Thank you for trying Sticky AMP!!

বেলালের অনুভবে সুনীলের অবয়ব

বন্ধুত্ব হলো একে অপরের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক, সুখ-দুঃখে পাশে থাকা। কবি বেলাল চৌধুরীর প্রিয় সুনীলদা বইটি পড়তে গিয়ে কথাগুলো আরও বেশি করে মনে হলো। এই বাংলার বেলাল চৌধুরী আর ওপার বাংলার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়—তাঁদের বন্ধুত্ব ছিল অনেক বছরের। গত শতকের ষাটের দশকে যে বন্ধুত্বের শুরু, যে বন্ধুত্ব তাঁরা বহন করেছেন আমৃত্যু, তাঁদের সেই বন্ধুত্বকেই যেন ধারণ করে আছে প্রিয় সুনীলদা। এই বইয়ে বেলাল চৌধুরী লিখেছেন তাঁর ‘সুনীলদা’কে নিয়ে।

জীবনের নানা ঘটনার ঘনঘটায় তরুণ বেলাল চৌধুরীকে ঠাঁই নিতে হয় কলকাতায়। তত দিনে তিনি পড়ে ফেলেছেন দেশি-বিদেশি নানা সাহিত্যসহ কমলকুমার মজুমদারের অন্তর্জলী যাত্রা, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘কুয়োতলা’, সুনীলের ‘গল্প বাঘ’। আর ঢাকায় থাকতেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল কলকাতার চতুরঙ্গ, নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, পূর্বাশা প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে।

প্রিয় সুনীলদা

বেলাল চৌধুরী

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, প্রকাশকাল: নভেম্বর ২০২২, প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল, ১০৪ পৃষ্ঠা, দাম: ২৫০ টাকা।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে

prothoma.com এবং মানসম্মত
বইয়ের দোকানে।

১৯৬৩ সাল। ২৫ বছরের দুরন্ত যুবক বেলাল চৌধুরী কলকাতায় গেলেন। সেখানকার সাহিত্যজগতের মানুষের সঙ্গে শুরু হলো তাঁর নতুন জীবন। এক দশকের বেশি সময় কলকাতায় ছিলেন তিনি। এ নগরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মুগ্ধ করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। এভাবেই এই লেখকের সঙ্গে গাঁটছড়া হয়ে গেল বেলালের। একসঙ্গে সাহিত্য সম্পাদনার পাশাপাশি দেশ–বিদেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁরা ভ্রমণও করেছেন।

আত্মজীবনী অর্ধেক জীবন–এ সুনীল লেখেন, ‘কলকাতায় এক অজ্ঞাত কবরখানায় বেলাল যেভাবে দিন যাপন করেছে, তাতে মনে হয়েছে, এ ছেলে নিশ্চিত কোনো ছদ্মবেশী রাজকুমার।’ বেলাল চৌধুরীকে পাওয়া যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মপ্রকাশ দুই নারী হাতে তরবারি উপন্যাসে এবং কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গপত্রেও। একবার এক চিঠিতে বেলালকে নিয়ে সুনীলের ভাষ্য ছিল, ‘রাজদ্বারে এবং শ্মশানে যে সঙ্গে থাকে সেই প্রকৃত বন্ধু।’

প্রকৃতির কী নিয়ম! বেলাল যেমন সুনীলের জীবনব্যাপী ছিলেন, তেমনি বন্ধুর শবযাত্রার খাটও তিনি বহন করেছেন।

এ ক্ষেত্রে বেলাল চৌধুরীও কম যাননি, সুনীলকে নিয়ে তিনিও লিখেছেন বিস্তর। ‘কলকাতার মার্কাস স্কয়ারের বঙ্গ সংস্কৃতি’, ‘মাদারীপুরে বহুকাল পর বাবার বাড়িতে ফিরে আসা’—বেলালের এসব লেখায়, অনুভবে অন্য এক সুনীলের অবয়ব ফুটে ওঠে।

 প্রিয় সুনীলদা বইটি সুনীলকে নিয়ে বেলাল চৌধুরীর লেখা, স্মৃতিচারণা আর সাক্ষাৎকারের সংকলন। এই বইয়ে তাঁর চোখ দিয়ে আমরা দেখতে পাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। আবার অর্ধেক জীবন–এর বেলালসংশ্লিষ্ট অংশটুকু এতে সংযোজিত হওয়ায় ‘বাঙাল’–এ কবি সম্পর্কে ‘নীললোহিত’–এর দৃষ্টিভঙ্গিও এখানে পাওয়া যায়।

সব মিলিয়ে প্রিয় সুনীলদা শেষমেশ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও বেলাল চৌধুরীর এক অনন্য যুগলবন্দীই হয়ে ওঠে।