Thank you for trying Sticky AMP!!

চিত্রকর বিপাশা হায়াতের ‘মাইন্ডস্কেপ’ এবং তাঁর স্মৃতির জগৎ

নিউইয়র্কের আপস্টেট সিরাকিউজে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পীদের এক কনফারেন্সে নিউইয়র্ক ফাউন্ডেশন ফর আর্টস থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন অভিনেত্রী ও চিত্রকর বিপাশা হায়াত। বর্তমানে মার্কিন মুলুকের এই শহরের লাইভ আর্টস গ্যালারিতে বিভিন্ন দেশের ১৭ চিত্রশিল্পীর সঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে তাঁর ‘মাইন্ডস্কেপ’ ছবিটি। এসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কবির বকুল

নিউইয়র্কের লাইভ আর্টস গ্যালারিতে নিজের চিত্রকর্মের সামনে বিপাশা হায়াত

বিপাশা হায়াতের একটা সুখবর দিয়েই শুরু করি। আগামী ১৯ ও ২০ মে নিউইয়র্কের আপস্টেট সিরাকিউজে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পীদের এক কনফারেন্সে নিউইয়র্ক ফাউন্ডেশন ফর আর্টস থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন আমাদের বিপাশা হায়াত। আর এই আমন্ত্রণের খবর জানা গেল ১৭ মার্চ থেকে নিউইয়র্ক লাইভ আর্টস গ্যালারিতে চলমান আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে গিয়ে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলা প্রদর্শনীটিতে স্থান পেয়েছে বিপাশা হায়াতের ‘মাইন্ডস্কেপ’। বিপাশা ছাড়া এখানে আরও আছে বিভিন্ন দেশের ১৬ জন চিত্রশিল্পীর শিল্পকর্ম।

নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের নিউইয়র্ক লাইভ আর্টসে ১৭ মার্চের এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনে উপস্থিত হয়েছিলাম আমি। মূলত বিপাশার কাজটি দেখার জন্যই যাওয়া। কারণ, আন্তর্জাতিক একটি প্রদর্শনীতে বাংলাদেশি একজন চিত্রশিল্পীর ছবি স্থান পেয়েছে, ছবিটি কেমন, এটা জানার কৌতূহল ছিল। বিপাশার ছবি দেখার পাশাপাশি অন্য শিল্পীদের ছবিও দেখা হলো। তবে সত্যি বলতে, ১৭ শিল্পীর কাজের মধ্যে বিপাশার ‘মাইন্ডস্কেপ’ই চোখ কাড়ল বেশি।

প্রদর্শনী শেষে মুখোমুখি হলাম বিপাশা হায়াতের। জানতে চাইলাম, এমন একটি আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনীতে কীভাবে তাঁর কাজ মনোনীত হলো?

বিপাশা বললেন, ‘আসলে ভিজ্যুয়াল আর্টের ভাষা তো সর্বজনীন। আর আমিও শিল্পী হিসেবেই কাজ করতে চাই। কিন্তু মূলধারার শিল্পকলার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হওয়া যায়, তা জানা ছিল না। নিউইয়র্কে বিভিন্ন ফাউন্ডেশন আছে, যারা এ বিষয়ে সহযোগিতা করে। এর একটি হলো নিউইয়র্ক ফাউন্ডেশন ফর আর্টিস্ট (নাইফা)। সংগঠনটি গত বছরের মার্চে ‘আর্টিস্ট ফর এন্ট্রাপ্রেনিউর’ শিরোনামের চার দিনের একটি কর্মশালার আয়োজন করে। বাংলাদেশের খ্যাতনামা আলোকচিত্রী সুমন আহমেদ ব্রুকলিন থেকে আমাকে ফোন করে বলেন, “আপা, আপনি এখানে নাম নিবন্ধন করেন।”’

তখন আমি ভাবছিলাম, এত প্রতিযোগিতা যেখানে, সেখানে আমার কাজ কি মনোনীত হবে? তো সেই উন্মুক্ত আহ্বানে শেষ মুহূর্তে আমি আমার কাজটি পাঠাই এবং নির্বাচিত হই। এরপর কর্মশালায়ও অংশ নিই। সেখানে একজন শিল্পী তাঁর কাজ নিয়ে কীভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে যাবেন, সেই পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। পরে আমি বিদেশি ১৯ শিল্পীর সঙ্গে নাইফার আরেকটি পাঁচ মাসব্যাপী অনুষ্ঠানে নির্বাচিত হই। এখানে আমার সঙ্গে যুক্ত হন নিউইয়র্কের খ্যাতনামা কনসেপচুয়াল ধারার শিল্পী স্কাই পেপ। তাঁর মতো অসাধারণ মনের মানুষ আমি কম দেখেছি। তাঁর সঙ্গে আমার যাত্রা ছিল অত্যন্ত আনন্দের এবং অনুপ্রেরণার। পরে এই প্রোগ্রামের শিল্পীদের কাছেই নাইফা আবারও নিউইয়র্ক লাইভ আর্টসের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য উন্মুক্তভাবে তাঁদের কাজ আহ্বান করে। এখানে আমি “মাইন্ডস্কেপ”সহ তিনটি কাজ জমা দিই এবং এবারও আমার কাজ নির্বাচিত হয়। এই নির্বাচনে তিনজন কিউরেটর কাজ করেছেন। প্রধান কিউরেটর ছিলেন ইরানের যাহরা বানিয়ামেরিয়ান।’

নিউইয়র্কের লাইভ আর্টস গ্যালারিতে নিজের চিত্রকর্মের সামনে লেখকের সঙ্গে বিপাশা হায়াত

এবার বিপাশার কাছে তাঁর কাজটি সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বলেন, ‘আমি খুব ছোটবেলা থেকেই ফাউন্ড অবজেক্ট দিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করতাম। আমার কাছে মনে হয়, পৃথিবীতে সবকিছুই অমূল্য। একটি ভালো ফিল্ম, ভালো গান বা ভালো বইয়ের মতোই। ফেলিনির লা স্ত্রাদা সিনেমায় তিনি বলেছেন, “একটা পাথর, যেটা আপনি পা দিয়ে ঠেলে চলে যাচ্ছেন, সেটারও গভীর মূল্য ও প্রয়োজনীয়তা আছে এই পৃথিবীতে।” একটা ঘাসফুলেরও তো জীবন আছে, তাই না? আমাদের পথশিশুরা রাস্তার পাশে শুয়ে থাকে। বেলুন বিক্রি করে, যে বেলুন দিয়ে খেলার সাধ ওদের নেই। অথচ ওদের ক্রিয়েটিভিটি আছে, ইন্টেলিজেন্স আছে।’

নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিপাশা আরও বলেন, ‘আমি সেই কাজ করতে পছন্দ করি, যা আমি চোখ বন্ধ করে দেখতে পাই, চোখ খুলে নয়। আর সেই অদেখা জগৎই মনোজগৎ। “মাইন্ডস্কেপ”-এর মাধ্যম হলো কার্ডবোর্ড, ক্যানভাস ও অন্যান্য। আমার এই সিরিজের কাজে আছে আমাদের সাবকনসাস, আনকনসাস মাইন্ড এবং স্মৃতির দেয়াল। যেখানে স্মৃতিগুলো প্রতিমুহূর্তে জমছে।’

এর আগে ঢাকার বেঙ্গল গ্যালারি, গ্যালারি চিত্রক, ঢাকা আর্ট সামিট ২০১৬ ছাড়াও নেদারল্যান্ডস, চীন, কোরিয়া, ইতালির বিভিন্ন গ্যালারিতে বিপাশার একক ও যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে। ‘মেমোয়ার ২০১৬’-এর জন্য ১৭তম এশিয়ান বিয়েনালে ‘অনারেবল মেনশন অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছেন তিনি।

সবশেষে তাঁর সাম্প্রতিক ব্যস্ততার কথা জানতে চাইলে বিপাশা বললেন, ‘এ মুহূর্তে আমি ভিজ্যুয়াল আর্টই চর্চা করছি। প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য পড়ছি। এ নিয়েই ব্যস্ততা। আর কাজের ফাঁকে সময় পেলে লেখালেখি করি।’