Thank you for trying Sticky AMP!!

কে এই মিসির আলি?

নিশীথিনীতে প্রথমবার মিসির আলির বয়স একচল্লিশ বলে উল্লেখ করেছেন হুমায়ূন। অলংকরণ: আরাফাত করিম

‘প্রকৃতি সব রহস্য মানুষকে জানাতে চায় না। কিছু নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে চায়।’ হুমায়ূন আহমেদের পাঠকনন্দিত চরিত্র মিসির আলি এভাবেই কথা বলেন, যুক্তি দেন। জনপ্রিয় এই ঔপন্যাসিকের বইপত্র ঘেঁটে মিসির আলি চরিত্রের তত্ত্ব–তালাশের চেষ্টা

যুগে যুগে অতি শক্তিধর অতি সাহসীরাই জনপ্রিয় হিরো বা নায়ক হয়। সুপারম্যান, ব্যাটম্যান, জেমস বন্ড কি আমাদের ফেলু মিত্তির বা ব্যোমকেশ—সবাই–ই নানা বিপদ–আপদ ঝড়ঝাপটার মধ্যে অবিচল ও শেষ পর্যন্ত জয়ী। কিন্তু ছাপোষা এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রোগা ও বেঁটে, ভগ্নস্বাস্থ্য, বারবার অসুস্থ হয়ে যে কিনা হাসপাতালে ভর্তি হয়, এমন চাকচিক্যহীন কোনো চরিত্রও যে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠতে পারে, নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলি তার উদাহরণ।

মিসির আলিরও বহু বছর আগে বহুল জনপ্রিয় ফিকশন চরিত্র ছিলেন শার্লক হোমস। প্রবল যুক্তিবাদী, প্রচণ্ড বুদ্ধিমান, তুখোড় পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও যুক্তির পর যুক্তি সাজিয়ে একটা উপসংহার বা শেষ সমাধানে পৌঁছার প্রবণতা—এসব চারিত্রিক গুণাবলির কারণে অতি দ্রুত শার্লক হোমস হয়ে উঠেছিল উনবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় ফিকশন চরিত্র। কী আছে শার্লক হোমস বা মিসির আলির চরিত্রে, যা আধুনিক মানুষকে এত টানে?

উত্তরটা হলো লজিক। যুক্তি। অ্যারিস্টটলের হাতে যে সিলোজিসমের জন্ম, যুক্তি আর তর্কের ওপর ভর করে সমাধানে পৌঁছার পদ্ধতি—উনবিংশ শতাব্দীতে এসে তা যেন পূর্ণতা পেল। এটা সেই সময় যখন আধুনিক মানুষ নিজে না দেখে বা না জেনেবুঝে কোনো কিছুই আর বিশ্বাস করতে চাইছে না, যে কোনো থিওরির পক্ষে চাইছে অকাট্য প্রমাণ বা যুক্তি। প্রচলিত বিশ্বাস বা পৌরাণিক কাহিনির ওপর আস্থা হারাচ্ছে তারা। আর এই শতাব্দীতে বিজ্ঞান প্রতিদিনই অজানা সব রহস্য আর প্রশ্নের সমাধান খুঁজে দিচ্ছে। মন, স্বপ্ন বা চিন্তার গতিধারা নিয়েও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন সিগমন্ড ফ্রয়েড। যৌক্তিক ধারণার বাইরে থাকছে না আর কিছুই। এই ধীমান চরিত্রগুলোর যুক্তি–পরম্পরাবোধ তথা ‘ডিডাকটিভ রিজনিং’–এ অসামান্য পারদর্শিতা আধুনিক মানুষকে দ্রুতই মুগ্ধ করে ফেলে। এভাবেই গ্ল্যামারহীন চরিত্রগুলোও মেধা আর বুদ্ধির জোরে হয়ে উঠতে থাকে ‘নায়ক’।

