কেউ কেউ শৈশবের দুঃখ–কষ্ট বড় হয়েও ভুলতে পারেন না
কেউ কেউ শৈশবের দুঃখ–কষ্ট বড় হয়েও ভুলতে পারেন না

আপনি ছোটবেলায় যেমন ছিলেন, তেমনই কি আছেন?

জনপ্রিয় মার্কিন ম্যাগাজিন ‘দ্য নিউইয়র্কার’–এ ‘বিয়িং ইউ’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ জশুয়া রথম্যান। তাঁর মতে, মানুষ দুই ধরনের হতে পারে—‘কন্টিনিউয়ার’ এবং ‘ডিভাইডার’। কন্টিনিউয়ার হচ্ছেন তাঁরা, যাঁরা ছোটবেলা থেকে একই রকম আছেন বলে মনে করেন। কন্টিনিউয়ার মানুষের উদাহরণ হিসেবে রথম্যান উল্লেখ করেছেন তাঁর নিজের শাশুড়ির কথা, যিনি নিজের ষষ্ঠ জন্মদিনে প্রতিশ্রুত একটি ঘোড়ার শাবক উপহার না পাওয়ার বেদনা বৃদ্ধ বয়সেও ভুলতে পারেননি। অন্যদিকে ডিভাইডার হচ্ছেন তাঁরা, যাঁরা অতীতের কথা মনে করলে নিজেকেই নিজে আর চিনতে পারেন না। আগের চিন্তাভাবনা, কাজকর্মের সঙ্গে বর্তমান চিন্তাভাবনা এবং কাজকর্মের এত বেশি অমিল তাঁরা খুঁজে পান যে অতীতের নিজেদেরকে তাঁদের মনে হয় গল্প-উপন্যাসের কোনো অচেনা চরিত্র। ছেলেবেলায় যেসব বিষয় নিয়ে তাঁরা সারা দিন ভাবতেন, ব্যস্ত থাকতেন, বড় হয়ে সেসবের কোনো কিছুই তাঁদের আর স্পর্শ করে না।

জশুয়া রথম্যানের লেখাটি পড়ার পর জন স্কারবোরো নামের এক মার্কিন জার্নাল লেখক তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। সেটি ছাপা হয়েছিল মিডিয়াম ডটকম নামের ওয়েবসাইটে। লেখাটি এখানে তুলে ধরা হলো:

আপনার শৈশবের স্মৃতিগুলো একটু মনে করার চেষ্টা করুন। কাজটা একটু কঠিন, তাই না? রথম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী, আমরা যদি আমাদের ভেতরের শিশুসত্তাকে আরও পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই, তাহলে আমাদের জীবনের পরিপূর্ণ রূপ এবং চরিত্র সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও পোক্ত হতে পারে।

হতে পারে আপনি একজন কন্টিনিউয়ার; অর্থাৎ আপনি আপনার শৈশবের সত্তাকেই সারা জীবন লালন করবেন সযত্নে। কিংবা আপনি একজন ডিভাইডার, অর্থাৎ আপনি আপনার আগের জীবনকে বর্তমান জীবন থেকে আলাদা করে রাখবেন; বহুমুখী জীবন পছন্দ করবেন। কোনোটিই একচেটিয়াভাবে সঠিক নয়। আবার আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা করা কঠিনও বটে। সত্তরের দশকে নিউজিল্যান্ডে ফিল সিলভা নামের এক মনোবিজ্ঞানী এ রকমই একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তিনি ১ হাজার শিশুকে ৪০ বছর ধরে অনুসরণ করেছিলেন।

২০২০ সালে ৪ জন গবেষক ‘দ্য অরিজিন অব ইউ: হাউ চাইল্ডহুড শেপস লেটার লাইফ’ নামের একটি বইটি লেখেন। এই গবেষকদের মতে, আমাদের জীবন একটি ঝড়ের মতো। আমরা নিজেদের বিবর্তনের যে গল্প বলি, হয়তো অতীতের সঙ্গে তার মিল থাকে সামান্যই।

নিজেকে আমি কন্টিনিউয়ার দলভুক্ত মনে করি। সারা জীবন শৈশবেই থাকতে চাওয়ার যে অবচেতন ইচ্ছা আমার আছে, সেসব কি নিজেকে পরিবর্তনের এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে বাধা দিচ্ছে? আমি বলব ‘না’। কারণ, সবাই বলে, মানুষ হিসেবে আমি প্রাণবন্ত।

যাহোক, বিষয়টা চিন্তার খোরাক জোগানোর মতো আকর্ষণীয়। আমার মনে হয়, কাজ থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকে নিজেকে আরও বেশি সময় দিতে পেরেছি, সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছি। ছোটবেলার আগ্রহের বিষয় আর স্মৃতিগুলোই আমাকে সান্ত্বনা দেয়। আমি সারা জীবন কন্টিনিউয়ার হয়েই থাকব। বিষয়টি আমি মেনে নিয়েছি।

ভাষান্তর: আলিয়া রিফাত