Thank you for trying Sticky AMP!!

চর্যায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

চলচ্চিত্রচ র্যা

সাজেদুল আউয়াল

প্রচ্ছদ: আনোয়ার ফারুক, প্রকাশক: জার্নিম্যান বুকস, ঢাকা, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০৭ পৃষ্ঠা

দাম: ৬০০ টাকা।

সত্যজিৎ রায় নাকি পলিটিকাল সিনেমা বানাতে পারেন না। এ নিয়ে সমসাময়িক চলচ্চিত্রকার ও সমালোচকেরা তাঁকে কথা শোনাতে ছাড়েননি। অথচ বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ড তাঁর জনঅরণ্য ছবিটিকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল! সময়টা ১৯৭৭, সামরিক শাসনের কাল। অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক কিছু বক্তব্য থাকাতেই ছবিটি সেন্সরের সনদটি পায়নি।

একই ঘটনা ঘটেছিল ঋত্বিক ঘটকের যুক্তিতক্কোআরগপ্পো ছবির বেলায়ও। ফরাসি নির্মাতা জঁ লুক গদারের একটি ছবিও তখন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের এই অধ্যায়টি সম্পর্কে তথ্য মিলবে সাজেদুল আউয়ালের বই চলচ্চিত্রচর্যায়। লেখক একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে নিজের দেখা অভিজ্ঞতা এখানে লিখেছেন।

মাটির ময়না ছবির দৃশ্য

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প খুব একটা শক্ত ভিতের ওপর না দাঁড়ালেও এর অবকাঠামোগুলো তৈরি হয়েছিল অনেক আগেই। ঢাকায় এফডিসি যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান আমলেই, তেমনি চলচ্চিত্র সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের শুরুটাও হয়েছিল তখনই। ষাটের দশকের সংস্কৃতি আন্দোলনের সঙ্গে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের একটা সংযোগও পাওয়া যাবে সাজেদুল বর্ণিত ইতিহাসে। পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পর্বে এখন পর্যন্ত যে কাজগুলো এ আন্দোলন করতে পেরেছে ও পারেনি, তার সবই লেখক তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন।

আরেকটি নিবন্ধে সাজেদুল আলো ফেলতে চেয়েছেন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন দিয়ে বিদেশি সংস্কৃতি কীভাবে দেশীয় সংস্কৃতিতে প্রভাব রাখছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন বিদেশি চলচ্চিত্র আমদানি নিয়ে, টেলিভিশনে ভারতীয় আধেয় ও ডোরেমন কার্টুন বিতর্ক নিয়ে। একই সঙ্গে তাঁর কথা, দেশীয় চলচ্চিত্রকে দীর্ঘদিন সুরক্ষা দিলে আদতে ক্ষতিই হয়। সুরক্ষার কালেই ১২০০ প্রেক্ষাগৃহ ৩০০-তে এসে ঠেকেছে।

কেনই বা প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা এত কমে গেল, সে ব্যাপারেও সাজেদুল তাঁর অনুসন্ধান জারি রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে হল মালিকদের কথা তো একই, হলে দর্শক হয় না। কিন্তু কেন হয় না, বাংলাদেশি দর্শকেরা কেন হলবিমুখ, তার কারণগুলো খুঁজেছেন লেখক। একটা কারণ, দর্শক বারবার একই ছবি দেখে ক্লান্ত। আর স্টুডিওভিত্তিক বাণিজ্যিক সিনেমার বাইরে ভিন্ন ধারার কোনো ছবিকে হলগুলো নেয় না। ফলে দর্শকের রুচিও পরিবর্তন বা উন্নত করার তেমন সুযোগ সে অর্থে নেই। প্রয়াত তারেক মাসুদের রানওয়ের মতো ছবি কোনো হল পায়নি। এ ক্ষেত্রে লেখক এই হল বরাদ্দের রাজনীতি নিয়ে আরেকটু আলোকপাত করতে পারতেন।

মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি বহুদিন কেবল কিছু ফর্মুলা মেনে বানানো হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, কেবল বাণিজ্যিক কারণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিতেও অপ্রয়োজনীয় রগরগে ধর্ষণদৃশ্য ব্যবহৃত হয়েছে। সাজেদুলের একটি নিবন্ধে এ ব্যাপারে আছে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।

এ ছাড়া বেশ কিছু চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রকার নিয়ে সাজেদুল নিবন্ধ লিখেছেন। তারেক মাসুদের কয়েকটি ছবিকে তিনি দিয়েছেন লোকচলচ্চিত্রের অভিধা। কীভাবে লোকজ সংস্কৃতি তারেককে উদ্বুদ্ধ করেছিল চলচ্চিত্র নির্মাণে, তার কালানুক্রমিক বিশ্লেষণও মিলবে এখানে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত চলচ্চিত্রের ভাষা ও নান্দনিকতা নিয়ে যে নিরীক্ষা করেছেন, সেটাও আছে। তাঁর উত্তরা, লালদরজা, নিমঅন্নপূর্ণা, তাহাদেরকথা, ফেরা, চরাচর চলচ্চিত্রগুলোর বিশ্লেষণ করেছেন সাজেদুল।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সংখ্যালঘু থিম কীভাবে এসেছে, সেটাও দেখতে চেয়েছেন লেখক। এ নিবন্ধে আমারদেশেরমাটি, পিতা, কারিগরজীবনঢুলী চলচ্চিত্রগুলো তাঁর পর্যবেক্ষণের আওতায় এসেছে। কিন্তু আরও বৃহৎ পরিসরে এ নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

সব মিলিয়ে এ কথা বলা যায়, সাজেদুল আউয়ালের দীর্ঘদিনের চলচ্চিত্রবিষয়ক লেখালেখিতে চলচ্চিত্রচর্যা একটি ভালো সংযোজন। সারা জীবন চলচ্চিত্রের গান গেয়েছেন তিনি, তার একটা সংক্ষিপ্ত প্রকাশ ঘটেছে এ বইতে, তাই বুঝি এমন নাম। বিভিন্ন বিষয়ে লেখকের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গন নিয়ে জানা-বোঝার ক্ষেত্রে এটি পাঠকদের সাহায্য করবে।