মিসির আলি অবশ্য গোয়েন্দা নন, পেশায় মনোবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কোনো রহস্যের কিনারা করতে অর্থের বিনিময়ে কাজ করেন না মধ্যবয়সী এই মানুষটি, তিনি কাজ করেন নিতান্তই শখের বশে। সব সময় যে রহস্যের মীমাংসা হয় তা–ও নয়। কখনো তাঁকে মনে হয় কট্টর যুক্তিবাদী, যিনি কিনা বিজ্ঞানের সত্যের বাইরে কিছুই বিশ্বাস করেন না। আবার কখনো এই লোকটিই প্রকৃতির বিপুল রহস্য বিষয়ে নিশ্চুপ। ‘প্রকৃতি সব রহস্য মানুষকে জানাতে চায় না। কিছু নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে চায়। থাকুক না সেই সব রহস্য লুকোনো। সব জানতেই হবে এমন কোনো কথা আছে?’ (মিসির আলির অমীমাংসিত রহস্য)। কখনো বা জীবনানন্দ দাশের মনে হয় একদিন পড়ে মনের অস্থিরতা কমাতে চান তিনি; কোথাও আবার বলেন, কবিতা বা ‘এই একটি বিষয়ে পড়াশোনা তার ভালো লাগে না। কবিতার বই কখনো সজ্ঞানে কেনেননি, এখানে যা আছে সবই নীলু নামের এক ছাত্রীর দেওয়া উপহার।’ (নিশীথিনী)

তবে মিসির আলি চরিত্রের কিছু দিক কমবেশি সবারই জানা। যেমন—এক. একবার কোনো কিছু নিয়ে উদ্দীপ্ত হলে শেষ না দেখা পর্যন্ত তিনি ছাড়বেন না; দুই. তাঁর নৈতিকতা জোরালো, মমত্ববোধও প্রবল; তিন. তিনি অসম্ভব বুদ্ধিমান এবং জানেন যে কোন বিষয়গুলো মনে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ; চার. তাঁর পর্যবেক্ষণক্ষমতা তুখোড়, খুঁটিনাটিও চোখ এড়ায় না; পাঁচ. ধূমপানের নেশা তাঁর প্রবল; ছয়. ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপারে শীতল ও দূরত্ব বজায় রাখতে ভালোবাসেন, প্রেমের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা প্রযোজ্য।

এই গুণগুলো সাহিত্যের অন্যান্য সত্যসন্ধানী চরিত্রগুলোর মধ্যেও কমবেশি আছে। কেবল তফাৎ হলো এই যে মিসির আলি অন্যদের মতো উদ্ধত ও দুর্বিনীত নয়, বরং বিনয়ী ও সদাচারী। ফকফকা জ্যোৎস্নারাত বা দুপুরের ঝুম বৃষ্টি তাঁকে আচ্ছন্ন করার ক্ষমতা রাখে। একটি হারিয়ে যাওয়া শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টার অন্ত থাকে না তাঁর। ‘ডিডাকটিভ রিজনিং’ এই চরিত্রের ভালোই আছে, কিন্তু তা বলে তিনি অতটা ‘ক্যালকুলেটিভ’ বা হিসাবি নন। অপ্রয়োজনীয় অনেক কাজই মিসির আলি করে থাকেন।

দ্বন্দময় এই মিসির আলি চরিত্রটকে হুমায়ূন আহমেদ কেন সৃষ্টি করলেন? মিসির আলির মধ্যে তাঁর নিজের ছায়াই বা কতটুকু আছে?

