কী হলো? গোনা থামালেন কেন? গুনতে থাকুন। গোনা দরকার। হিসাব তো রাখতে হবে!
নিদ্রার আবাহনে ভেড়া গোনা এটি নয়। এই সংখ্যাগুলো বরং নিদ্রাহীন রাত উপহার দিতে চায়। দেয় আশঙ্কা, দেয় ভয়। গভীরে ভাবলে গা শিউরে ওঠে। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে লাচার হয়ে স্বাগত জানায় নিজেদের তৈরি আতঙ্ককে।
৯৭৫—গত নয় মাসে মোট ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা। থেমে নেই অবশ্য, সংখ্যার জয়যাত্রা চলছেই। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে জানা গেছে, আমাদের এই বাংলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে তিনটির বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আর এমন সংখ্যাকে প্রবৃদ্ধির শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ দেশের কিছুসংখক ‘পুরুষ’ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেই বোধ হচ্ছে। কারণ, প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে নারী নির্যাতনের নতুন নতুন সংবাদ। এক সংবাদ আরেককে নৃশংসতায় ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে যেন।
এমন সহিংসতা যে এবারই বা এ বছরই হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। ফি বছরই এমন একটা সময় আসে। আমরা সচকিত হই। পত্রিকার পাতায় পাতায় আসে প্রতিবাদের খবর। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওঠে ক্ষোভের ঝড়। গত বছরও এসেছিল এমন সময়। তার আগের বছরও ছিল। প্রবণতা হলো, একসময় চুপ মেরে যাওয়া। আর তাতেই জন্তুর আনাগোনা ফের শুরু হয়। আদতে প্রতিকার কিছু হয় না। তাই জন্তুর গাঢ় নিশ্বাসে ফের রক্তের গন্ধ পাওয়া যায়। সেই উদগ্র গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে আমরা আবার নড়েচড়ে বসি। কিছু ইটপাটকেল ছুড়ি। এরপর আবার যে কে সে-ই!
জন্তুর কামড়ে আধখাওয়া মানুষেরা কীভাবে কীভাবে যেন ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়; অথবা ‘ভাইরাল’ করা হয়। বন্ধক রাখা মুরগি ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায় অনেকে। ওদিকে উঁচু গাছের ডালে বাসা বাঁধা আমরা তখন চেয়ে চেয়ে দেখি। বলি, কী যে হচ্ছে এই দুনিয়ায়! বাহাস করি জন্তুর প্রবৃত্তি নিয়ে। কেউ কেউ আবার জন্তুর মুখে রক্তের ছিটে থাকায় তাকে অশ্লীলভাবে বাহবা দেয়। কেউ এ–ও বলে, এটাই নাকি নিয়ম। আবার ইচ্ছে হলে ‘ভাইরাল’ হওয়ার যন্ত্র চালিয়ে এসব নিয়ে আমরা একটু হইচইও করি। কী আর আছে এই ‘গেবনে’?
জন্তুর কামড়ে আধখাওয়া মানুষেরা কীভাবে কীভাবে যেন ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়; অথবা ‘ভাইরাল’ করা হয়। বন্ধক রাখা মুরগি ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায় অনেকে। ওদিকে উঁচু গাছের ডালে বাসা বাঁধা আমরা তখন চেয়ে চেয়ে দেখি। বলি, কী যে হচ্ছে এই দুনিয়ায়! বাহাস করি জন্তুর প্রবৃত্তি নিয়ে। কেউ কেউ আবার জন্তুর মুখে রক্তের ছিটে থাকায় তাকে অশ্লীলভাবে বাহবা দেয়। কেউ এ–ও বলে, এটাই নাকি নিয়ম। আবার ইচ্ছে হলে ‘ভাইরাল’ হওয়ার যন্ত্র চালিয়ে এসব নিয়ে আমরা একটু হইচইও করি। কী আর আছে এই ‘গেবনে’?
আমাদের কারও কারও ভরসা হলো, জন্তুগুলো নাকি গাছ বাইতে পারে না। কিন্তু রক্তের সুবাস এতই জাদুকরি যে একদিন দুপেয়ে শ্বাপদও গাছ বাইতে শিখে যায়। তাতেই আমাদের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়! কেউ কেউ অবশ্য খুশিই হয়। সুযোগ পেয়ে শ্বাপদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে ফেলে তারা। শব্দে ‘কতিপয়’, কিন্তু সংখ্যায় বিশাল এই অংশের পক্ষত্যাগে আমরা বিমর্ষ হই। তারা আমাদেরই কারও বাবা, ভাই, বন্ধু বা পরিচিতজন কিনা!
শ্বাপদেরা একসময় আধখাওয়া মানুষগুলোকে ভক্ষণ করার কারণ দর্শায়, কূটতর্ক করে। আমরা এক কোণে দাঁড়িয়ে শুনি, মাঝেমধ্যে প্রতিবাদ করি। কিন্তু রুখে খুব একটা দাঁড়াই না। বরং শ্বাপদের তীব্র অশালীন গর্জনে অসুস্থ হয়ে পড়ি। কেউ কেউ সুযোগ পেলে অন্য কোথাও চলে যায়। আর আমরা যারা শ্বাপদের সঙ্গে সহাবস্থানে থাকি, তারা সংখ্যা গুনি। নিজেদের পালা এলে বুঝি, কিছুদিন আগে আমাদের বাসার নিচে সেই আধখাওয়া মানুষটা কিসের আশায় এসেছিল! সব উপলব্ধি শেষে ওপরে চেয়ে দেখি, আমিও আছি কোনো সুউচ্চ গাছের তলে। ওপরের বাসা থেকে তখন শোনা যায় ক্যামেরার ক্লিক।
অন্য কেউ তখন শুরু করে গোনা।
৯৭৮, ৯৭৯, ৯৮০…
আসুন, গুনতে থাকি।
নিজেদের পালা এই এল বলে!
অন্য আলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: info@onnoalo.com