Thank you for trying Sticky AMP!!

'ফ্রাঙ্কেনস্টাইন'-এর ২০০ বছর

ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের স্রষ্টা মেরি শেলি

‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ বলতেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে কোনো দানবের নাম। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন আদতেই কি দানব? নাকি সাহিত্যের একটি চরিত্র? চলুন একটু পেছন ফিরে চোখ রাখি ইতিহাসের পাতায়।
১৮১৫ সালে সুইজারল্যান্ডে লেইক জেনেভায় ছুটি কাটাতে গিয়ে মেরি শেলি, ইংরেজ কবি লর্ড বায়রন, পার্সি বিসি শেলি ও চিকিৎসক জন পোলিডরি ঘরোয়া এক আড্ডায় খেলাচ্ছলে একটা ভূতের গল্পের বই থেকে একটার পর একটা করে গল্প পরস্পরকে পড়ে শোনাচ্ছিলেন। এ সময় বায়রন হুট করে একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন যে আড্ডায় উপস্থিত প্রত্যেককে একটি করে ভূতের গল্প লিখতে হবে এবং সেসব গল্প থেকে সেরা গল্পের লেখককে ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী করা হবে। এভাবে মজাচ্ছলে গল্প লিখতে গিয়ে ১৮ বছরের মেরি শেলির ভেতরে প্রথিত হয়ে যায় লেখক হওয়ার স্বপ্ন। এই স্বপ্নের কথা মেরি লিখেছিলেন তাঁর গল্পের নায়কের কণ্ঠে, ‘আমার স্বপ্নগুলো আমারই ছিল। এই স্বপ্নগুলো আমি অন্য কারও জন্য দেখিনি। যখন আমি খুব অস্থির হয়ে পড়তাম, আমার স্বপ্নগুলো আমাকে আশ্রয় দিত, আমার উড়ে বেড়ানোর দিনগুলোতে এরাই ছিল আমার প্রিয়তম সুখ!’

বায়রন মেরির গল্পকে আখ্যা দেন ‘মেয়ে হিসেবে দুর্দান্ত কাজ’ হিসেবে; এবং এই প্রশংসায় অনুপ্রাণিত হয়ে গল্পটিকে উপন্যাসে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেন মেরি। এই ঘটনার ঠিক দুই বছর পরে ১৮১৮ সালে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন অর আ মডার্ন প্রমিথিউস নামে এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তা তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

মেরি শেলি ছিলেন প্রথম নারীবাদী এবং চিন্তাবিদ মেরি ওলস্টোনক্রাফট এবং দার্শনিক উইলিয়াম গডউইনের মেয়ে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বেড়ে ওঠা তাই ছিল লন্ডনের উদার অভিজাতবলয়ে।
মেরির যখন মাত্র এক মাস বয়স, সেই সময়ে মারা যান তাঁর মা ওলস্টোনক্রাফট; এবং বাবার নতুন স্ত্রী তাঁকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দিতে আগ্রহী ছিলেন না। তাই মেরির পড়াশোনা শেখাটা সম্পূর্ণ ছিল বাড়িতে থেকে, মায়ের কবরের পাশে বই পড়ে। ১৬ বছর বয়সেই মেরি শেলির সঙ্গে দেখা হয় কবি পার্সি শেলির। পার্সি শেলি বিবাহিত জানার পরও মেরি তাঁর প্রেমে পড়েন। মেয়ে পার্সি শেলির প্রেমে পড়েছেন, খবরটি শোনামাত্র মেরির বাবা এই সম্পর্ককে নাকচ করলেও তাঁরা পালিয়ে গিয়ে ইউরোপ ভ্রমণ করেন এবং বিয়ে করেন।

ফ্রাঙ্কেনস্টাইন অর আ মডার্ন প্রমিথিউস বইয়ের িবজ্ঞানী ও দানব, ১৮১৮

ট্র্যাজেডিতে ভরপুর এক জীবন ছিল মেরির। প্রথম দুই সন্তানের শিশু অবস্থায় মৃত্যু এবং সৎবোনের আত্মহত্যা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে দীর্ঘদিন। এই দুর্ঘটনাগুলোর পর সুইজারল্যান্ডে বেড়াতে যান মেরি শেলি ও পার্সি শেলি। ধারণা করা হয়, মেরি তাঁর প্রিয়জনদের, বিশেষত মৃত ব্যক্তিদের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার প্রবল ইচ্ছা থেকেই লিখতে শুরু করেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। মেরি শেলির এই উপন্যাসে আছে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নামে এক বিজ্ঞানীর চরিত্র, যে একটি শবদেহ থেকে সৃষ্টি করে একটি দানব। দানবের প্রতিশব্দ হিসেবে আমরা এখন যে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে ভাবি, মেরির উপন্যাসে আদতে সে ছিল বিজ্ঞানী—পুরো নাম ড. ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। আর মেরির গল্পে দানবের কোনো নামই ছিল না!

এই উপন্যাস থেকে যে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ কথাটির উৎপত্তি কেবল তা–ই নয়, সাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে জীবন্ত চরিত্র এক পাগল বৈজ্ঞানিককে সৃষ্টি করে নতুন এক ধারা বিজ্ঞান কল্পকাহিনির জন্ম দিয়েছিলেন মেরি শেলি। সে সময় বেশির ভাগ নারী–লেখক লিখতেন পুরুষের ছদ্মনামে, কিন্তু মেরি প্রকাশিত হয়েছিলেন স্ব–নামেই । তবে প্রথমে অনেকে ভেবেছিল এটি তাঁর স্বামীর লেখা। অচিরেই সেই ভুল ভাঙে। মেরি মারা যান ১৮৫১ সালে। কিন্তু আজ থেকে দুই শ বছর আগে ১৮১৮ সালে তিনি যে সৃষ্টি করলেন একটি চরিত্র, একটি শব্দ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, সেই ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের স্রষ্টা হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকবেন মেরি শেলি।
সূত্র: ইনডিপেন্ডেন্ট, ইউকে

গ্রন্থনা: শাফিনূর শাফিন