Thank you for trying Sticky AMP!!

‘ছেলেদের বাইক’ চালান সাদিয়া

কিছু খবর পরিচিতজনদের কাছে হাওয়ার বেগে পৌঁছায়। বহুল প্রচলিত কথাটা আগে অনেকবার শুনলেও সাদিয়া নিজের জীবনে টের পেলেন পুরোনো স্কুটি রেখে নতুন মোটরসাইকেল কেনার পর। কারণ, বাইক কেনার খবরটা নিকটজনদের কাছে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল মিনিট কয়েক। তারপরই কানাঘুষা, ‘সাদিয়া নাকি ছেলেদের বাইক কিনেছে!’

২০১৫ সাল থেকে স্কুটি চালান সাদিয়া ইয়াসমিন চৌধুরী। তখন তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (এআইইউবি) ছাত্রী। পড়েন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে। স্কুটি চালিয়ে বাসাবোর বাসা থেকে বনানীর ক্যাম্পাসে আসেন আবার বাসায় যান। চলাফেরা বলতে এটুকুই। বাসাবো-বনানীর পথটা যেদিন কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হলো, তখনই প্রয়োজন পড়ল মহাসড়কে চলার উপযোগী ভারী একটা মোটরসাইকেলের। সেই প্রয়োজনের তাগিদেই ২০২০ সালে ১৫০ সিসি ইঞ্জিনক্ষমতার ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের একটি মোটরসাইকেল কেনেন, পরিচিতদের কানাঘুষায় যা নাকি ‘ছেলেদের বাইক’।

পার্বত্য এলাকার দুর্গম পথেও মোটরসাইকেল চালান সাদিয়া

সাদিয়ার এখন দুটি মোটরসাইকেল। এই মোটরবাইকগুলো হাঁকিয়ে যানজটে নাকাল রাজধানীতে যেমন চলাচল করেন, তেমনি ছুটে যান পার্বত্য এলাকার দুর্গম পথেও। স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের বিপণন বিভাগের এই নির্বাহী বলছিলেন, ‘আমি ঘুরতে ভালোবাসি। সর্বশেষ বাইক চালিয়ে বান্দরবানের থানচি ঘুরে এসেছি। আমার মতো আরও কয়েকজন বাইকারের সঙ্গে এই যাত্রায় দারুণ সময় কাটিয়েছি।’

হাওরের রাস্তায় সাদিয়া ও তাঁর মোটরসাইকেল

সাদিয়া ক্রিয়েটিভ মাইন্ডেড বিডি নামে বাইকার নারীদের একটি ফেসবুকভিত্তিক দলের সদস্য। প্রায়ই তাঁরা এভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান।

সাদিয়ার সাইকেল

ঢাকাতেই সাদিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, মা গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছোট। সাদিয়া তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। খুব শখ হলো বাইসাইকেল চালাবেন। বাবাকে বললেনও শখের কথাটা। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সাইকেল হাতে পেলেন। কিন্তু সাইকেলটা চার চাকার, মানে সামনে পিছে দুই চাকাসহ প্যাডেলের কাছে ছোট ছোট আরও দুই চাকা। সাদিয়ার চাই সাইকেল। চার চাকার সাইকেলটা তাই কিছুতেই পছন্দ হলো না। বাবাকে বললেন, বাধ্য হয়ে তাঁর সাইকেলের ছোট চাকা দুটি খুলে দিলেন বাবা। সেই সাইকেলটা চালানো শিখতে সাদিয়ার বেশি দিন লাগল না।

তিনবারের চেষ্টায় মোটরসাইকেল চালানো শিখেছিলেন

সাইকেলের মতো মোটরবাইক চালানোও শিখেছেন হুট করে। কুষ্টিয়ায় মামা বাড়ি গিয়ে তাঁর মেজ মামার ৮০ সিসির বাইকটা নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন। দুবার উল্টে গেলেও তৃতীয়বার ঠিকই শক্ত হাতে বাইকের নিয়ন্ত্রণ নিলেন। তখন সবে সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন। তারপর বিভিন্ন সময় পরিচিত অনেকের মোটরসাইকেল চালিয়েছেন, তবে নিজে স্কুটি কিনলেন ২০১৫ সালে। সাদিয়া বলছিলেন, ‘গণপরিবহনে চলাফেরা করা ঢাকার প্রায় প্রত্যেক নারীর হয়রানির শিকার হওয়ার বাজে অভিজ্ঞতা আছে। স্কুটি বা বাইক চালাতে গিয়েও হয়তো কটু কথা শুনতে হয়। কিন্তু শারীরিক হয়রানির যে ভয়, সেটা মাথা থেকে দূরে রাখা যায়। আর মোটরসাইকেলে বসে যখন হাতল দুটি ধরি, নিজেকে মনে হয় ভীষণ স্বাধীন।’