Thank you for trying Sticky AMP!!

টেলিস্কোপ যখন ক্লাবের ‘নতুন সদস্য’

পদার্থ বিজ্ঞানপ্রেমী শিক্ষার্থীদের নিয়েই গড়া এই সংগঠন

‘প্রথমবার যখন টেলিস্কোপে চাঁদ দেখলাম, চোখ সরাতেই পারছিলাম না। চাঁদের গায়ের গর্তগুলোও যেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল!’ বলছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবু জাসেম। ক্যাম্পাসের পদার্থবিজ্ঞানভিত্তিক ক্লাব ফার্মিয়নের তিনি একজন সদস্য। কিছুদিন আগেই এই ক্লাবের সংগ্রহে যুক্ত হয়েছে একটি টেলিস্কোপ। ছোট্ট শিশুরা নতুন সাইকেল পেলে যেমন অদম্য কৌতূহল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ফার্মিয়ন ক্লাবের সদস্যদের এখন সেই দশা! ক্লাবের জ্যেষ্ঠরা ছোটদের উপহার দিয়েছেন এই টেলিস্কোপ।

আবু জাসেম বলেন, ‘যেহেতু আমরা এখনো আকাশ পর্যবেক্ষণে পারদর্শী না, তাই অন্য কোনো গ্রহ এখন পর্যন্ত দেখতে পারিনি। আশা করি, শিগগিরই শনির বলয়, বৃহস্পতি পর্যবেক্ষণ করতে পারব।’ সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন রিশাদ তাহজীব। ক্লাবের তিনি নবীন সদস্য। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের এই ছাত্র বলেন, ‘টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলে চট করে বোঝা যায় না, একটু সময় লাগে। শুরুতে মনে হয় চাঁদের ছবি দেখছি। কিন্তু যখন সেটাকে নড়াচড়া করতে দেখি; তখনই বুঝতে পারি, সেখানে একটা আলাদা জগৎ আছে। গ্যালিলিও, কেপলার বা নিউটনের মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথম চাঁদ দেখে কেমন অনুভব করেছিলেন, সেটা আমরা এখন কল্পনা করতে পারি।’

টেলিস্কোপ কেনা ছাড়াও সম্প্রতি আরও দুটি উদ্যোগ নিয়েছে ফার্মিয়ন। সিনিয়র ভাইয়া-আপু যারা এরই মধ্যে লেখাপড়ার পাট চুকিয়েছেন, তাঁদের সংগৃহীত বইগুলোর ডিজিটাল সংস্করণ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘লাইব্রেরি ওয়েবসাইট’। এর মাধ্যমে বিনা মূল্যে প্রায় ১৫০টি বই পড়তে পারছেন ক্লাবের সদস্যরা। আগামী মাসেই বের হবে ফার্মিয়ন ক্লাবের মাসিক ম্যাগাজিন ফার্মিয়ন ফিউশন মান্থলি। প্রতি মাসে একেকজন পদার্থবিদের গল্প, ঐতিহাসিক ঘটনা, পদার্থবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক খবর এবং পদার্থবিদ্যাসংক্রান্ত সমস্যা জায়গা পায় ১৬ পৃষ্ঠার এই সাময়িকীতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে একটু বিপাকেই পড়েছিলেন আব্দুস সামি আকন্দ। ঠিকঠাক পরামর্শ, একাডেমিক রিসোর্স পেতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। তখনই একটি পদার্থবিজ্ঞান ক্লাবের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সহপাঠী ও সিনিয়রদের নিয়ে চালু করে ফেলেন ফার্মিয়নের কার্যক্রম। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা-লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন আব্দুস সামি। সেখান থেকে মেসেঞ্জারে জানালেন, ‘২০১৯ সালের ১১ জুলাই আমাদের ক্লাবের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ শিক্ষার্থী পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি হওয়ার পর আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না, ক্যারিয়ারের পথ বদলে ফেলে। পদার্থবিজ্ঞানে যারাই আসবে, তারা যেন এতে মনোযোগী থাকতে পারে, সে জন্যই আমাদের এই কমিউনিটি।’

টেলিস্কোপে চাঁদ দেখছেন ফার্মিয়নের এক সদস্য

প্রতি শুক্র ও শনিবার চলে ক্লাবের পাঠ কার্যক্রম (স্টাডি সেশন)। ক্লাবের সদস্যরা এক হয়ে বসে ঠিক করেন, কোন বিষয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন। বিষয় নির্ধারণ হলে আগ্রহী কেউ পাঠ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেয়। এ ছাড়া পরীক্ষার আগে সিনিয়র-জুনিয়র একসঙ্গে বসে সমস্যা সমাধানের চর্চা; পেশাদার পদার্থবিদ হওয়ার জন্য কর্মশালা, অনলাইন সেমিনার, অনলাইন কোর্স আয়োজন; পদার্থবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য ও প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা ইত্যাদি কার্যক্রম ক্লাবের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দ্যুতি ছড়িয়েছে ছোট্ট এই ক্লাব। প্রতিবছরই তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা দ্য ইউনিভার্সিটি ফিজিকস কম্পিটিশনে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর ধারাবাহিকভাবে রৌপ্যপদক পায় ফার্মিয়ন। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ফার্মিয়ন থেকে অংশ নেয় তিনটি দল। ফার্মিনেফ, স্কার্মিয়ন ও ফিনিক্স। এর মধ্যে ফার্মিনেফ জাতীয় পর্যায়ে প্রথম ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১৫তম, স্কার্মিয়ন জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১৬তম এবং টিম ফিনিক্স ২৩তম স্থান অর্জন করে। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় বরাবরই ভালো করছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্লাব। ২০২০ ও ২০২১ সালে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জে সীমাবদ্ধ থাকলেও এ বছর একটি স্বর্ণ, একটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জ জিতেছে তারা।

চার বছর ধরে ফার্মিয়নে আছেন আসিফ ইকবাল। বর্তমানে তিনি ক্লাব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। তিনি বলছিলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ক্লাবের সদস্যরা যখন ভালো করে, অনেক গর্ব হয়। আমাদের দেশে সাধারণত কেউ গবেষক বা বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস করে না। এই স্বপ্ন দেখানোই আমাদের সার্থকতা।’

Also Read: এশিয়া কাপের আগে আরেক এশিয়া কাপ, চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

Also Read: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্যাফেটেরিয়া কেন অন্য রকম