Thank you for trying Sticky AMP!!

টান পড়ে ভান করে

কবিতা উৎসবে কথা বলছেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টি নিয়ে কোনো ‘কল্পনা’ ছিল না। আর কল্পনা থাকলেই ‘পরি’ এসে ভর করে—পরিকল্পনায় নড়চড় হয় রাতের ঘুম, দিনের ধুম! তাই দিন-তারিখ তুলে রেখে চলতে চলতে হঠাৎ-ই ঘটে যাওয়া ভালো। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি যখন বনিবনায় এল, তখন অবাক মানলাম আয়োজনের তড়িঘড়ি দেখে। ঘড়ি একটা চলছিল সেই আগস্ট থেকে আর তারপর সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে এসে তাড়া দেওয়া হলো, অক্টোবরের ২ তারিখেই যাত্রা। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে শ্রীমতী অজিত কৌর আয়োজিত দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য উৎসব। অক্টোবর ২০১৮ সালের ৪ তারিখ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় এ আয়োজনে ছুট দিলাম। পথসঙ্গী আছেন অনেকেই—নানান সময়ে, নানান পথে বাংলাদেশের চল্লিশের অধিক কবি-সাহিত্যিক এ উৎসবে যোগ দেবেন। পেল্লায় কাণ্ড!

উৎসব বলে কথা। বিস্তর উপকরণ, বিবিধ আয়োজন, একের ভেতর অধিক ব্যঞ্জন। ‘স্পাইস জেটে’ ঢাকা-কলকাতা-দিল্লি ভ্রমণে যে খাদ্যসংকট ঘটেছিল, তা দিল্লি পৌঁছে মসলা-সবজি মিলে পুষিয়ে গেল। বাড়তি ডাল-ভাত-সবজি-মাছভাজা মিলল বাংলাদেশ মিশনে। বিশাল বহরের আমরা মাননীয় হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এবং তদীয় পত্নীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলাম। আর মিশনের কর্তাব্যক্তিরা ছিলেন একান্তই সজ্জন। সঙ্গ ও খাদ্যের তারিফ করতেই হয়। এটা ছিল ৫ অক্টোবর ২০১৮-এর নৈশভোজ।

চার দিনের উৎসব আমাদের কী দিল? প্রচুর প্রচুর হইচই, আলোকচিত্র। নানান পদের খাবার। আর অন্য ভাষায় (মূলত ইংরেজি) নিজের রচনার অতি দুর্বল একটি উপস্থাপনা। অনুবাদ সেখানে ফুফু তো পাঠ সেখানে খালা। মামা-চাচা কেবল চারপাশে ঘুরে বেড়ায়, বাবা-মায়ের খোঁজ তো বাংলাদেশে রয়ে গেছে। হ্যাঁ, ভারতের বিভিন্ন ভাষার প্রতিনিধি ছিলেন; ছিলেন শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তানের লেখকেরা। কবিতা হয়েছে, গল্প হয়েছে, আলোচনা হয়েছে, হয়েছে নাচ ও গান। ছিল চিত্র প্রদর্শনীর প্রচ্ছন্ন হাতছানি। যার যেমন মর্জি—আহারে, দর্শনে, পঠনে, বিহারে কেটে গেল দিনগুলো। কথা কিন্তু অন্যখানে। যা হলো তাতে কী পাওয়া গেল? হওয়াটা সংক্ষেপে বললাম, কিন্তু পাওয়াটা সুদূরপ্রসারী!

‘কোকিল ডাকিতেছে, সবুজ পাইলে বসিবে!’

এক্ষণে অনুবাদ নিয়ে কথা। আমাদের লেখালেখি পৃথিবীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাষায় কেমন অনুবাদ হয়? প্রশ্নটা এখন এমন মারাত্মক যে যোগাযোগের এই মোহনমুহূর্তে পৃথিবী যেখানে প্রতিক্ষণে নবায়িত হচ্ছে, তখন আমরা কিন্তু তার ধুলোকণাও স্পর্শ করতে পারছি না। যেমন দুর্বল আমরা মাতৃভাষা শিক্ষায়, তেমনি অক্ষম আমরা বিদেশি ভাষা চর্চায়। ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। তবে তা দিয়ে তো আর ভাতের হাঁড়ির সব ভাত চলে—এ কথা বলা যায় না। একটি ভালো কবিতা, একটি উৎকৃষ্ট গল্প কিংবা মৌলিক কোনো ভাবনার চিত্র যদি কোটি কোটি মানুষের পৃথিবীতে না পৌঁছায়, তবে আমাদের অনাস্থার স্থান আরও দীর্ঘায়িত হবে। তাই উৎসবে গেলে বিদেশভ্রমণ হয়; সাহিত্যভ্রমণ হয় না। আমাদের কল আমাদের সঙ্গেই থাকে, নল বিনা তা জল দিতে অপারগ। একই অবস্থা দেশের ভেতর যখন কোনো আন্তর্জাতিক (!) সাহিত্য উৎসব হয়। আমরা আড্ডা দিই, ছবি তুলি, এমনকি নিজের রচনাটিও ক্ষীণকণ্ঠে পাঠ করি; কিন্তু কথা সেখানেই—

‘হরিণ ছুটিতেছে, জল পাইলে পিপাসা মিটাইবে!’

দুই.

ডিসেম্বর মাসের ৭ ও ৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হলো বগুড়া লেখক চক্রের কবিতা উৎসব। একটি জেলা শহরের আয়োজন রীতিমতো মুগ্ধ হওয়ার মতো। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল কবিতাপাঠ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর সঙ্গে চারজন সাহিত্যসেবী ও সাংবাদিককে সম্মান জানানো হলো। নিঃসন্দেহে উদ্যোগের এ পর্বটি ছিল অধিক মনোগ্রাহী। তরুণেরা ‘ণ’ হারিয়ে ফেললে জগৎ-সংসারে আগুন লাগে না, তবে বুক পোড়ে। আবার বয়সীরা ‘বৈষম্য’ মেনে নানা হুজ্জতে লিপ্ত হতে পছন্দ করলে পায়ের গিঁটে ব্যথা ধরে। এ অবস্থার মধ্যে তরুণ ও বয়সীরা একত্র হয়ে যখন দিনমান সাহিত্যেই খোঁজেন ভোরের শিশির এবং সন্ধ্যার জোনাকি, তখন আনন্দ লাগাই স্বাভাবিক। আর এ আনন্দের সঙ্গে অনায়াসেই তো যুক্ত হতে পারে গোকুলমেধ কিংবা করতোয়া।

‘ভালবাসা মজিলে নিরামিষ-আমিষ লইয়া কলহ করা বৃথা’।