নিশীথিনী উপন্যাসে দেখতে পাচ্ছি, প্রথমবারের মতো মিসির আলির বয়স ও রোমান্টিকতা নিয়ে মুখ খুলছেন লেখক, ‘নীলু উঠে দাঁড়াল। এত সুন্দর মেয়েটি। চোখেমুখে তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই। কিন্তু তবু এমন মায়া জাগিয়ে তুলছে কেন? মিসির আলি লজ্জিত বোধ করলেন। তাঁর বয়স একচল্লিশ। এই বয়সের একজন মানুষের মনে এ–জাতীয় তরল ভাব থাকা উচিত নয়।’

একচল্লিশ! মিসির আলিকে অনেকেই বৃদ্ধ অধ্যাপক ভাবেন, আসলে তা নয়। আর তিনি একেবারে কাঠখোট্টা লোকও নন তাহলে! নীলুর প্রতি তাঁর ভালো লাগা ও আকর্ষণ অনেকবারই প্রকাশ পেয়েছে। নিষাদ উপন্যাসে নিজের সম্পর্কে মিসির আলির ভাবনা, ‘অদ্ভুত মানবজীবন। মানুষকে আমৃত্যু দ্বিধা এবং দ্বন্দ্বের মধ্যে বাস করতে হয়। তিনি নিজেও তাঁর জীবন দ্বিধার মধ্যে পার করে দিচ্ছেন। সমাজ সংসার থেকে আলাদা হয়ে বাস করতে তাঁর ভালো লাগে, আবার লাগে না। একজন মমতাময়ী স্ত্রী, কয়েকটি হাসিখুশি শিশুর মাঝখানে নিজেকে কল্পনা করতে ভালো লাগে। আবার পরমুহূর্তেই মনে হয়, এই তো বেশ আছি।’ এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব, এই অস্থিরতা, এই টানাপোড়েন কি কেবলই একজন প্যারাসাইকোলজির উৎসাহী গবেষকের, নাকি একজন লেখকেরও? মিসির আলির মধ্যে কি আসলে হুমায়ুন নিজেই নিজেকে খোঁজেন? মজার ব্যাপার, বৃহন্নলাউপন্যাসে লেখক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে একবার দেখা হয়ে যায় মিসির আলির। হুমায়ূন সম্পর্কে একটা খাতায় মিসির আলি আট পৃষ্ঠা লিখেনও সেখানে! ‘নাম: হুমায়ূন আহমেদ। বিবাহিত, তিন কন্যার জনক। পেশা অধ্যাপনা। বদমেজাজি। অহংকারী। অধ্যাপকদের যেটা বড় ত্রুটি, অন্যদের বুদ্ধিমত্তা খাটো করে দেখা, ভদ্রলোকের তা আছে।’

বর্ণনা শুনে মনে হয়, নিজের সৃষ্ট মিসির আলিই লেখক হুমায়ূন আহমেদের আয়না, সেই আয়নায় তিনি নিজেকে দেখতে চাইছেন। কেননা অনীশ–এ বুড়ি আবার মিসির আলি সম্পর্কে প্রায় একই ধরনের কথা লিখছে তার ডায়েরিতে, ‘গত পরশু মিসির আলি নামের একজনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। মানুষটি বুদ্ধিমান, নিশ্চয় এটা তাঁর চমৎকার গুণ। কিন্তু তাঁর দোষ হচ্ছে একই সঙ্গে তিনি অহংকারী। অহংকার বুদ্ধির কারণে, যেটা আমার ভালোলাগেনি। বুদ্ধির খেলা দেখিয়ে তিনি আমাকে অভিভূত করতে চেয়েছেন।’

