Thank you for trying Sticky AMP!!

নবাব সলিমুল্লাহ ও তাঁর সময়

সৈয়দ আবুল মকসুদ (২৩ অক্টোবর ১৯৪৬—২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। ছবি: খালেদ সরকার

‘কলাম লেখক’ পরিচয়ের আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়ার নয় সৈয়দ আবুল মকসুদের (১৯৪৬-২০২১) গবেষক পরিচয়। কারণ, তিনিই সেই বিরল গবেষকদের একজন, যাঁর হাতে প্রণীত হয়েছে মাওলানা ভাসানীর প্রামাণ্য জীবনী। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্​র জীবনের অজ্ঞাত তথ্য এবং বহু লুপ্ত রচনার উদ্ধারকারী তিনি। তাঁর চিন্তা ও চর্চার প্রধান ক্ষেত্র বাঙালি মুসলমান, পূর্ববঙ্গ ও ঢাকা। ‘বাঙালি জাতি বাঙালি মুসলমান ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর উৎস অনুসন্ধানের পাশাপাশি তিনি শনাক্ত করেছেন ‘বাঙালি মুসলমানের বুদ্ধিবৃত্তিক বিভ্রম’ও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের প্রাক্কালে ব্যক্তিগত আগ্রহে সম্পন্ন করেন তিনটি জাতীয় দায়িত্ব—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা, প্রথম উপাচার্য ফিলিপ হার্টগ ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল—এই বইগুচ্ছের মধ্য দিয়ে তিনি এ অঞ্চলের শিক্ষা শুধু নয়, সামাজিক ইতিহাসকেও মালাবদ্ধ করেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের প্রামাণ্য জীবনী নিয়ে সুদীর্ঘকালের গবেষণাটি প্রকাশের আগেই সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যু ঘটল। তবে আনন্দের খবর এই যে মৃত্যুর দিন কয়েক আগে প্রকাশিত হলো তাঁর শেষ বই নবাব সলিমুল্লাহ ও তাঁর সময়।

এ বই ২০২১ সালে সলিমুল্লাহ সার্ধশতজন্মবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি। এটি যেমন বাংলায় তাঁর প্রামাণ্য জীবনী, তেমনি ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ’, ‘বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন’ ও ‘সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা’ বিষয়বর্গ নিয়ে বিশদ আলোচনাও বটে।

নবাব সলিমুল্লাহর সময়

সৈয়দ আবুল মকসুদ

প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল, প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৩১২ পৃষ্ঠা,

দাম: ৫৫০ টাকা।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে: prothoma.com-সহ মানসম্মত বইয়ের দোকানে।

তিন শতাধিক পৃষ্ঠা-পরিসরে আলোচ্য বইয়ে ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ সলিমুল্লাহর পরিচিতির সঙ্গে ‘মুসলিম রাজনীতি’, ‘কংগ্রেস নেতাদের জয়, বাঙালির পরাজয়’, বহুবিধ কর্মকাণ্ড (নবাবের সমাজহিতৈষণা ও সাংস্কৃতিক প্রণোদনা), শিক্ষা (এ ক্ষেত্রে কালজয়ী অবদান), আন্তর্জাতিক বিষয়, প্রয়াণ এবং ‘নবাব ও বাঙালি সমাজ’ শীর্ষক বিশ্লেষণাত্মক অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

একই সঙ্গে ১৮৭১ সালে জন্মের পর বেড়ে ওঠার কালে নবাব পরিবারের রেখাচিত্রের পটভূমে স্বতন্ত্র সলিমুল্লাহ-মানসের গতিবিধিরও পর্যালোচনা আছে এখানে। যেমন, পিতার সঙ্গে সলিমুল্লাহর বিরোধ, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ এবং একপর্যায়ে নবাবি গ্রহণের ইতিবৃত্তের পর আসে বঙ্গভঙ্গ প্রসঙ্গ। বাংলার ইতিহাসের এক জটিল অধ্যায়ের বহু রটনা ও চলতি কথা আবুল মকসুদ সতথ্য ব্যাখ্যায় খারিজ করেছেন এখানে। বঙ্গভঙ্গের মতোই আলোচনায় এসেছে বঙ্গভঙ্গ রদ। অগুরুত্বপূর্ণ থাকেনি রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তিতে নবাবের প্রতিক্রিয়াও।

এতে এসেছে নবাবের বাংলা নববর্ষ, ঈদ, জন্মাষ্টমী, ক্রিসমাস উদ্​যাপন, দীনেশচন্দ্র সেন ও ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে পৃষ্ঠপোষকতা, ঢাকায় জাদুঘর প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগব্যবস্থার সংস্কার, নারীমুক্তিতে অবদান থেকে শুরু করে ভণ্ড পীরের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গও। শিক্ষাবিস্তারে, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সলিমুল্লাহর ঐতিহাসিক অবদান আলোচনা করে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবক ও উদ্যোক্তা হিসেবে নবাব সলিমুল্লাহকেই যে “প্রতিষ্ঠাতা” বলা হয়, সে স্বীকৃতি সরকার এবং দুই বাংলার হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিষ্টান প্রখ্যাত শিক্ষাবিদেরাই দিয়ে গেছেন।’

বইয়ের ‘মুখবন্ধ’তে লেখক জানান, ১৯৮৮ সালে মৃত্যুর আগে তাঁর পিতা তাঁকে সলিমুল্লাহর জীবনী লেখার অনুরোধ করেছিলেন। কী আশ্চর্য, বছর ৩২ পর সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা সলিমুল্লাহর জীবনীটি প্রকাশ পেল তাঁর নিজের মৃত্যুর অব্যবহিত আগে!