Thank you for trying Sticky AMP!!

সরস শিবরাম

শিবরাম চক্রবর্তী

বিখ্যাত রম্যলেখক শিবরাম চক্রবর্তী ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন সাদাসিধে মানুষ। তবে লেখায় তিনি হাস্যরসিক।

এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি লেখক হলেন কেন? জবাব দিলেন, রিকশা চালাতে জানেন না বলে!

উল্টোরথ পত্রিকার অমিতাভ বসু তাঁকে আরেক সাক্ষাৎকারে জানতে চাইলেন, ‘সকালে আপনি কখন ওঠেন?’ শিবরাম হেসে বললেন, ‘সেটা সময়সাপেক্ষ। ঘুম ভাঙলেই ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু রাতভর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এমন ক্লান্ত হয়ে পড়ি যে সেই ক্লান্তি দূর করতেই আবার একটুখানি ঘুমিয়ে নিতে হয়। এমনি করে করে যখন না উঠে পারা যায় না, খুব খারাপ দেখায়, তখন বাধ্য হয়েই বিছানা ছাড়তে হয়।’

তাঁর অভাবী চিরকুমার জীবনের প্রায় পুরোটা কেটেছে কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের ঘুপচি মেসবাড়িতে। বলতেন, ‘মুক্তারামের তক্তারামে শুক্তারাম খেয়ে আরামে আছি।’

নিজেকে নিয়ে ঠাট্টা করতেন খুব, অকপটে। বাংলা রম্যলেখার পাঠকমাত্রই শিব্রাম চকরবরতিকে চেনেন। উদ্ভট, পেটুক, অঘটনঘটনপটিয়সী গল্পের শিব্রাম ছিল লেখক শিবরামেরই ফটোকপি। সেই শিব্রামের গল্পে নিজের জ্ঞাতিদের নিয়েও মশকরা করতে ছাড়েননি।

‘আমার ধারণা চকরবরতিরা যেমন কঞ্জুষ, তেমনি আবার খুব ধারালোও হয়ে থাকে। তারা ধারে কাটে, ধার করে কাটে তাদের। ধার পাবার আশা না থাকলে সে ধার তারা মাড়ায় না।’

তাঁর কথার বাণ থেকে ছাড় পায়নি বন্ধুরাও। কাজী নজরুল ইসলাম, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, হেমেন্দ্রকুমার রায়সহ সমসাময়িক অনেকেই ছিলেন শিবরামের কাছের বন্ধু। সেই তিনিই কিনা তাঁর আত্মজীবনী ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসায় লিখলেন: ‘পৃথিবীতে বড় বয়সের বন্ধু বলে কিছু হয় না। বন্ধু হয়, সেই ছোটবেলায় স্কুল–কলেজে পড়বার সময়। তারপর হয় এনিমি বা নন-এনিমি। এই নন-এনিমিদেরই আমরা বন্ধু বলে ধরি।’

তাঁর মুক্তোরাম স্ট্রিটের মেসবাড়ির দরজায় তালা ঝুলত বিশেষ কায়দায়। শিবরাম দরজার কড়ার ভেতর শিকল গলিয়ে তাতে তালা ঝুলিয়ে রাখতেন। একদিন কোনো এক সাক্ষাৎপ্রার্থী এসে দরজা খুলে দিতে অনুরোধ করায় শিবরাম ভেতর থেকে বললেন, ‘এক দিকের কাঁধ ঢুকিয়ে কেতরে কেতরে ঢুকে পড়ো।’

এভাবে কসরত করে ভেতরে ঢুকে সেই ব্যক্তি বললেন, ‘এভাবে তালা লাগিয়েছেন আপনি! চোর তো চাইলেই ঢুকে পড়তে পারে!’

‘তা পারে। কিন্তু বেরোবে কী করে?’ শিবরাম চাবি দিয়ে তালা না খুললে বেরোনোর উপায় ছিল না।

শিবরামের লেখার জগৎটাও সে রকম। একবার ঢুকলে আনন্দ-যজ্ঞ থেকে বেরোনোর পথ নেই।

গ্রন্থনা: মুশফেকা ইসলাম