শুনেছি হুমায়ূন আহমেদও ব্যক্তিগত জীবনে প্রায়ই অন্যকে ভড়কে দিতে, চমকে দিতে এবং অভিভূত করতে ভালোবাসতেন। এই লেখকের মতো তাঁর সাহিত্যের চরিত্ররাও পুরোপুরি যুক্তির অধীন নয়, খানিকটা আবেগের বশেই চলে। তারা যতটা না বাস্তববাদী, তার চেয়ে বেশি ‘ইমপালসিভ’। মানে হঠাৎ কোনো আশ্চর্য কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে ফেলাটা তাদের পক্ষে অসম্ভব নয়। হুমায়ূন নিজেও কি কিছুটা সে রকমই ছিলেন না? মিসির আলিকেও পুরোপুরি বোঝা কঠিন। কোথাও তিনি বলছেন, ‘রহস্যময় ব্যাপারগুলোর প্রতি আমার একটি আগ্রহ আছে। আমি ব্যাপারটা বুঝতে চাই।’ (বৃহন্নলা) কিংবা ‘বুড়ি বলল, আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন লজিকই হচ্ছে পৃথিবীর শেষ কথা! লজিকের বাইরে কিছু নেই? পৃথিবীর সমস্ত রহস্যের সমাধান আছে লজিকে, পারবেন বলতে? মিসির আলি বললেন, পারব’। (অনীশ)। অথচ এই মিসির আলিরই আরেক জায়গায় বয়ান করছেন, ‘তোমার জানা উচিত সমস্যা সমাধান আমার পেশা না। সমস্যার সমাধান আমি সেইভাবে করতেও পারি না। জগতের বড় বড় রহস্যের সমাধান বেশির ভাগ থাকে অমীমাংসিত। প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে। রহস্যের মীমাংসা তেমন পছন্দ করে না।’ (বাঘবন্দি মিসির আলি)।

এই আশ্চর্য দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর বৈপরীত্য নিয়েই মিসির আলি। এই অদ্ভুত চরিত্রকে নিয়ে পাঠকদের আগ্রহের অন্ত নেই। প্রথম যে উপন্যাসের মাধ্যমে হুমায়ূন পাঠকদের সামনে হাজির করেছিলেন মিসির আলিকে, তার নাম দেবী। সেই দেবী উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে সম্প্রতি। পাঠক যে মিসির আলিকে কল্পনা করেন, চলচ্চিত্রে চঞ্চল চৌধুরী কি সে রকম? এ প্রশ্নের উত্তর দর্শকেরাই ভালো দিতে পারবেন। কিন্তু রোগা–পটকা মধ্যবয়স্ক পাগলাটে এক শিক্ষককে আমরা চলচ্চিত্রেও দেখতে পেয়েছি। সমাজের আর দশটা মানুষের চেয়ে তিনি আলাদা। একাকী। বুদ্ধিমান, মেধাবী, যুক্তিবাদী কিন্তু সমাজবিচ্যুত। অন্যেরা তাঁকে দেখে অভিভূতই হয়, কিন্তু ভালোবেসে কাছে টানে না। যে ভালোবেসে কাছে টানতে চেয়েছিল (নীলু), মিসির আলি বরং তাঁর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ান। ‘আমার কেবলমাত্র আছে একাকিত্ব। এই একাকিত্ব আমাকে রক্ষা করে! (মনে করুন শালর্ক হোমসের সেই উক্তি: অ্যালোন ইজ হোয়াট আই হ্যাভ। অ্যালোন প্রটেক্টস মি!)। এই বিপুলা পৃথিবীতে, রহস্যঘেরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে একজন মিসির আলি কিংবা একজন হুমায়ূন আহমেদ এত জনপ্রিয়তার পরও হয়তো আসলে একা। আর এই একাকিত্বই তাঁদের হয়তো পূর্ণতা দেয়। 

মিসির আলি নিয়ে হুমায়ূন পরিবার

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা দেবী দেখার পর হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যরাও কথা বলেছেন মিসির আলি চরিত্র সম্পর্কে। কথায় কথায় প্রথম আলো অনলাইনকে তাঁরা জানিয়েছেন তাঁদের চোখে কে মিসির আলি?

