Thank you for trying Sticky AMP!!

দুষ্প্রাপ্য বইয়ের খোঁজে

দুষ্প্রাপ্য বা রেয়ার বই কোনগুলো? আমার সুহৃদ ছোট ভাই সেফাত সাহিদের বিশাল বইয়ের সংগ্রহ। তার মধ্যে আছে ‘লা মিজারেবল’–এর প্রথম এডিশন, ‘গডফাদার’–এর প্রথম এডিশন আর সম্প্রতি তার স্ত্রীকে দেওয়া হ্যাগার্ডের ‘শি’ আর ‘রিটার্ন অব শি’র প্রথম সংস্করণ। তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ফেসবুকে বিখ্যাত বইয়ের গ্রুপ ‘বইয়ের হাটে’। আমি তখন প্রচলিত বই ছেড়ে কিছুটা ই-বুক মানে পিডিএফের দিকে ঝুঁকে পড়েছি। সে পিডিএফের ঘোর বিরোধী, কাজেই লেগে গেল দুজনের মধ্যে। তুমুল ঝগড়ার এক পর্যায় তার কাছে ওয়েটজে কেউনিংয়ের ‘অশোকা দ্য গ্রেট’–এর কপি দেখলাম। কথায় কথায় বললাম, ‘এমন বই কি হাত দিয়ে নেড়ে দেখার সৌভাগ্য হবে?’ সে জবাব দিল, যদি সম্ভব হয় সে আমাকে এর একটা কপি উপহার দেবে, না হলে তার যেটা আছে সেটাই দিয়ে দেবে। ফেসবুকে পরিচয় আমাদের। কেউ কাউকে কখনো দেখিনি। ভাবলাম হয়তো কথার কথা বলছে। এর মধ্যে সে আমার কাছে থাকা কালিকারঞ্জন কানুনগোর ‘শাহজাদা দারাশুকো’, যে বইটা বাংলাদেশে খুব হয়তো দুষ্প্রাপ্য নয়, কিন্তু একেবারে সহজপ্রাপ্যও নয়, চেয়ে পাঠাল। আমার বই কাউকে দিতে খুব কষ্ট, তাও পাঠালাম। সে পড়ে ফেরতও পাঠাল।

দিন যায়, এক তীব্র শীতের সন্ধ্যায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে কল এল, তখন আমার পকেটটান চলছে। জানাই ছিল যে বইয়ের কোনো অর্ডার দিইনি। ভ্রু কুঁচকে উঠল।

তাও গেলাম। গিয়ে দেখি বেশ ঢাউস একটা পার্সেল অপেক্ষা করছে।
বাড়ি এসে, প্যাকেট খুলে প্রবল বিস্ময়ে দেখি ওয়েটজে কেউনিংয়ের ‘অশোকা দ্য গ্রেট’ আমার দিকে চেয়ে আছে। আর সঙ্গে একটা চিঠি, সেফাত সাহিদের চিঠি। লিখেছে: তার সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে এটা আমার জন্য সামান্য উপহার। আমি গ্রহণ করলে সে খুশি হবে। বইয়ের দাম বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। মামুলি ফেসবুকের পরিচয়ের সূত্রে কেউ যে কাউকে এত বড় উপহার দিতে পারে, এটা কখনো ভাবতে পারিনি আমি।

জীবনে অনেক উপহার পেয়েছি, কিন্তু সেদিন ওই যুবকের বিশাল হৃদয়ের পরিচয় পেয়ে চোখে পানি এসে গিয়েছিল। আরও পরে জেনেছিলাম, হার্ডকাভার একটি মাত্র কপি অবশিষ্ট ছিল আমাজনে। আর সেটারই গর্বিত মালিক আমি।

দুর্লভ বইয়ের আরও একটা গল্প বলি, ২০১৫ সালের কোনো সময়ে পড়ে শেষ করলাম বারীন্দ্রনাথ দাসের ‘মোগল দরবার’, বইটা পড়তে গিয়ে কেমন এক ঘোরের মধ্যে কাটালাম কয়েকটা দিন। অনেক দিন পর, দুর্দান্ত এই বই পড়ে টের পেলাম, আমার বইয়ের প্রিয় তালিকায় শীর্ষে উঠে গেছে এই বই।

এখন বলি এই মহার্ঘ বই পাওয়ার ঘটনা। বইটার কথা কিছু দুঁদে পাঠকের কাছে শুনেছিলাম। সবাই বলেছেন অসাধারণ এক বই। তখন থেকেই একটা অস্থিরতা মাথায় নিয়ে আছি, যে করেই হোক বইটা সংগ্রহ করে পড়তে হবে। একটা কপি আমার চাই। প্রথমে রকমারিকে জানালাম। এক মাস সময় নিল। কিন্তু এক মাস যাওয়ার পর ওদের ফোন পেলাম। দুঃসংবাদ। বইটা ইন্ডিয়ার কোনো দোকানে নেই। জানাল, বইটা অনেক দিন ধরেই আউট অব প্রিন্ট।

আমার অপেক্ষা বেড়ে যায়। আবার দিন কেটে দিন যায়। শাহবাগের তক্ষশিলায় খোঁজ নিলাম। কিছুদিন পর ওরাও জানাল, পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ওরা খোঁজ অব্যাহত রেখেছে।

দিন যায়, মনে মনে বইটার স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয় না। একপর্যায় পুরোনো বই কেনার সূত্রে পরিচয় হলো অজিত দাস নামের এক তরুণের সঙ্গে। তাকে জানাতেই ও জানাল, পিডিএফ থেকে বই করে দিতে পারবে। আমি তাতেই রাজি। পড়তে পারলেই হলো। সে পিডিএফ কি আর ফটোকপি কি!

তারপর আরও এক মাস কাটল। দেরি দেখে আমার সন্দেহের দোলাচল বেড়ে গেল। হায় পিডিএফও বুঝি জোটে না।

তারপর আচমকা একদিন খবর এল। অজিতের খবর। অজিত জানাল, বইটি পাঠানো হয়েছে কুরিয়ারে। শুরু হলো কুরিয়ারের ফোনের অপেক্ষা।

ঝকঝকে এক দুপুরে কাঙ্ক্ষিত ফোনটি এল সুন্দরবন কুরিয়ার থেকে।

প্রায় হুড়মুড় করে গিয়ে হাজির হলাম, উত্তেজনায় বাসা পর্যন্ত পৌঁছানোর তর সইল না।

বইয়ের প্যাকেট খুললাম আর দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে গেল। পেপারব্যাকের ফরম্যাটে, ঝকঝকে পাতায় ঝকঝকে প্রিন্টে আমার চির আকাঙ্ক্ষিত বই! তখন মুহূর্তে মনে হলো: হয়তো অরিজিনাল বই হলেও এর চেয়ে খুব ভালো হতো না। আগে হলে মন খুঁত খুঁত করত, অরিজিনাল কপির জন্য।

পাব না জেনে কপিকেই মেনে নিয়েছি।
আপাতত।