Thank you for trying Sticky AMP!!

চারপাশের ফাঁদ আর সময়চিহ্ন

.

ঔপন্যাসিক মোহিত কামালের চোরাগলি উপন্যাসটি খুবই সমসাময়িক বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত। মাদকদ্রব্যের ছোবলে যে নীল হয়ে যাচ্ছে তরুণ সমাজ, তার খণ্ডচিত্র যেন এই উপন্যাস।

বিশ্লেষণের আগে চলুন প্রথমে এই আখ্যানের কাহিনি সম্পর্কে কিছুটা আঁচ নেওয়া যাক।

অসম্ভব আদরে বড় হওয়া জেদি মেয়ে ইথা। পিতৃমাতৃহীন। বড় হয়েছে চাচা হাসমত উল্লাহ আর ফুফু জিনাত আরার কাছে। ছোটবেলায় এক দুর্ঘটনায় মারা যায় তার বাবা। বেঁচে যাওয়া অল্পবয়সী ইথার মা তার তিন বছর বয়সে অন্যত্র বিয়ে করে সংসারী হয়। তারপর থেকে ফুফু জিনাত আরাই ওর লালনপালন করেছে। ফুফুর বিয়ের পরে ইথার দেখভালের দায়িত্ব এসে বর্তায় চাচার কাঁধে।

গল্পের এই প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জেনে আমরা যদি এবার উপন্যাসের মূল ঘটনাপ্রবাহের দিকে চোখ রাখি, দেখতে পাব যে ইথা বেরিয়েছে তার প্রেমিক তন্ময়ের খোঁজে। তন্ময় সম্পর্কে লোকজনের কাছে যা শুনেছে, এখন এর সত্যতা মিলিয়ে দেখতে চায় সে। অন্ধকার এক জগতের দ্বারপ্রান্তে ইথার গাড়ি পৌঁছাতেই গার্ড তাকে প্রশ্ন করে, ‘আপনি কি নতুন?’

ইথা মিথ্যা বলে, ‘না পুরাতন। কিন্তু অনেক দিন পরে আসা।’

আবার প্রশ্ন আসে, ‘ডাল না বাবা?’

ইথা জবাব দেয়, ‘বাবা!’

‘তাহলে সিঁড়ি বেয়ে সোজা দোতলায় উঠে যান।’

খোলা দরজা দিয়ে ভেতরটা দেখেই গা গুলিয়ে ওঠে ইথার। সে দেখতে পায় তার সমবয়সী বা দু-চার বছর এদিক-ওদিক হবে, এমন বয়সী সব তরুণ-তরুণী একে অপরের গায়ে গা ঘেঁষে দলা পাকিয়ে বসে মাদক সেবন করছে। ঘটনার এ পর্যায়ে এই স্থানে ইথাকে দেখে অবাক হলো তার প্রেমিক তন্ময়। চলল দুজনের বাগ্​বিতণ্ডা। ঠিক তখনই ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত পুলিশ। আর ক্রোধে গর্জে ওঠে প্রশ্ন করে তন্ময়, ‘তুমি কি টিকটিকি? র্যাবের এজেন্ট? তুমি পুলিশ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছো?’ ইথার চোখে বিস্ময়ের শেষ নেই, এই ছেলেকেই আঁকড়ে ধরে জীবন সাজাতে চেয়েছিল সে! আবার রাগে ফুঁসে ওঠে তন্ময়। ইথাকে গালাগাল করতে করতে গোপন পথ দিয়ে পালিয়ে যায়। পলিয়ে যায় অন্যরাও।

অতঃপর পুলিশ এসে পায় ইথাকে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। ইথাকে দেখে নেশাগ্রস্ত মনে হয়নি। তাই পুলিশ কিছুটা ভদ্র ব্যবহার করে তার সঙ্গে। তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে।

কিন্তু তন্ময়ের চোখে বিষ হয়ে গেছে ইথা! ওর ফোনে আসতে থাকে একের পর এক হুমকি! সব মিলিয়ে যেন অদৃশ্য এক চোরাগলিতে আটকে যায় ইথা। সে কি পারবে এখান থেকে বেরোতে? পারবে কি নিজের মর্যাদার গৌরব সমুন্নত রাখতে? পারবে মাতৃস্নেহে আগলে রাখা ফুফুর সংসার ভেঙে যাওয়া রোধ করতে?

অনেক প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তরই রয়েছে আলোচ্য এই উপন্যাসের পরতে পরতে। আদতে এর প্রেক্ষাপটই এমন যে টান টান ঘটনার ঘনঘটার মধ্য দিয়ে শেষ হয় উপন্যাসটি। তবে শেষ হওয়ার পরও থেকে যায় আরও কিছু প্রশ্ন, হামেশাই যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হই আমরা।

চোরাগলি মূলত এক ইথার গল্প হলেও এখানে অন্য চরিত্রদের বৈচিত্র্যও কম নয়। জিনাত আরা বা ইথার চাচা হাসমত উল্লাহর স্ত্রী উপন্যাসে এদের দারুণভাবে এঁকেছেন লেখক। ফলে এই আখ্যানে রয়েছে আরও অনেক জীবনের গল্প। যেমন, ইথার ফুফু জিনাত আরা ফুফু হয়ে মায়ের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের সংসার বিসর্জন দেওয়া এক মা-রূপী ফুফুর গল্প পল্লব মেলেছে এখানে। একইভাবে আছে মায়ের জন্য মেয়ের উদ্বিগ্ন হওয়ার গল্প, বোনের প্রতি বোনের গভীর আবেগময় ভালোবাসার গল্প এবং বন্ধুর জন্য এক বন্ধুর জীবন বাজি রাখার গল্প।

তরুণ প্রজন্মের মাদকে ডুবে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে সমাজসচেতন কথাশিল্পী মোহিত কামাল খুব সাবলীলভাবেই লিখেছেন চোরাগলি। সমাজকে সচেতন করতে এবং নিজেকে সচেতন করতে সবাই-ই পড়তে পারেন এই বই। কারণ চোরাগলি নামের উপন্যাসটি বহন করছে সমাজজীবনের অবিশ্বাস্য এক ক্ষত, চারপাশের ফাঁদ আর         সময়চিহ্ন।

চোরাগলি

মোহিত কামাল

প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল, প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা

প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২৭ পৃষ্ঠা, দাম: ২৫০ টাকা।