Thank you for trying Sticky AMP!!

এখানে থেমো না

>বইমেলায় প্রথমা প্রকাশন বের করেছে আনিসুল হকের উপন্যাস এখানে থেমো না। সেই উপন্যাসের অংশবিশেষ

সকালবেলা নাশতার টেবিলে ইত্তেফাক নিয়ে টানাটানি। অগ্রহায়ণের শেষ, ডিসেম্বরের ৫, ১৯৬৯। আজ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুদিবস। এ উপলক্ষে ইত্তেফাক-এ শেখ মুজিবুর রহমানের বড় সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। স্মৃতির মিছিল: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

হাসিনা পত্রিকা পড়ছেন।
রেহানা বলল, ‘মা, সোহরাওয়ার্দী আঙ্কেল না তোমার ঘুঁটেকে শিক কাবাব মনে করেছিলেন?’

‘সেই কথা আর খাবার টেবিলে বলিস না?’ বলে রেনু হাসতে লাগলেন।
কামাল বললেন, ‘কী হয়েছিল যেন?’

জামাল বলল, ‘আমারও মনে নাই।’

রেহানা হাসতে হাসতে বলল, ‘মা পাটখড়িতে গোবরের ঘুঁটে বানায়ে শুকাতে দিয়েছেন, সেটা দেখে আব্বার বস বলেছিলেন, বউমা, এত কাবাব দিয়ে কী করবা?’

সবাই আবার হেসে উঠলেন।

মুজিবের চোখ ছলছল করে উঠল। সোহরাওয়ার্দীকে তিনি আসলে খুবই ভালোবাসেন। ইত্তেফাক-এ এর আগেও তিনি, চার বছর আগে, লিডারকে স্মরণ করে লেখা দিয়েছিলেন। আজও তাঁর সাক্ষাৎকারভিত্তিক লেখা বেরোল পত্রিকাটিতে।

হাসিনা পড়ে শোনালেন তাঁর আব্বার লেখা থেকে, ‘তিনি আমাকে নিজের হাতে গড়তে চেয়েছিলেন...শহীদ সাহেব আমাকে রাজনীতির পাঠ দিতেন সযত্নে। প্রথমবার যখন আমি পার্লামেন্টে ভাষণ দিই, তখন তাতে জনসভার সুর প্রাধান্য পেয়েছিল। অধিবেশন শেষে শহীদ সাহেব আমাকে ডেকে বললেন, “মুজিব, তোমার বক্তৃতায় এখনো পল্টনের ধ্বনি। এখানে কথা বলবে আস্তে, ধীরে, নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করে।”’

এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে মুজিব হেসে উঠলেন হাসিনার পাঠ শুনে।

রেহানা বলল, ‘আমি পড়ি দাও।’ আপার হাত থেকে পত্রিকাটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে রেহানা পড়তে লাগল:

‘সংগঠক সোহরাওয়ার্দী। কথায় কথায় শেখ মুজিব ফিরে গেলেন পুরোনো দিনগুলোতে। ডুব দিলেন স্মৃতির উজ্জ্বল সমুদ্রে। বললেন, তাঁর মতো সংগঠক আমি আর দেখিনি। বাংলাদেশে মুসলিম লীগকে গ্রাম-গ্রামান্তরে ব্যাপ্ত করে দিয়েছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।’

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

রেনু বললেন, ‘তোমার এই লেখায় আমার সবচেয়ে ভালো লাগছে বাংলাদেশ শব্দটা। হাসুর আব্বা, তুমি না পাকিস্তানে করাচিতে পার্লামেন্টে পূর্ব বাংলার নাম পূর্ব পাকিস্তান রাখার প্রতিবাদ করছিলা!’

মুজিব বললেন, ‘আজকে লিডারের স্মরণসভা হবে মাজার প্রাঙ্গণে। আজকেই আমি ঘোষণা করে দেব, আজ থেকে পূর্ব পাকিস্তান নয়, আজ থেকে এই প্রদেশের নাম বাংলাদেশ।’

রেনু বললেন, ‘খুব ভালো হবে।’

কামাল গুনগুন করে গান ধরলেন, ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি, তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী...’

ব্যাঙ্গমা বলে, তাই করলেন শেখ মুজিবুর।

তিনি সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় ঘোষণা করলেন, এরপর থেকে এই প্রদেশের নাম হবে বাংলাদেশ। ইত্তেফাক-এ খবর ছাপা হলো:

অতঃপর এ প্রদেশের নাম হইবে ‘বাংলাদেশ’: বঙ্গবন্ধু

সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলার মাজার প্রাঙ্গণ, ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯

‘আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫ ডিসেম্বর (’৬৯) ঢাকায় ঘোষণা করেন যে এখন হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম হইবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’।...

ব্যাঙ্গমী বলতে থাকে, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটগাছের ডালে ডালে পাখিরা কলকাকলি করে তোলে বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে।

ব্যাঙ্গমা বলে, ‘শেখ মুজিব সেই ১৯৪৮ সালের ২১ নভেম্বরে নারায়ণগঞ্জে বক্তৃতাকালে বাংলাদেশ কথাটা ব্যবহার করেন।’

ব্যাঙ্গমী বলে, ‘১৯৪৮ সালের নভেম্বরে নারায়ণগঞ্জের বায়তুল আমানে ছাত্রলীগের মহকুমা সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সেখানেই তিনি প্রথম উচ্চারণ করেন বাংলাদেশ কথাটা।’

ব্যাঙ্গমা বলে, ‘কাজী নজরুলের “নমঃ নমঃ নমো বাংলা দেশ মম/ চির-মনোরম চির-মধুর” কবিতাটাও শেখ মুজিবের খুব প্রিয় কবিতা ছিল।’

ব্যাঙ্গমী বলে, ‘আজ তিনি এই প্রদেশের নাম রাখলেন বাংলাদেশ। এটাই তাঁর চিরকালের স্বপ্ন। একটা দেশ হবে, বাংলাদেশ, বাংলা নামের দেশ।’

এখানে থেমো না উপন্যাসের ২৪ নম্বর অধ্যায়ের অংশবিশেষ