নুহাশ


নুহাশের চোখে

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মিসির আলি প্রসঙ্গে প্রথম কথা বলেছেন হুমায়ূন-পুত্র নুহাশ। তিনি বলেন, ‘মিসির আলি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। কারণ, ছোটবেলা থেকে পড়েই মিসির আলি হিসেবে আমার বাবাকে দেখি।’ 

শাওন


শাওনের চোখে

হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী শাওনও মিসির আলি হিসেবে হুমায়ূন আহমেদকেই কল্পনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি বলা হয় মিসির আলি হিসেবে কাকে দেখতে চাই, তাহলে বলতাম হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে চাই। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না।’ 

হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূননামা

• হুমায়ূন আহমেদের বাবা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ প্রথমে তাঁর নাম রেখেছিলেন শামসুর রহমান। পরে তা পাল্টে হুমায়ূন আহমেদ করা হয়।

• ছোটবেলায় হুমায়ূন আহমেদের ডাকনাম ছিল দুটি—কাজল ও বাচ্চু। তবে ঘরের বাইরের মানুষ তাঁকে এই দুটি নামে বেশি ডাকত না।

• ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে কিছুকাল বন্দী ছিলেন। যদিও সেই অভিজ্ঞতার কথা প্রবল মানসিক চাপের কারণে কখনো সবিস্তারে লিখে যেতে পারেননি।

• নন্দিত নরকে তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস হলেও প্রথম লেখা উপন্যাস নয়। তাঁর প্রথম লেখা উপন্যাস শঙ্খনীল কারাগার। রচনা সমাপ্ত হয়েছিল ছাত্রজীবনেই। পাণ্ডুলিপি পড়ে এর শিরোনাম দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলবাসী সুহৃদ অধ্যাপক রফিক কায়সার। নামটি আসলে রফিক কায়সারের একটি কবিতার শিরোনাম থেকে নেওয়া, কোথাও কোথাও এমন কথা চালু থাকলেও তা সত্যি নয়।

• ১৯৭৪ সালেই নিজের নন্দিত নরকে উপন্যাসকে মঞ্চনাটকে রূপান্তরিত করেছিলেন। পরে বেতারের জন্য শঙ্খনীল কারাগার অবলম্বনে একটি নাটক লেখেন ১৯৭৫-এ। টিভির জন্য প্রথম নাটক লেখেন ১৯৮৩ সালে, নাটকটির নাম ছিল প্রথম প্রহর।

• বাংলা সাহিত্যে তাঁর প্রিয় কথাসাহিত্যিকেরা ছিলেন যথাক্রমে তিন বন্দ্যোপাধ্যায়—মানিক, বিভূতিভূষণ ও তারাশঙ্কর। সতীনাথ ভাদুড়ী, বিমল কর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও প্রিয়। ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের কবিতা পড়তে। তাঁদের একাধিক কবিতার লাইনও বসিয়ে দিয়েছিলেন নিজের বইয়ের শিরোনাম হিসেবে। এ ছাড়া বিদেশি কথাশিল্পীদের মধ্যে জন স্টেইনবেকের লেখা পছন্দ করতেন। মৃত্যুর কিছুকাল আগে বিপুল মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছেন হালের খ্যাতনামা জাপানি কথাকার হারুকি মুরাকামির বই।

• সাধারণত ‘ট্রেড সিক্রেটের’ কারণে বাংলাবাজারের প্রকাশকেরা হুমায়ূনের বই প্রতি সংস্করণে কত কপি ছাপা হতো, তা সরাসরি বলতে চান না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেউ কেউ এমন হিসাব জানান যে তাঁর উপন্যাসগুলো সাধারণত প্রথম দফায় ৫০ হাজার ছাপানো হতো। পরে পাঠকের সাড়া ও পরবর্তী চাহিদা বুঝে পরের সংস্করণগুলোতে পাঁচ থেকে কুড়ি হাজার কপি বই ছাপা হতো। 

সূত্র: শাকুর মজিদের হুমায়ূন আহমেদ: যে ছিল এক মুগ্ধকর; হুমায়ূন আহমেদের নিজের কয়েকটি লেখা ও প্রথম আলোর বিভিন্নসংখ্যা।