Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘুরে আসুন আতিথেয়তায় ভরপুর সন্দ্বীপ

আপনি যদি রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তবে লেখাটি আপনার জন্যই। চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ হতে পারে আপনার জন্য রোমাঞ্চকর এক ভ্রমণ। সে জন্য আপনাকে জুন-জুলাইয়ে যেতে হবে সন্দ্বীপ। যাত্রাপথের শুরুতেই সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার মধ্যেই আপনার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার শুরু।

সন্দ্বীপের পশ্চিম সাগর পাড়

নদী পাড়ি দেওয়ার পর ভাগ্য ভালো থাকলে আপনি কাদা না মাড়িয়ে নামতে পারবেন সন্দ্বীপ ভূখণ্ডে। ভাগ্যদেবতা সহায় না হলে মাড়াতে হতে পারে কোমরসমান পানি আর কাদামাটির সৈকত। কূলে উঠে ছোট সেতু পার হতে হবে ভ্যান অথবা হেঁটে। সেতু পার হওয়ার পথে দুপাশে চোখে পড়বে বিশাল কেওড়াবাগান। যাতায়াতের জন্য আপনি পাবেন মোটরসাইকেল, অকটেনচালিত সিএনজি অথবা রিকশা। তবে সন্দ্বীপে যাতায়াতের খরচ আপনার কাছে বেশ খানিকটা বেশি মনে হতেই পারে!

সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা পেতে জুন-জুলাইয়ে যেতে হবে সন্দ্বীপ

যাওয়ার আগে আপনি যদি স্থানীয় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে যেতে পারেন, তবে আপনাকে থাকা বা খাওয়ার জন্য আলাদা কিছু চিন্তা করতে হবে না। সন্দ্বীপের মানুষ বেশ অতিথিপরায়ণ। আতিথ্যের আতিশয্যে আপনি বিরক্তও হতে পারেন। কথায় বলে, ‘অতিথি ভগবানতুল্য’। কথাটির বাস্তব প্রমাণ পাবেন এই এলাকার মানুষের মাঝে।

ফকিরিয়া শাহী জামে মসজিদ, সন্দ্বীপ

যেদিকেই যাবেন আপনার চোখে সর্বত্র গ্রাম-শহরের মিশ্রণ ধরা পড়বে। এসব দেখতে দেখতেই আপনার ভালো সময় কেটে যাবে। পরিচিত কেউ না থাকলেও সমস্যা নেই। ইদানীং বেশ কিছু আবাসিক হোটেল গড়ে উঠেছে পর্যটকদের জন্য। স্বল্প খরচে সেখানে আপনি থাকতেই পারেন। বেড়িবাঁধ ধরে আপনি পুরো সন্দ্বীপের চারপাশে একটা চক্কর দিতে পারেন। বর্ষাকালে অবশ্য এটি খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। কারণ, ভেতরের রাস্তাগুলো মোটামুটি পাকা হলেও শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ বা বেড়ির ওপর পাকা রাস্তা এখনো হয়ে ওঠেনি। কষ্ট করে একটা চক্কর দিলে পুরো সন্দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে যাবেন।

সন্দ্বীপে সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশ

যেতে পারেন সরাসরি পশ্চিম পাড়ের বিচে। সন্দ্বীপের লোকজনের কাছে যা নতুন চর হিসেবে পরিচিত। যেখানেই যান সন্দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী বিনয় শাহের রসগোল্লা খেতে ভুলবেন না। ‘ফকিরা মসজিদ’ (ফকিরিয়া শাহি জামে মসজিদ) দেখতেও ভুলবেন না। ভেজালমুক্ত ছানার তৈরি বিনয় শাহের রসগোল্লা পাবেন সন্দ্বীপের শিবের হাটে। আর ফকিরিয়া মসজিদের অবস্থান বক্তার হাটের উত্তর পাশে, হাট লাগোয়া। লোকমুখে শোনা যায়, ফকিরিয়া মসজিদে দান করে ইচ্ছা করলে মনোবাসনা পূরণ হয়। এই বিশ্বাসে সব ধর্মের লোকেরাই এই মসজিদে দান করেন।

