Thank you for trying Sticky AMP!!

মূলত সা'দাত হাসান মান্টো, মূলত জার্নাল

লিট ফেস্টে মান্টো দেখানোর পর কথা বলছেন নন্দিতা দাস। ছবি: প্রথম আলো

উৎসবের শহর হয়ে উঠেছিল ঢাকা। ৮ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিন বাংলা একাডেমির ৬টি ভেন্যুতে ৯০টির বেশি সেশনের আয়োজন নাকি করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে। কাগজে দেখলাম অন্য অনেকের সঙ্গে বহুবার শোনা নাম নন্দিতা দাসও আসছেন। ইউটিউবে অনেকবারই দেখা হয়েছে নন্দিতাকে নানান আলোচনা সভায়। খুব ভালো বলেন। আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক সা’দাত হোসেন মান্টোকে নিয়ে নন্দিতা মান্টো শিরোনামে একটি ছবি করেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে ছবিটির কথা শুনে আসছিলাম। কোথায় কোথায় প্রদর্শনী হচ্ছিল সে খবর ফেসবুক থেকে পাচ্ছিলাম। আর শুধু ভাবছিলাম কোথায়, কখন কীভাবে দেখতে পাব। সেই ছবিও সঙ্গে এনেছেন। নন্দিতার ফিরাক (২০০৮) ছবিটি দেখেছিলাম আগে, দারুণ মর্মস্পর্শী সে ছবি। গুজরাট-দাঙ্গা ছিল সে ছবির বিষয়। তবে উৎসব-মঞ্চে দেখার আগেই আমার সৌভাগ্য হলো ল্যাপটপে মান্টোর খানিকটা দেখার। বাকিটা আজ অথবা কাল দেখা হয়ে যাবে ভাবছিলাম। আর তখনই খবর পেলাম, নন্দিতা স্বয়ং ছবিটি নিয়ে আসছেন ঢাকায়। উৎসবের দিনে উৎসাহিত হয়ে ছুটে গেলাম বাংলা একাডেমিতে। মান্টোকে নিয়ে কেন নন্দিতা ছবিটি করলেন—এ প্রশ্নের জবাবে নন্দিতা বললেন, মান্টো যা লিখে গিয়েছেন তা এখনো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বস্তুত দেশভাগ, যার মূলে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিরোধ ও হানাহানি, অসংখ্য মৃত্যু—তা এক হৃদয়বিদারক ঘটনা হিসাবেই স্মরণীয় হয়ে আছে, আর থেকে যায় কি না ভয় হতে থাকে। তা না হলে নন্দিতা কেন বলবেন, মান্টোর লেখা এখনো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক?

একটি বই খুঁজছিলাম, মান্টোর লেখা গাঞ্জে ফেরেশতে, ঘরেই ছিল, বইটি পেয়ে মান্টো সম্পর্কে আরও খানিকটা লেখা যায়। পরে হয়তো একদিন লেখা হবে। এ লেখার পরে মান্টোকে নিয়ে করা ছবিটিও দেখব আবার। বইটি থেকে টুকে রাখা মান্টোর ভূমিকা থেকে এখানে কিছু কথা উদ্ধৃত করছি: ‘এমন সমাজ এবং সভ্যতার উপর হাজার বার অভিসম্পাত, যেখানে মানুষ মারা গেলে তাদের কৃতকর্মের সম্ভার লণ্ড্রিতে পাঠিয়ে খুব সাফ-সাফাই করে ধোলাই করা হয়, অতঃপর বিধাতার জন্যে তা টানিয়ে দেওয়া হয়। আমার প্রসাধন কক্ষে কোনো প্রসাধন দ্রব্য নেই ভাই। …আমি সাজগোজ করেতে জানি না। প্রসাধন করে আসল চেহারা ঢাকতে জানি না।’

মান্টো বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সকল যন্ত্রণার জননী হচ্ছে ক্ষুধা এবং যৌন অতৃপ্তি।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা দেহ বিক্রি করতে বাধ্য করে। …ক্ষুধার হামলা অত্যন্ত ভয়াবহ্।’

মান্টোর প্রসঙ্গে এখানে শেষের কথাটি—মান্টো বলেছেন, ‘আমি গল্প লিখি না, গল্প আমাকে লেখে।’ আহা, এমনই তো হওয়া উচিত সব লেখকের ক্ষেত্রে। গল্প বা কবিতা যেন আমাদের লেখে।

পশ্চিমবঙ্গের একজন বাঙালি লেখককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল—শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে। তাঁকেই দেখলাম দূর থেকে একবার।

বাংলাদেশের কোন্ কোন্ লেখককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আমি জানি না।

দুই.

প্রতি ভোরেই ঘুম থেকে উঠে আয়না না দেখে বিশ্বাস হতে চায় না আমি আছি। তবে ‘আছি’ বলতে কী, তা অবশ্য জানি না। কথা একটা দুটো বলি সঙ্গিনীর সঙ্গে, একটা-দুটো কথা শুনি। কিছু না ভেবে, না বুঝেই ল্যাপটপ খুলি আর ভাবি, কী করব? ছবি আছে অনেক। হলোকস্টের আগের–পরের, ভিন্ন সময়ের। দেখব, পড়ব কিছু? কী পড়ব? বালিশের পাশেই আনে ফ্রাঙ্ক, কতবার, আর কতবার? বালিশের কাছেই দ্য আউটসাইডার/স্ট্রেঞ্জার। কতবার, আর কতবার? রেশ যায় না। ফুরোয় না। গানও দেখি যে বাঁচিয়ে রাখতে চায় খুব। গান শুনব? কার গান? রশিদ খাঁর আরও কোন কোন গান বাকি? পদ্মা তলোয়ালকরের, হীরা বাঈয়ের? রঞ্জিনী মুখোপাধ্যায়ের? কার? হায়, কী করব? কত কত যে গাইয়ের রয়েছে বাকি শোনার। নতুন আরও গাইয়ে কি এসে জাঁকিয়ে বসতে পারেননি এখনো? শোনা যাচ্ছে না কেন তাঁদের গান?