাকে স্কুলে দিয়ে আসতে। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে আমাদের নিয়ে কুচকাওয়াজ দেখতে যেতে। ব্যাপারটা মাঝেমধ্যে বিশ্বাস হয় না। কারণ, তোমার এই অসম্ভব ব্যস্ততার সঙ্গে সেই দিনগুলো ঠিক মেলানো যায় না।

রোগী দেখতে গিয়ে তুমি কখনো বিরক্ত বা ক্লান্ত হয়েছ, দেখিনি। যদিও বেশির ভাগ রোগীই তুমি দেখ বিনা মূল্যে। আমার মনে আছে, আগে বর্ষার সময় ২-৩ নৌকা ভরে তোমার কাছে রোগী আসত। তাঁদের সময় দিতে গিয়ে কত দিন যে তুমি দুপুরের খাবার বিকেলে খেয়েছ। দাদাবাড়িতে রোগী দেখতে দেখতে তুমি খাওয়ার কথা ভুলে যেতে। দাদুর সঙ্গে বসে কথা বলার সময়ও পেতে না, কিন্তু তোমাকে বলার মতো কত কথা যে দাদুর ছিল। তোমার মতো রোগীবান্ধব ডাক্তার আমি হয়তো কখনো হতে পারব না।

এখন তুমি আরও অনেক ব্যস্ত। দুই-তিন সপ্তাহ চলে যায়, তোমার সঙ্গে দেখা হয় না। আমরা দুই ভাই–বোন ছাড়া তোমার মেডিকেল কলেজের পাঁচ-ছয় শ শিক্ষার্থীও এখন তোমার সন্তান। তোমার কি কখনো মনে হয়, আমাদের দুই ভাই–বোনেরও তোমাকে বলার মতো অনেক কথা জমে আছে? আমাদের আরও কিছু সময় তোমার দেওয়া দরকার?

মানুষের জীবনটা অনেক ছোট আব্বা। ব্যস্ততা তো থাকবেই। এর মধ্যেও পরিবার–পরিজনদের সময় দিতে হয়। আমরা তোমাকে অনেক মিস করি আব্বা। তুমি কখনো আমাদের সঙ্গে ধমকের স্বরে কথা বলোনি। আমি তোমার মতো এত সুন্দর করে কথা বলতে পারি না। তোমার মতো ধৈর্যও আমার নেই। আমরা সবাই মিলে যখন একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে যেতাম, সেই সময়গুলো এখন খুব মনে পড়ে। আর কি কখনো সেই দিন আসবে, আব্বা?

ব্যস্ততার জন্য এই চিঠি তোমার চোখে না-ও পড়তে পারে। শুধু জেনে রেখো, তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

Also Read: বাবা, আমার নামটাও তোমার জানা হলো না!

Also Read: আমরা যারা ঢাকায় এসে ঘাঁটি গাড়ি