শীতকালেও সন্দ্বীপে দিতে পারেন ঝটিকা সফর

খাবারদাবারের ক্ষেত্রে সন্দ্বীপের মানুষ বেশ শৌখিন। শহরের মানুষের মতো তারা বাজার করে ফ্রিজ ভর্তি করে রাখে না। প্রতিদিন নদী বা পুকুরের তাজা মাছই তাদের পাতে ওঠে। অতিথি হয়ে আপনিও পেতে পারেন সেই তাজা মাছের স্বাদ। লবণাক্ত সমুদ্রের মাঝখানে মিঠাপানির পুকুর কিংবা নলকূপ দেখে অবাক কিছু নেই। হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষ এসব মিঠাপানিই ব্যবহার করে আসছে।

নদীর পাড়ে খেলছে এক দল কিশোর

দুদিন অতিরিক্ত সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন উড়ির চর এলাকায়। মোটামুটি কম বসতিপূর্ণ এই এলাকায় চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ ধান অথবা ফসলের মাঠ। কোথাও মহিষের পাল, কিংবা ছাগলপাল। ভরদুপুরে কখনো কানে বাজতে পারে রাখালের বাঁশির করুণ সুর। সদ্য বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত (২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে) হওয়া সন্দ্বীপ আপনাকে আপন করে নেবে। অত্যন্ত সহজ–সরল এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ‘তাল মিলিয়ে’ চলতে পারলে তারা আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে।

মাঠের মাঝখানে এভাবে তাঁবু টানিয়েও থাকতে পারেন

বিশেষ করে খাবারদাবারের জন্য যেতে চাইলে আপনি শীতকালে সন্দ্বীপ বেড়াতে যান। সব ধরনের খাবার আপনি পেট আর মন ভরে খেতে পারবেন। শীতের কুয়াশা সকালে তাজা খেজুর রসের পায়েস কিংবা খেজুর গুড় দিয়ে ধোঁয়া ওঠা ভাপাপিঠা, পানখিলি পিঠা, জ্বালা পিঠা (নতুন ধানের বীজ পিষে এ পিঠা বানানো হয়), নকশি পিঠা, শিমফুল পিঠা, খেজুর পিঠা, চিতই পিঠাসহ হরেক রকমের খাবারের জন্য আপনি সন্দ্বীপ যেতেই পারেন।

সন্দ্বীপের মনোরম প্রকৃতি আপনাকে আকৃষ্ট করবে

কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের যেকোনো গাড়িতে চড়ে কুমিরা ঘাটের ব্রিজে নামবেন। হাইওয়ের নিচে নেমে অটোরিকশা দিয়ে চলে যাবেন ঘাটে। অটোরিকশাভাড়া ১০ টাকা করে নেবে। ঘাটে গেলে আপনি সার্ভিস বোট (মূলত ট্রলার) বা স্টিমার পেয়ে যাবেন। ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা। স্পিডবোট আপাতত বন্ধ রয়েছে।

সময় সুযোগ বুঝে ঘুরে আসুন সন্দ্বীপ থেকে

সন্দ্বীপ পৌঁছানোর পর যাতায়াতের ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ সাবধানতার সঙ্গে দর–কষাকষি করতে হবে। বাইরে থেকে ঘুরতে এসেছে বুঝে গেলেই বেশি ভাড়া চাইবে। আর আগেই বলা হয়েছে, এখানকার যাতায়াত খরচ বেশ বাড়তি। গুলিয়াখালী কিংবা বাঁশবাড়িয়া দিয়েও সন্দ্বীপ যাওয়া যায়। কিন্তু এই দুই দিকের যাতায়াতই তুলনামূলকভাবে বেশ কষ্টসাধ্য।

চলছে শুটকি বানানোর প্রক্রিয়া