Thank you for trying Sticky AMP!!

হাসান মাহমুদের কাছে আরও অস্ত্র আছে

প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে দেশের তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ‘ছুটির দিনে’। এবারও মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, ক্রীড়া, সংগীত, চলচ্চিত্র, ভ্রমণ, ব্যবসা ক্ষেত্রে উজ্জ্বল আট তরুণের গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে—গাই তারুণ্যের জয়গান। ক্রীড়া বিভাগে পড়ুন ক্রিকেটার হাসান মাহমুদের গল্প

কবে কোথায় হাসান মাহমুদকে প্রথম দেখেছি, স্পষ্ট মনে নেই। যত দূর মনে পড়ে, ২০১৬-১৭ সালের দিকে কোনো এক স্থানীয় টুর্নামেন্টে বল হাতে প্রথম হাসানকে দেখি। পেশাগত দায়িত্ব হিসেবেই অনেক ধরনের টুর্নামেন্টের দিকে নজর রাখতে হয়। এ ধরনের টুর্নামেন্ট দেখতে যাওয়ার আগে সব সময়ই আশায় বুক বাঁধি, মাঠে গিয়ে যেন প্রতিভাবান কোনো প্লেয়ারের খোঁজ পাই, যার খেলা দেখে আপনাআপনি মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে ‘ওয়াও’।

হাসান মাহমুদ

এ রকম এক টুর্নামেন্টেই হাসান মাহমুদের খোঁজ পেয়েছিলাম। ওর বলের গতি, বাউন্স আর শারীরিক গঠন—সব মিলিয়ে প্রথম দেখাতেই বলেছিলাম ‘ওয়াও! হি ইজ ডিফারেন্ট।’ মাশরাফিকে প্রথম দেখেও আমার একই অনুভূতি হয়েছিল। তখনই মনে হয়েছিল, হাসান অনেক দূর যাবে।

ওই দিনের পর থেকেই হাসানকে শুধু এগিয়ে যেতে দেখছি। লক্ষ্মীপুর থেকে উঠে এসে একে একে বয়সভিত্তিক দল, হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) কিংবা ইমার্জিং এশিয়া কাপ দলে বারবার নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে হাসান। আর এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।

এইচপি দলে হাসানকে আমি সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছি। হাসানের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো ‘গেম সেন্স’ অর্থাৎ হাসান খেলা বিশ্লেষণ করতে পারে, খেলার পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর বল হাতে গতির ঝড় তোলার প্রতিভা তো আছেই। প্রথম দিকে হাসান আরও জোরে বল করত। তবে এখন টেকনিক্যাল বিভিন্ন দিকে নজর দেওয়ার কারণে হয়তো গতি কিছুটা কমেছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, হাসানের আরও জোরে বল করার সামর্থ্য আছে। হয়তো তা করবেও।

হাসানের আরেকটা গুণ, মাঠের বাইরেও সে বেশ পরিণত। এই বয়সেই ওর কথাবার্তা, চলাফেরার মধ্যে ম্যাচিউরড একটা ব্যাপার আছে। ২৩ বছর বয়সে এমন পরিপক্বতা সবার মধ্যে থাকে না। হাসানের এই গুণই হয়তো তাকে বিশ্বমানের ক্রিকেটার করে তুলবে।

আমাদের দলের পেস আক্রমণ এখন বেশ ভালো। ভালো একটা পাইপলাইনও তৈরি হয়েছে। সেই পাইপলাইনের অন্যতম সদস্য হাসান। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে দলে সে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছে। সামনে হয়তো সাদা পোশাকের ক্রিকেটেও হাসানকে দেখতে পাব। পুরোনো বলে বেশ ভালো বল করে হাসান। একটানা অ্যাটাকিং বোলিং করতে পারে। টেস্ট ম্যাচে এ রকম বোলার খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাই আমি চাই, হাসান তাড়াতাড়িই টেস্ট খেলুক।

হাসান মাহমুদ

সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩২ রান খরচায় ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিল হাসান। এই ম্যাচের পর অনেকেই তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে কি, হাসানের পারফরম্যান্স দেখে আমি অবাক হইনি। কারণ, ওর কাছে আমি এ রকম বোলিংই প্রত্যাশা করি। মাঝেমধ্যে তো এর চেয়েও ভালো বোলিং দেখতে চাই। কারণ, আমি জানি হাসানের কাছে আরও অস্ত্র আছে। তবে ওই অস্ত্রগুলো দেখার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। হাসান যদি এভাবে খেলা চালিয়ে যায় এবং নিজের ফিটনেসের প্রতি যত্নবান হয়, তাহলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে তার সেরা রূপ দেখা যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

যেকোনো উইকেটেই ভালো করার সামর্থ্য রাখে হাসান। ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসের ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। অনেকটা ‘মরা’ উইকেটে খেলা হয়েছিল। এমন মরা উইকেটেও হাসানের বোলিংয়ে সেদিন যেই আগ্রাসন দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে, হাসান সত্যিকার একজন ফাস্ট বোলার।

সামনে হাসানকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এ জন্য কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আর পেস বোলারের বড় শত্রু ইনজুরি। সব সময় প্রত্যাশা করি, হাসান যেন ফিটনেস ও ইনজুরির ব্যাপারে সচেতন থাকে। তবে হাসানের কাছে আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া, গতির সঙ্গে সে যেন কখনো আপস না করে। আমি জানি, হাসান মোটরসাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করে। শুধু মোটরসাইকেল চালানোর সময়ই সে যেন গতির সঙ্গে আপস করে, আর মাঠে বল করার সময় যেন ‘আপস’ শব্দটাই ভুলে যায়।(অনুলিখন: জাওয়াদুল আলম)

লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক