Thank you for trying Sticky AMP!!

সুচিত্রা সেনের অভিনয় আজও অমলিন আমার হৃদয়ে

>

হাসান আজিজুল হক। বাংলাদেশের অগ্রজ কথাসাহিত্যিক। যে কয়েকজন কথাশিল্পী বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের ভিত্তিভূমি নির্মাণ করেছেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। কয়েক দিন আগে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই লেখক। তিনি কথা বলেছেন তাঁর প্রিয় ৫ বিষয় নিয়ে।

সুচিত্রা সেন

১. প্রিয় নায়িকা
অতুলনীয় সুচিত্রা সেন

আমার প্রিয় নায়িকা বা অভিনেত্রী হলেন সুচিত্রা সেন। অনেকের অভিনয়ই ভালো লাগে, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে সুচিত্রা সেন অতুলনীয়। যতটুকু মনে পড়ে, সাগরিকা আমার দেখা সুচিত্রা অভিনীত প্রথম ছবি। তারপর একে একে তাঁর সবগুলো ছবিই দেখেছি। প্রতিটি ছবিতে তাঁর অনবদ্য উপস্থিতি আরও অনেকের সঙ্গে আমাকেও মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত। পাশাপাশি বলতে হবে উত্তম কুমারের কথাও, তখন ছবিতে উত্তম-সুচিত্রা জুটির উপস্থিতি মানেই আলাদা একটা ব্যাপার ছিল। সে সময় আমার কিশোর বয়স। তখন তো এখনকার মতো এত সিনেমা হল, সিনেপ্লক্স—এসব ছিল না। তাই বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট তাঁবু খাটিয়ে যন্ত্রপাতি এনে ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হত। এখানেই আমরা ছবি দেখতাম। সুচিত্রা সেনের সেই রূপ, সেই হাসি, সেই প্রাণবন্ত অভিনয় আজও অমলিন আমার হৃদয়ে।

২. প্রিয় লেখক

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

আমার প্রিয় লেখক অনেক। কাকে রেখে কার কথা বলব। এক জীবনে অনেকের লেখা পড়ে আলোড়িত হয়েছি, প্রাণিত হয়েছি। বাংলা সাহিত্য বা বিশ্বসাহিত্য, যেখানেই যাই না কেন, প্রিয় লেখক হিসেবে অনেকের নাম উঠে আসে মুখে। তবে একজনের নাম নিতে গেলে, এই মুহূর্তে বলতে পারি, কিশোর বয়সে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম; এবং এখনো মুগ্ধ হই। আমার এক মামাতো ভাই ছিলেন, তাঁর বাংলা পাঠ্য সংকলনে অপুর সংসার–এর কিছু অংশ ছিল, আমি পড়লাম। সেই আমার প্রথম বিভূতি পাঠ। এরপর খুঁজে খুঁজে সংগ্রহ করে পড়েছি বিভূতিভূষণের বই। আমার বড় বোন এবং ভাইও খুব পড়ুয়া ছিলেন। যে কারণে বই সংগ্রহ করা এবং পড়াটা আমাদের জন্য আনন্দের ব্যাপার ছিল। প্রিয় লেখক হিসেবে এখন বিভূতিভূষণের কথা বললাম বটে, কিন্তু এ–ও সত্যি যে প্রিয় লেখকের ক্ষেত্রে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

৩. প্রিয় শিল্পী

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান

আমরা সংগীত-ভক্ত পরিবার। আমার প্রিয় শিল্পী হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়। প্রিয় শিল্পীর প্রসঙ্গ যখন এল, তখন বলি: আমাদের বাড়িতে গ্রামোফোন ছিল। বাজারে নতুন রেকর্ড বের হলে বাবা মাঝেমধ্যে নিয়ে আসতেন। একবার তিনি হেমন্তের একটি রেকর্ড নিয়ে এলেন। তখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে প্রথম শুনেছিলাম ‘আকাশে দুটি তারা নীরবে চেয়ে আছে’ গানটি। তারপর শুনেছি ‘পরদেশি কোথা যাও, থামো গো হেথায় পলাশ বনেরও ধারে’। সেই শুরু। এরপর থেকে আমার মনে হয়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাংলা ভাষায় গাওয়া এমন একটি গান খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় যেটি আমি অন্তত একবার শুনিনি। ভাগ্যক্রমে এই মহান শিল্পীর সঙ্গে আমার একবার দেখা হয়েছিল। সেটি ১৯৮৮ সালের কথা। আমি তখন ইংল্যান্ড যাচ্ছিলাম। কলকাতা বিমানবন্দরে ক্ষণিকের জন্য দেখেছিলাম তাঁকে।

হাসান আজিজুল হক ছবি: নাসির আলী মামুন/ফটোজিয়াম

৪. প্রিয় চলচ্চিত্র
সবার দেখা উচিত টু উইমেন

সোফিয়া লরেন অভিনীত টু উইমেন ছবিটি আজও গভীরভাবে দাগ কেটে আছে আমার মনে। ছবিতে আমরা দেখি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের এক মাকে, মেয়েকে সঙ্গে করে যাকে ছাড়তে হয়েছিল রোম শহর। তখন ছোট সেই মেয়েটিকে নিয়ে মা কোথায় যাবে, কী করবে? এর মধ্যেই গোলাগুলি চলছে, যখন-তখন বোমা পড়ছে—সে এক অবর্ণনীয় পরিস্থিতি। গল্পের এক পর্যায়ে আমরা দেখি, একটি চার্চের মধ্যে মা ও মেয়েকে একসঙ্গে ধর্ষণ করা হলো। ছবির এই দৃশ্যটি আমি মনে হয় জীবনেও ভুলব না। ধর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে ছোট বালিকাটি যেন এক ধাক্কায় মেয়েমানুষ হয়ে গেল। মা-মেয়ে পরস্পরের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জায়—এমন এক পরিস্থিতি। আসলে এ ছবিটি যে না দেখেছে তাকে বলে বোঝানো যাবে না। আমি মনে করি, টু উইমেন ছবিটি সবার দেখা উচিত।

 ৫. প্রিয় বই

কাঁচা বয়সের মানসপটে আলোড়ন তুলেছিল কৃষ্ণকান্তের উইল

এক জীবনে কম তো আর পড়িনি, আমার প্রিয় বইয়ের তালিকাটি তাই বেশ দীর্ঘই বলতে হবে। তবে এই মুহূর্তে একটি বইয়ের কথা যদি উল্লেখ করতে হয় তাহলে বলব বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসের কথা। বইটি আমি প্রথম পড়েছি সম্ভবত ১৯৫১-৫২ সালের দিকে। আমার বয়স তখন ১৩-১৪ হবে। সে সময় আমরা থাকতাম বর্ধমানের অজ পাড়াগাঁ যবগ্রামে। সেখানেই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আমাদের স্কুলটি ছিল মহারাজার। সেখানে তিনি বেশ ভালো একটি লাইব্রেরি গড়ে দিয়েছিলেন। যত দূর মনে পড়ে, সেই লাইব্রেরিতে বসেই প্রথম পড়েছিলাম কৃষ্ণকান্তের উইল। এই উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত প্রেমের তো বটেই, কিন্তু সেই প্রেমের মধ্যে এমন এক বিক্ষুব্ধ চেহারা আছে, যা মুগ্ধকর। মহারূপসী রোহিনীর প্রেমে পড়ল গোবিন্দলাল। তার থেকে সৃষ্টি হলো নানান টানাপোড়েন। সব মিলিয়ে বইটি আমার সেই কাঁচা বয়সের মানসপটে আলোড়ন তুলেছিল।