Thank you for trying Sticky AMP!!

লেখক রঙ্গ

অলংকরণ: তুলি

জব্দ মোহিতলাল মজুমদার

১৩২৮ বঙ্গাব্দ। কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা তখন সদ্য প্রকাশ পেয়েছে। বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে কবিতাটির জয়জয়কার। সবার মুখেই প্রশংসা। শুধু একজনই তখন ক্ষিপ্ত, তিনি কবি মোহিতলাল মজুমদার। সর্বত্র তিনি প্রচার করে বেড়াচ্ছিলেন, ‘বিদ্রোহী’ আদতে তাঁর ‘আমি’ শীর্ষক একটি ব্যক্তিগত রচনার পদ্যরূপ মাত্র। একদিন সন্ধ্যায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, হেমেন্দ্রকুমার রায়, নলিনীকান্ত সরকারসহ আরও কয়েকজন সাহিত্যিক মিলে জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছিলেন। সেখানে মোহিতলাল হঠাৎ এসে হাজির হয়ে নজরুল কীভাবে ও কী প্রকারে তাঁর লেখা ‘মেরে দিয়েছেন’ তা ক্রোধতপ্ত কণ্ঠে বয়ান করতে শুরু করেন। বিশেষ করে তাঁর নিবন্ধের দুটি শব্দের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বললেন, ‘শব্দ দুটি হচ্ছে “মহামারী” আর “উন্মাদ”। আমার রচনার ওই দুটি শব্দ আছে নজরুলের “বিদ্রোহী”র মধ্যে। বলুন আপনারা এ চুরি কি না?’ বিরক্ত নলিনীকান্ত সরকার হঠাৎ বলে বসলেন, ‘ও রকম চুরি রবীন্দ্রনাথের লেখাতেও আছে!’ এ কথায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত চটে গিয়ে বললেন, ‘কোথায় দেখলেন আপনি?’ নলিনীকান্ত জানালে, ‘ঐ খ্যাপা শ্রাবণ ছুটে এলো আশ্বিনেরি আঙিনায় গানটি রবীন্দ্রনাথের চুরি।’ সত্যেন্দ্রনাথ রাগে চোখ লাল করে ফের বললেন, ‘কোত্থকে চুরি করেছেন?’ নলিনীকান্তের সোজা জবাব, ‘গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা থেকে। ওর মধ্যে শ্রাবণ আর আশ্বিন দুটো শব্দই আছে।’ সত্যেন্দ্রনাথসহ বাকিরা এবার হো হো করে হেসে উঠলেন। আর এভাবে নিদারুণ জব্দ হয়ে মোহিতলাল হয়ে পড়লেন গম্ভীর।

সূত্র: শতদল গোস্বামীর সাত পুরুষের রম্য জগৎ

প্রেমেন্দ্র মিত্রের থেকে লেখা আদায় করতে...

কবি-কথাকার প্রেমেন্দ্র মিত্র লেখার ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত খুঁতখুঁতে। তাই তাঁর কাছ থেকে সময়মতো লেখা আদায় করতে পত্রিকার সম্পাদকদের যারপরনাই বেগ পেতে হতো। একবার যুগান্তর পত্রিকার পূজাসংখ্যার জন্য তাঁর কাছে একটি ভালো গল্প বা কবিতা চেয়েছিলেন সংখ্যার দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক পরিমল গোস্বামী। কিন্তু যথারীতি প্রেমেন্দ্র মিত্র লেখা দিতে দেরি করছিলেন। ওদিকে পূজাসংখ্যা প্রকাশের সময়ও এগিয়ে আসছিল। এমন সময় একদিন এক বন্ধুর বাড়িতে হঠাৎ তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। প্রেমেন্দ্র মিত্র তখনো মাথা নাড়ছেন, ‘না না, এবারে আর লেখাটা মনে হয় না হবে।’ হতাশ পরিমল গোস্বামী তখন প্রেমেন্দ্রর দিকে একটা খাতা এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এটি আমার এক নাতনির অটোগ্রাফ বই। আপনি কিছু লিখে না দিলে ও মন খারাপ করবে।’ অগত্যা প্রেমেন্দ্র মিত্র ছয় লাইনের একটা পদ্য লিখে দিলেন ওই খাতায়। খাতাটা ফেরত নিয়ে এবারে পরিমল গোস্বামী তাঁর ব্রহ্মাস্ত্রটি ছাড়লেন, ‘তাহলে এবার আমার কথা শোনো। যদি পরশুর মধ্যে তোমার ভালো লেখাটি না পাই, তা হলে যুগান্তর–এর পূজাসংখ্যায় এই লেখাটাই ছেপে দেব।’ এ হুমকিতে কাজ হয়েছিল। পরে দিনকয়েকের মধ্যেই প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ভালো’ লেখাটি পত্রিকার দপ্তরে পৌঁছে যায়।

সূত্র: লীলা মজুমদারের খেরোর খাতা

গ্রন্থনা: মুহিত হাসান