Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রধান শিল্পীদের ছবি

জয়নুল আবেদিনের দুর্লভ উডকাট ছাপচিত্র ‘জলকে চলা মায়ের সঙ্গে বড়শি কাঁধে আদুল গায়ের শিশু’

যাঁদের কেন্দ্র করে আধুনিকতার পথে আমাদের চারুশিল্পের পথচলা, সেই গুরুশিল্পী ও তাঁদের হাতে শিক্ষাপ্রাপ্ত গুণী কয়েকজনের ছবি নিয়ে হয়ে গেল প্রদর্শনীটি। শিল্পী মোট ১১ জন। এই শিল্পীদের আঁকা কয়েকটি দুর্লভ চিত্রসহ অর্ধশতাধিক ছবি ছিল এখানে।

সরাসরি ছবি নিয়ে কথা বলাই শ্রেয়। প্রথমেই জয়নুল আবেদিন। প্রদর্শনী আলোকিত করছে তাঁর কয়েকটি ছবি। এর মধ্যে ১৯৩৯ সালে তুলি ও কালিতে তাঁর আঁকা দুটি দুর্লভ ড্রয়িংয়ের একটিতে পাঞ্জাবি গায়ে চড়ানো জনৈক পাঠকের পাঠে অভিনিবেশের মনোহর এক ছবি। অন্যটিতে দেখা গেল উডকাট ছাপচিত্র: ‘জলকে চলা মায়ের সঙ্গে বড়শি কাঁধে আদুল গায়ের শিশু’। এ ছবির কোনো সন-তারিখ পাওয়া যায়নি। কাজ দেখে মনে হয়, ছাত্রাবস্থায় কলকাতার নানা কাগজে ও বইয়ে আঁকতেন তিনি, এটি হয় সে সময়ের কাজ, নতুবা নিজের পাঠের অংশ, কোনো ছাপচিত্রও হতে পারে। অল্প রেখায় আলোছায়ার বৈপরীত্যে বেশ মজার আলোচ্য ছবিটি।

বাংলার লোকায়ত শিল্প নানা নিরীক্ষার মাধ্যমে ঋদ্ধ হয়েছে কামরুল হাসানের হাতে। এই চিত্রকরের অসামান্য এক লিথো ছাপচিত্র রয়েছে প্রদর্শনীতে—দুর্ভিক্ষপীড়িত মৃতের শরীরকে কেন্দ্র করে একদল শকুন ও কাকের ছবি। লোককলা ও কিউবিজমের অঙ্কনশৈলীকে মিলিয়ে এঁকেছেন একটি গরুর আকৃতি।

এ দেশে ছাপচিত্রের পথিকৃৎ সফিউদ্দিন আহমেদ। কাঠের বুক কেটে কেটে আলো-আঁধারির জাল বুনে মানুষ ও প্রকৃতিকে দারুণ দক্ষতায় তিনি রূপায়িত করেছিলেন গত শতকের সেই চল্লিশের দশকেই। এই শিল্পীর ১৯৫৭ সালে আঁকা ‘মাছধরার হলুদ জাল’ এবং ১৯৫৯-তে আঁকা ‘বন্যা’—ছবি দুটিও দেখা গেল প্রদর্শনীতে। দুই ক্যানভাসের ভেতর দিয়ে শিল্পী দেখেছেন রাগ, রূঢ়তা, দ্রোহ, মায়া ও বাৎসল্য।

মোহাম্মদ কিবরিয়ায় চারটি ছাপচিত্রের দুটির নাম ‘শিরোনামহীন’। আরেকটি ‘স্মৃতির স্মারক’। তাঁর ছবিগুলোতে স্বভাবসুলভ প্রকাশবাদী বিমূর্ত ধারার ছাপ স্পষ্ট। ছবিগুলো যেন মনের অন্তহীন অনুভূতিই প্রকাশ করে বারবার।

আমিনুল ইসলামের ‘প্রকৃতি’, ‘গঠন’ ও ‘অঙ্কন’ শিরোনামে ছবিগুলো নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে প্রদর্শনীকে।

আবদুর রাজ্জাকের শেষ জীবনের ছবি ‘বাগান’, ‘প্রকৃতি’। ঢাকার উত্তর-পুবের বাড্ডা এলাকার নতুন বসতি স্থাপনের আগের চেহারা নিয়ে কাগজে মিশ্রমাধ্যমে বেশ কিছু ছবি এঁকেছিলেন তিনি ২০০৩-এ। এখানে স্থান পেয়েছে ওই ছবিগুলো।

আছে রশিদ চৌধুরীর ট্যাপেস্ট্রির লেআউটও। একটি ১৯৭৭-এর, অন্যটি ১৯৮৬ সালে আঁকা। ১৯৫৬-তে কাঠকয়লায় আঁকা আত্মপ্রতিকৃতি ও তার ছাপ মিলে মজার একটি ছবি এঁকেছিলেন রশিদ। সেটিও দেখা গেল প্রদর্শনীতে।

সৃজনশীলতায় এখনো দারুণ সক্রিয় মুর্তজা বশীর। তাঁর কাজগুলো সব ছাপচিত্র মাধ্যমের। ‘ইমেজ ১২, ১৪, ১৮, ২০’ শীর্ষক তাঁর পাঁচটি চিত্রকর্ম আছে এখানে।

এখন বলব সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রফিকুন নবী ও মনিরুল ইসলামের কথা। এই তিন শিল্পীরই শিল্পশিক্ষা পূর্বোক্ত শিল্পীদের হাতে। তাঁরাও বরেণ্য। তিনজনই প্রচুর ছবি আঁকছেন, নিরীক্ষা করছেন। সমরজিৎ রায় চৌধুরী—‘মাধবী, দ্বিধা কেন’—রবীন্দ্রনাথের এ কথাকে বিষয় করে নন্দিত ছবি এঁকেছেন। ভূমি ব্যবস্থাপনার জ্যামিতিকে স্বকৃত কায়দায় তুলে এনেছেন চিত্রপটে।

গ্রামীণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সুখী চেহারা নিয়ে কাব্যিক ছবি এঁকেছেন রফিকুন নবী।

অন্যদিকে ওপর থেকে দেখা নদীর বুকে জলের তোলপাড়, মাছের ঘাই, জলে ভাসা বর্জ্য, খড়কুটো—সবই ওঠে আসে মনিরুল ইসলামের বিমূর্ত ক্যানভাসে।

কিছু দুর্লভ চিত্রকর্মসহ আমাদের প্রধান শিল্পীদের কাজ একসঙ্গে দেখার এমন সুযোগ খুব একটা মেলে না। গ্যালারি চিত্রকের আলোচ্য প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বিগত ৮৮ বছরে বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার গতি-প্রকৃতি সম্বন্ধে ধারণালাভের সুযোগ পেলেন দর্শকেরা। গত ২৮ মার্চ শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হয়েছে ২১ এপ্রিল।