Thank you for trying Sticky AMP!!

মায়া শিয়াল

আজ ছাপা হলো ‘এসো গল্প লিখি ২০২২’ প্রতিযোগিতার দুই বিভাগের তৃতীয় স্থানজয়ী দুটি গল্প। অভিনন্দন, নাজিফা ও মুমতাহিনা! তোমরা পাচ্ছ ৩ হাজার টাকার করে বই। আগামী সংখ্যায় ছাপা হবে দ্বিতীয় স্থানজয়ী গল্প দুটি।

কিছুদিন ধরে ভীষণ অদ্ভুত আচরণ করছে আমার বন্ধু জামশেদ।

আজ সকালের ঘটনাটাই ধরা যাক। রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। রুমে হঠাৎ জামশেদ এল। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একই হলে থাকতাম। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে জামশেদ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। চাকরি খুঁজতে এখন আবার শহরে এসেছে। কাছেপিঠে আত্মীয়স্বজন না থাকায় আমার বাসাতেই উঠেছে। ছোটখাটো একটা বাসাও অবশ্য খুঁজছে।

যাহোক, জামশেদ কোনো ভণিতা না করে বলল, ‘আমরা কি একটা শিয়াল পালতে পারি?’

খুব মনোযোগ দিয়ে একটা কাজ করছিলাম। প্রথমবারে কথাটা তাই বুঝতে পারলাম না। অন্যমনস্কভাবে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী বললি?’

‘একটা শিয়াল পাললে কেমন হয়?’

প্রস্তাব শুনে আমি অবাক, ‘কী বললি?’

আমার মুখের ভাবেই বুঝে গেল জামশেদ, হতাশ ভঙ্গিতে বলল, ‘আমার নিজের বাসা হলে অবশ্যই পালতাম।’

কথা এখানেই শেষ হয়ে গেল। ও রুম থেকে চলে গেল।

কয়েক দিন পরের কথা। এর মধ্যেই একটা চাকরি জুটিয়ে নিয়েছে জামশেদ। বাইরে থেকে এক দিন ফিরে দেখি ড্রইংরুমে অপরিচিত এক লোকের সঙ্গে বসে গল্প করছে জামশেদ। ও থাকে ওর মতো, আমি আমার মতো, ওদের আর তাই ঘাঁটালাম না।

কিছুক্ষণ পর লোকটাকে নিয়ে আমার ঘরে এল জামশেদ। লোকটার গা থেকে বুনো একটা গন্ধ আসছে।

জামশেদ গলা পরিষ্কার করে বলল, ‘ইনি একজন অভিযাত্রী, বনে–বাদাড়ে ঘুরে বেড়ান। পশুপাখিদের সঙ্গে টিকে থাকার চেষ্টা করেন। ওদের সঙ্গে ওদের পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন।’

‘আচ্ছা। তো কোনো কাজে এসেছেন?’ জিজ্ঞেস করলাম।

জামশেদের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, ‘শিয়াল...মানে শিয়াল কীভাবে বাঁচে, কীভাবে শিকার করে কিংবা...’ ইতস্তত করতে লাগল জামশেদ।

‘কিংবা কী?’

‘কিংবা মানুষের সঙ্গে শিয়ালের বসবাসের উপায় কী, এসব তিনি খুব ভালো জানেন।’

জামশেদের কথাবার্তা শুনে বুঝলাম, ওর আবার শিয়াল পালার শখ জেগেছে। পাগলামি ছাড়া আর কী!

তবে দিন দিন জামশেদের কর্মকাণ্ড দেখে বিষয়টাকে আমার আর নিছক পাগলামি বলে বিশ্বাস করতে মন চাইল না। মনে একটা সন্দেহ দানা বাঁধল। ওর ওপর রীতিমতো গোয়েন্দাগিরি শুরু করলাম। ও কোথাও গেলে ওদিকে আমারও কাজ আছে বলে সঙ্গে যেতে শুরু করলাম। আমার রুমে ইন্টারনেট কানেকশন পাচ্ছি না বলে ওর রুমে গিয়ে কাজ করতে লাগলাম। সবচেয়ে বেশি যেটা করলাম, সেটা হলো ওর সঙ্গে গল্প। গল্পে গল্পে অনেক কথাই বলে ফেলল জামশেদ। এই যেমন একদিন বলল, ‘শিয়াল প্রাণীটা আমার খুব পছন্দ...প্রায়ই দেখা হয় শিয়ালের সঙ্গে।’ নিতান্তই আপনমনে বলা কথা। সঙ্গে সঙ্গে সচেতন হয়ে বলল, ‘মানে...স্বপ্নে দেখা হয় আরকি।’ স্বাভাবিকভাবেই ওর প্রতি আমার সন্দেহ আরও বেড়ে গেল।

একদিন রাতে শুনি ওর রুম থেকে অদ্ভুত আওয়াজ আসছে। পা টিপে টিপে ওর রুমের দিকে গেলাম। দরজাটা খোলা। ভেতরে উঁকি দিতেই আমার হাত–পা ঠান্ডা!

খাটের এক কোনায় বসে আছে জামশেদ। আর ওর পায়ের কাছে মেঝেতে বসে আছে একটা শিয়াল! শিয়ালটার গা খাঁজকাটা খাঁজকাটা। দেখেই গা–টা শিরশিরিয়ে উঠল। জামশেদ শিয়ালটার ঘাড়, মাথা আর গলায় হাত বুলিয়ে আদর করছে। মাঝেমধ্যে শিয়ালটার কানের কাছে মুখ নিয়ে কী যেন বলছে ফিসফিস করে!

শিয়ালটা হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল! চোখ দুটো লালাভ। অবশ্য মুহূর্তেই রংটা বদলে গেল। চোখ দুটো এখন কেমন যেন নীলচে। সত্যিই কি তা–ই? নাকি ভুল দেখছি? পলক না ফেলে একদৃষ্টে শিয়ালটার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। আর কোথাও চোখ ফেরাতে পারছি না। সময় যেন থমকে আছে। হঠাৎ মনে হলো, শিয়ালের ওই চোখজোড়া আমাকে অন্য ভুবনে নিয়ে যাচ্ছে! শিয়ালটাকেও আর ভয়ংকর লাগছে না, বরং মনে হচ্ছে খুবই মায়াকাড়া।

আর তখনই হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা বাসায় একটা শিয়াল পাললে কেমন হয়!