Thank you for trying Sticky AMP!!

ছোট শামসুন্নাহারের বড় হয়ে ওঠা

ফুটবলার শামসুন্নাহার

মেয়েদের ফুটবলে দুই শামসুন্নাহার। জাতীয় দলের রক্ষণভাগে খেলেন সিনিয়র শামসুন্নাহার আর ফরোয়ার্ড লাইনে জুনিয়র শামসুন্নাহার। নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে একটু একটু করে ‘ছোট’ শামসুন্নাহার কবে যে ‘বড়’ হয়ে উঠেছেন, বুঝতেও পারেননি। অথচ বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে ২০১৪ সালে প্রথমবার যখন ঢাকায় এসেছিলেন, তখন গোল্ডেন বুট জেতার পর অনুভূতির কথাগুলোও ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে পারছিলেন না। তাঁর সঙ্গে বর্তমানের শামসুন্নাহারকে একটুও মেলানো যায় না! চটপটে, স্মার্ট বাচনভঙ্গি আর অসাধারণ নেতৃত্ব গুণের মিশেলে আজ তিনি জাতীয় বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল দলের সফল অধিনায়ক।

গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের কথাই ধরা যাক। অধিনায়ক হিসেবে সত্যিকার অর্থেই সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শামসুন্নাহার। টুর্নামেন্টে চার ম্যাচে এক হ্যাটট্রিকসহ দিয়েছেন সর্বোচ্চ পাঁচ গোল। সর্বোচ্চ গোলদাতার পাশাপাশি জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ম্যাচের পর শামসুন্নাহারের সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন ভুটানের ফুটবলাররা, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যে দৃশ্য বিরলই বলা যায়। এত সবকিছু ছাড়িয়ে শামসুন্নাহারের বড় অর্জন দলকে চ্যাম্পিয়ন করা এবং জাতীয় ও বয়সভিত্তিক মিলিয়ে সাফের সব চ্যাম্পিয়ন দলে খেলা একমাত্র বাংলাদেশি খেলোয়াড় হয়ে যাওয়া। শুধু তা–ই নয়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করায়ও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল।

বাধা পেলেও থেমে থাকেননি শামসুন্নাহার

অথচ এক সময় বাবা নেকবর আলী চাইতেন না, মেয়ে ফুটবল খেলুক। কিন্তু মেয়েকে সমর্থন জুগিয়ে যেতেন মা। ছোটবেলায় যখন অনুশীলন শেষে বাড়ি ফিরতে দেরি হতো, তখন রাস্তার পাশে কুপি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন মা। প্রথম বছর বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে গোল্ডেন বুট জিতে শামসুন্নাহার পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন পাঁচ হাজার টাকা। তখন শামসুন্নাহারের মা সবাইকে ডেকে ডেকে বলতেন, ‘আমার মেয়ে ফুটবল খেলে প্রথমবার টাকা পেয়েছে।’ অথচ ওই বছরই অর্থাভাবে মায়ের জ্বরের চিকিৎসা করাতে পারেননি। জ্বরে ভুগেই মারা যান তাঁর মা। ফুটবলে অনেক সাফল্যের মধ্যেও সেই দুঃখ এখনো তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

এখন ফুটবল খেলেই বাবার হাতে নিয়মিত টাকা তুলে দেন শামসুন্নাহার

পরিবার থেকে বাধা পেলেও থেমে থাকেননি শামসুন্নাহার। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার বলছিলেন, ‘যখন প্রথম খেলা শুরু করি, তখন পরিবার থেকে বাধা দিত আমাকে, সবাই না করত। সামাজিক বাধা তো ছিলই। সবাই বলত, খেলতে পারবা না। মেয়ে মানুষ কেন হাফপ্যান্ট পরে খেলবে? মেয়ে মানুষ কেন হাটেবাজারে যাবে?’ ফুটবল খেলতে গিয়ে কতটা লড়াই করতে হয়েছে, বলছিলেন শামসুন্নাহার, ‘বাড়ি থেকে লুকিয়ে স্কুলে খেলতে যেতাম। অনেক সময় স্কুলের পোশাক পরে বাড়ি থেকে বের হতাম। জার্সি আর বুটজোড়া ব্যাগে লুকিয়ে রাখতাম। এলাকার ছেলেরা বলত, ফুটবল খেলবে তোমার ভাই। তোমরা কেন এসেছ।’

শামসুন্নাহার এখন স্বপ্ন দেখছেন বিদেশের মাটিতে লিগ খেলার

কিন্তু দিন বদলে গেছে। এখন ফুটবল খেলেই বাবার হাতে নিয়মিত টাকা তুলে দেন শামসুন্নাহার। এখন শামসুন্নাহারকে দেখেই খেলতে আসতে চায় আরও অনেক মেয়ে, ‘আমার চার ভাই। বাবা প্রায়ই বলে ছেলেরা যেগুলো পারে না, তুমি মেয়ে হয়ে সেগুলো করে দেখিয়েছ। শুনতে ভালোই লাগে যে মেয়েরাও পারে। আমাদের দেখে এখন অনেক মেয়ে ফুটবলে আসছে। আসলে এই দেশে ছেলেদের যেভাবে সুযোগ দেওয়া হয়, সেভাবে মেয়েদেরও যেন সুযোগ দেওয়া হয়। মেয়েরা পারে না, এমন কিছু এখন নেই।’

বয়সভিত্তিক সাফে এর আগে দুবার অধিনায়ক হয়েও দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি। আগের দুবারের ব্যর্থতার সমালোচনাও তাঁকে সইতে হয়েছে। অনূর্ধ্ব-২০ সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তার জবাব দিতে পেরে শামসুন্নাহার খুশি, ‘সিনিয়র সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। মানুষ বোঝে না, কোনটা বয়সভিত্তিক আর কোনটা সিনিয়র দল। সবাই বাজে কথা বলে। নেতিবাচক কথা বলে। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে অনেকে বলত, তুমি কি এবার ট্রফিটা রাখতে পারবে? আমি পেরেছি। ওদের দেখিয়ে দিয়েছি।’

বাংলাদেশের নারী ফুটবলে সবার আগে বিদেশের মাটিতে লিগ খেলেছেন সাবিনা খাতুন। খেলেছেন কৃষ্ণা রানী সরকার। শামসুন্নাহারও এখন সেই স্বপ্ন দেখছেন, ‘বিদেশের মাটিতে লিগে খেলা সব ফুটবলারেরই স্বপ্ন। আমি ইউরোপের লিগে খেলার স্বপ্ন দেখি।’