Thank you for trying Sticky AMP!!

গন্ডারের চামড়া রহস্য

অলংকরণ: তুলি

অনেক অনেক দিন আগের কথা। লোহিত সাগরের মাঝে ছিল এক দ্বীপ। সেখানে বাস করত পারস্যের এক লোক। তার ছিল একটা ঝলমলে টুপি, একটা ছুরি আর একটা চুলা। একদিন লোকটা পিঠা বানাবে বলে ঠিক করল। আটা, পানি, আলুবোখারা, কিশমিশ, চিনি আরও নানা জিনিসপত্র নিয়ে সে শুরু করল রান্না। পিঠাও কিন্তু যেনতেন পিঠা নয়, তিন ফুট পুরু আর দৈর্ঘ্যে প্রায় দুই ফুট! পিঠার উপাদান সব একসঙ্গে মিশিয়ে, মন্ত্র পড়ে সে বসিয়ে দিল চুলায়। তারপর চুলায় আঁচ দিতেই থাকল দিতেই থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না পিঠার রং বাদামি হয়ে আসে, আর পিঠাটা পাগল করা ঘ্রাণ ছড়ায়।
পিঠা বানানো তো হলো। কিন্তু যখনই সে খেতে গেল, তখন হলো মুশকিল। কোথা থেকে যেন সমুদ্রসৈকতে একটা গন্ডার এসে হাজির। গন্ডারটার চোখা শিং আর লোভাতুর চোখ। যে সময়ের কথা বলছি, তখন গন্ডারের চামড়া গায়ের সঙ্গে শক্ত হয়ে লেপ্টে থাকত। চামড়া ছিল মসৃণ, কোথাও কুঁচকানো ছিল না। গন্ডাররা তখন ভদ্রতা জানত না, এখনো জানে না, এমনকি কখনোই জানত না। তো গন্ডারটা করল কি, লোকটার সামনে এসে বলল, ‘হাউ!’ আর অমনি লোকটা পিঠা ফেলে একটা তালগাছ বেয়ে তরতর করে উঠে গেল। সঙ্গে নিল শুধু তার ঝলমলে টুপিটা।
এদিকে গন্ডার তার নাক দিয়ে চুলায় দিল এক গুঁতা। সঙ্গে সঙ্গে পিঠা ধুপ করে পড়ল সৈকতের বালুতে। গন্ডারটা আরাম করে সেই পিঠা খেল। তারপর লেজ নাড়তে নাড়তে বিদায় নিল।
তালগাছ থেকে নেমে এল পারস্যের লোকটা। চুলাটা আবার দাঁড় করাল। তারপর আবৃত্তি করল সেই শ্লোকটা। ও, তোমরা তো এই শ্লোক কখনো শোনোনি। তাহলে বলি—

পিঠা আমার খেয়ে ফেলে করল যে ভুল
দিতে হবে তাকে ঠিক কঠিন মাশুল

পাঁচ সপ্তাহ পর লোহিত সাগরে এমন তাপপ্রবাহ শুরু হলো যে সবাই গায়ের জামা খুলে রাখল। পারস্যের লোকটা তার টুপি খুলে ফেলল। আর গন্ডার তার চামড়ার জামাটা খুলে, কাঁধে ঝুলিয়ে, হেলেদুলে এগোল সমুদ্রের দিকে, গোসল করবে বলে। যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় গন্ডারের পেটের কাছে তিনটা বোতাম থাকত। তো গন্ডার করল কি, জামা খুলে সমুদ্রের পানিতে নেমে গেল। সাগরে ডুবে নাক দিয়ে বুদ্বুদ ওঠাতে লাগল।
ঠিক সেই সময়ে সমুদ্রের পাড়ে এল পারস্যের লোকটা। সৈকতে গন্ডারের জামাটা পড়ে থাকতে দেখে তার সে কী আনন্দ! মুখের হাসি একান-ওকান হয় গেল। খুশিতে দুই হাত কচলাতে কচলাতে সে গন্ডারের জামাটা ঘিরে তিন পাক নেচে নিল। এরপর সে ফিরে গেল তার ডেরায়। টুপির ভেতর ঠেসে ভরল পিঠা তৈরির উচ্ছিষ্টগুলো। ফিরে এল আবার সৈকতের কাছে। তারপর গন্ডারের চামড়াটা ইচ্ছেমতো ঝাঁকালো, বাঁকালো, মোচড়ালো। পুরোনো, শুকনো পিঠা তৈরির উপকরণগুলো ভালোমতো চামড়ার ওপর দলাইমলাই করল। পোড়া আলুবোখারাগুলো খুব করে ডলে দিল। তারপর একটা তালগাছের ওপর বসে গন্ডারটার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
একটু পর গন্ডার সাগর থেকে উঠে তার চামড়ার জামাটা গায়ে চড়াল। তিনটা বোতাম লাগাতেই পিঠার গুড়ো তার গায়ে চেপে বসল। বেচারা শরীর চুলকানোর চেষ্টা করল, তাতে ফল হলো আরও খারাপ। সে তখন মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি খেল। পিঠার উচ্ছিষ্ট তার গায়ে মেখে গেল। গড়াগড়ি করতে করতে তার সারা গা মাখামাখি, এমনকি বোতামগুলো কোন ফাঁকে ঢেকে গেল, সে টেরও পেল না। গন্ডারটা রেগে আগুন, কিন্তু তাতে তো আর কোনো লাভ নেই। রেগেমেগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে গন্ডারটা বাড়ি ফিরল। সেদিন থেকেই গন্ডার তার রাগী মেজাজ আর মোটা চামড়ার জন্য পরিচিতি পেল।
(সংক্ষেপিত)

রুডইয়ার্ড কিপলিং
মোগলিকে তোমরা যারা চেনো, রুডইয়ার্ড কিপলিং নামটাও তাদের কাছে পরিচিত হওয়ার কথা। দ্য জঙ্গল বুক লিখে তিনি দুনিয়াজোড়া পরিচিতি পেয়েছেন। একাধারে ছিলেন লেখক, সাংবাদিক, কবি ও ঔপন্যাসিক। ছোটদের জন্যও অনেক গল্প-কবিতা লিখেছেন যুক্তরাজ্যের এই লেখক। ১৯০৭ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।