Thank you for trying Sticky AMP!!

আমার হুলিয়া, আমার বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক জনাব আবদুল গাফ্​ফার চৌধুরী তাঁর জনপ্রিয় কলাম ‘তৃতীয় মত’-এ আমার ‘হুলিয়া’ কবিতাটি নিয়ে একটি দীর্ঘ লেখা লিখেছিলেন। ( দৈনিক পূর্বদেশ,  তৃতীয় মত, ২৪ জুলাই ১৯৭০)।

বঙ্গবন্ধু কবি হিসেবে আমাকে আগে থেকেই জানতেন। তাঁকে উৎসর্গ করে আমি একটি দীর্ঘ কবিতা লিখেছিলাম। কবিতাটি দৈনিক সংবাদ-এর সাহিত্য পাতায় ছাপা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ১২ নভেম্বর। 

সংবাদ–এর সাহিত্য সম্পাদক রণেশ দাশগুপ্ত তখন কারাগারে ছিলেন বলে ঔপন্যাসিক শহীদুল্লাহ কায়সার তখন ওই পাতা সম্পাদনা করতেন। 

তিনি পত্রিকা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই ওই কবিতা সংবাদে ছেপেছিলেন।

ওটাই ছিল পূর্ব বাংলার উদীয়মান সূর্যকে নিয়ে রচিত প্রথম কবিতা। 

কবিতাটির নাম—প্রচ্ছদের জন্য বা স্বদেশের মুখ শেফালি পাতায়। 

উৎসর্গ শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি তখনো বঙ্গবন্ধু হননি। ১৯৬৯ সালে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রেসকোর্স ময়দানের আয়োজিত ছাত্রজনসভা করে সদ্য কারামুক্ত শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করা হলে কবি জসীমউদ্​দীন তাঁর বিখ্যাত ‘বঙ্গবন্ধু’ কবিতাটি রচনা করেন। 

সম্ভবত সেটিই ছিল শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখা দ্বিতীয় কবিতা। 

দেশের গ্রামাঞ্চলের লোককবিদের মধ্যে তখন শেখ মুজিবকে নিয়ে কে কী লিখেছিলেন, তা আমার সঠিক জানা নেই। 

আমার কবিতাটি তাঁর কাছে পৌঁছেছিল এবং তিনি কারাগারে বসে ওই কবিতা পাঠ করে খুব খুশি হয়েছিলেন বলে তখনকার কারাবন্দী ছাত্রনেতা জনাব আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং মার্ক্সবাদী সাহিত্যিক শ্রীরণেশ দাশগুপ্তর কাছে শুনেছি। 

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন ও গোলটেবিলের চাপে হয়তো আমার কথা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। 

‘হুলিয়া’ নিয়ে লেখা জনাব আবদুল গাফ্​ফার চৌধুরীর কলামটি পড়ার পর আমার কথা তাঁর নতুন করে মনে পড়ে। তখন তিনি আমার সঙ্গে ‘হুলিয়া’ কবিতা নিয়ে আলাপ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।’

(তথ্য: আবিদুর রহমান, সম্পাদক,  দি পিপল পত্রিকা। 

এবং আমার কণ্ঠস্বর, পৃ ২২৮।) 

আমি তখন দি পিপল পত্রিকায় সাব–এডিটর পদে কর্মরত ছিলাম। 

আমার মনে হয়, গাফ্​ফার চৌধুরীর ‘তৃতীয় মত’ পড়ার পর বঙ্গবন্ধু আমার কবিতায় তাঁকে নিয়ে উচ্চারিত সংশয় সম্পর্কে আমার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলেন। স্মরণীয়, ওই দীর্ঘ কবিতার একটি চরণ ছিল—

 ‘শেখ মুজিব কি ভুল করছেন?’ 

এই সংশয়যুক্ত প্রশ্নের ওপরই জোর দিয়েছিলেন জনাব গাফ্​ফার চৌধুরী।

তিনি তাঁর লেখাটি শেষ করেছিলেন এভাবে—

‘এ যেন বাংলার ক্ষুব্ধ তারুণ্যের স্বগতোক্তি। এই জবাবের চাইতে বড় সত্য 

এই মুহূর্তে জনচেতনায় আর কিছু নেই।’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের সন্ধ্যায় আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বত্রিশ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে যাই। কিন্তু তখন বড় বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল। 

তিনি সেদিন কারও সঙ্গেই দেখা করেননি। প্রেসকেও মিট করেননি। আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। আসন্ন যুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে নেতাদের পালনীয় সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন। 

শেখ হাসিনা তখন চলমান জনস্রোতের দিকে তাকিয়ে ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ি। ভিড়ের মধ্যেও তিনি আমাকে চিনতে পারেন এবং আমাকে বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্য ডাকেন— কিন্তু আমন্ত্রণটিকে নিতান্ত সৌজন্যমূলক মনে করেই আমি আর বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করিনি। 

শেখ হাসিনাকে তখন আমি বঙ্গবন্ধুর আদুরে-কন্যা হিসেবেই জানতাম, 

রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়। 

বাকিটা ইতিহাস।

[শেখ হাসিনাকে নিবেদিত]

নয়াগাঁও

১৩ আগস্ট ২০১৯