Thank you for trying Sticky AMP!!

গুরু যখন শিষ্যের ভূমিকায়

শিল্পী মলয় বালা

প্রাচীনকালে যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা ছিল না, মানুষকে তখন শিক্ষার জন্য গুরুর সন্ধান করতে হতো। শিক্ষাপ্রার্থীকে পাঠানো হতো গুরুর বাড়িতে। গুরুর সাহচর্যে নানা বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে পারলে সে নিজেও একদিন গুরুর আসনে অধিষ্ঠিত হতো। এই ছিল প্রাচীন ভারতবর্ষের শিক্ষার রীতি, যাকে ‘গুরু-শিষ্যপরম্পরা’ বলা হয়।

শিল্পী মলয় বালা তাঁর দুই শিষ্য শিল্পী জাহাঙ্গীর আলম ও অমিত নন্দীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় গড়ে তুলেছেন প্রাচ্য চিত্রকলা স্টুডিও। সেখানে তাঁরা গুরু-শিষ্যের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় ভক্তি ও ভালোবাসায় শিল্পচর্চার একটি পরিবেশ তৈরি করেছেন। এখানে গুরু যেমন শিষ্যকে দীক্ষা দেন, একইভাবে শিষ্যও গুরুকে প্রাণিত করেন সৃজনের নতুন নতুন পথের সন্ধান করতে।

শিল্পী অমিত নন্দী

সম্প্রতি এই শিল্পীত্রয়ের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে ‘গুরু-শিষ্য: শিষ্য-গুরু’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনী হয়ে গেল। এটি তাঁদের দ্বিতীয় আয়োজন। এতে তিন শিল্পীর সম্প্রতি আঁকা অর্ধশতাধিক চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। প্রকৃতির আবহে প্রতিকৃতিকেন্দ্রিক এই চিত্রগুলো প্রাচ্যকলার ঐতিহ্যবাহী জলধোয়া-জলরঙের প্রচলিত পদ্ধতিতে আঁকা।

প্রদর্শনীর প্রকাশনায় শিল্পীত্রয় কবুল করেছেন, তাঁদের ‘ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টুডিও’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ও শওকাতুজ্জামানের শিল্পমানস দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত।

এখানে প্রাচ্যকলার প্রচলিত পদ্ধতির খানিকটা বাইরে গিয়ে মলয় বালা জলরং ও গোয়াশ মাধ্যমে মুক্তভাবে বর্ণ প্রয়োগ করে কতক ছবি এঁকেছেন। এগুলোর শিরোনাম ‘বর্ষা খেয়াল’, ‘শিরোনামহীন’। এ ছাড়া গোয়াশে তিনি এঁকেছেন ‘মুখ নাকি মুখোশ’। এর ছয়টি অবয়বে নারী ও পুরুষের নানা রকম অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে। আবার মলয়ের শিষ্য জাহাঙ্গীর যেন এখানে গুরুর গুরু হয়ে উঠেছেন!

শিল্পী জাহাঙ্গীর আলম

জলধোয়া পদ্ধতিতে আঁকা অমিত নন্দীর কয়েকটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে এখানে, যার শিরোনাম ‘কিংবদন্তি কাহিনির ঐতিহ্য-৩৭ ও ৩৮’ ও ‘রাগ কেদার’। এ ছাড়া একই শিরোনামে তিনি প্রাচ্যরীতিতে কালো কালিতে অনেকগুলো চিত্র অঙ্কন করেছেন। এসব অঙ্কন কাগজে–কালিতে নন্দলাল বসুকৃত কতক চিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়।

চারুশিল্পে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিয়েও জাহাঙ্গীর আলম চিত্রপটে স্বতঃস্ফূর্ততায় জলরঙের পিগমেন্ট ছড়িয়ে মানুষের অবয়ব, বৃক্ষ, প্রকৃতি ও ফুলের ছবি এঁকে শিল্পী ও বোদ্ধাদের নজর কেড়েছেন। তিনি পেশায় সাংবাদিক। ‘যন্ত্রণার ফুল’, ‘রাতের গৌরব’, ‘বসন্তে বৃষ্টি’—এসব শিরোনামের চিত্রকর্মের পাশাপাশি এ িশল্পী উচ্চাঙ্গসংগীতের রাগ ও শাস্ত্রীয় নৃত্যধারা নিয়েও ছবি এঁকেছেন।

এই শিল্পীত্রয়ের চিত্রকর্ম ও তাঁদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হলো, তাঁরা প্রাচ্যরীতির শিল্পের বলয় বাড়ানোয় সচেষ্ট আছেন। প্রদর্শনীটি ২ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত চলেছে।