Thank you for trying Sticky AMP!!

নজরুলের অনশন ভাঙাতে অচিন্ত্যকুমারের অদ্ভুত কাণ্ড

কাজী নজরুল ইসলাম ও অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

কাজী নজরুল ইসলাম তখন আলীপুর জেল থেকে বদলি হয়ে এসেছেন হুগলি জেলে। এসেই শুরু করলেন আমরণ অনশন। এক দিন দুই দিন করে কয়েক সপ্তাহ কেটে গেল। কোনোভাবেই হাঙ্গার স্ট্রাইক ভাঙবেন না বিদ্রোহী কবি। তাঁর জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলো। অনশনের ২৮তম দিনে এসে সবাই পাকড়ে ধরলেন কল্লোল পত্রিকার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তকে। নজরুল তাঁকে খুব মানতেন। তাই সবাই ভাবলেন, অচিন্ত্যকুমার গেলে বিহিত একটা হবেই।

সবার অনুরোধে হুগলি জেলে গেলেন অচিন্ত্যকুমার, সঙ্গে ছিলেন বিখ্যাত লেখক পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়। কোনো অনুনয়-বিনয়ে কাজ হলো না, জেলের ফটক থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো তাঁদের। মনমরা হয়ে ফিরে আসছিলেন দুজন। জেলের পাশেই ছিল রেলস্টেশন। রেলের অপেক্ষা করতে করতে অচিন্ত্যকুমার দেখলেন, প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া জেলখানার পাঁচিল। সুযোগ বুঝে টপকাতে পারলেই নজরুলের কাছে পৌঁছাতে পারবেন তিনি।

ভেতরে ঢুকলে আর বেরোতে পারবেন না, এমনটা জেনেও এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন এ কারণে যে তাতে নজরুলকে তো অন্তত বাঁচানো যাবে, নিজের জেল হলে হোক। এমন পণ নিয়ে অচিন্ত্যকুমার এগিয়ে গেলেন পাঁচিলের ধারে। জনসমাগম কমার পর, ফাঁকা সময় পেয়ে সঙ্গী পবিত্রকে বললেন, ‘আমি তোমার কাঁধে বসছি, আমাকে কাঁধে নিয়ে তুমি উঠে দাঁড়ালে আমি লাফ দিয়ে পাঁচিলে উঠে যাব।’

কথামতো পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় অচিন্ত্যকুমার সেনকে কাঁধে তুললেন। আর যেই না অচিন্ত্যকুমার পাঁচিলে উঠলেন, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় দিলেন ভোঁ দৌড়। ওদিকে পাঁচিলে উঠে মহাবিপদে পড়লেন তিনি। আগে যে রকম ভেবেছিলেন লাফ দিয়ে পড়ে যাবেন, এখন উঠে দেখেন পাঁচিলের ওপারে গভীর পরিখা। লাফ দিলেই ঘটবে অঘটন। এদিকেও পাকা প্ল্যাটফর্মে লাফ দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। তাই দুই পা পাঁচিলের দুই দিকে ছড়িয়ে ভয়ে শিশুর মতো চেঁচামেচি শুরু করলেন অচিন্ত্যকুমার। তাঁর চিৎকারে পাঁচিলের দুই পাশে লোক জমে গেল। এক পাশে জেলখানার কয়েদি, অন্য পাশে প্ল্যাটফর্মের যাত্রীরা। এত বয়স্ক মানুষের এমন কাণ্ডে সবাই তো হেসে খুন।

ওই দিকে হুট করেই জেলের মাঠে থাকা নজরুলের দিকে চোখ গেল অচিন্ত্যকুমারের। এমন লঙ্কাকাণ্ডের মধ্যেও নজরুলকে ইশারায় অনশন ভাঙতে অনুরোধ জানালেন তিনি।

পুলিশ এসে নামিয়ে অচিন্ত্যকুমারকে জেলখানায় নিয়ে গেল। পরে গণ্যমান্য মানুষের অনুরোধে তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাঁর কথা রাখেননি নজরুল, অনশন তিনি চালিয়ে গিয়েছিলেন। ৪০ দিনের মাথায় মাতৃসম বিরাজসুন্দরীর স্নেহানুরোধে অনশন ভেঙেছিলেন কবি।

সূত্র: অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের কল্লোল যুগ

গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন