Thank you for trying Sticky AMP!!

অন্তঃসলিলা হে

তুমি যেই নদী হয়ে গেলে

ঘনঘোর রক্তগোধূলিতে

ঢেউয়ে ঢেউয়ে মরণচিৎকার

আমাদের ত্রস্তপৃথিবীতে।


আমি তো উজালা আলোকণা

দুহাতে ভরেছি পথপারে

পালে পাল ছায়া পাশ কেটে

চলে গেল রাঙা অন্ধকারে।


তুমি যেই ডেকে নিলে মদে

তন্দ্রাহরণের ঘন বন

তখনো আমার চেতনায়

মৃতবৎ কেঁদেছিল মন।

জগতে তখন, তত দিনে

অনন্ত অনাথ-হাহাকার

দশ দিগন্তের পাড় ছিঁড়ে

হারিয়েছে কূল দরিয়ার।


মনে করি, কোন সে প্রহর

আমরা রচনা করি ভুলে

মৌন প্রহেলিকা জোনাকির

ফুটি ছলনয়নের ফুলে।


তুমি তো কুড়ানি ছিলে, পথে

সময়ের ফেলে যাওয়া কুঁড়ি

বেঁধেছ আঁচলে, কবে জল

নেমে আসে বৃথা অন্ত্যউড়ি।


বিকশিত অঙ্গলতিকায়

স্বপ্নদোলা মিথ্যা ভালোবাসা

কারে ডাকো, কে গাঁথবে মালা

সমুদ্র-আগ্রাসী হে পিপাসা।

যে তরঙ্গ তোলে বিষফণা

তোমার মাথায়, চুমু খাব

ভুলে, আর, তখনি গোধূলি-

চূর্ণরংযোনিতে হারাব।


আকণ্ঠ কামনা এ জীবন

থরথর প্রচল উত্থান

সীমাভাঙা সাদাঘোড়াপাল

রঙে-বেগে কী দুরন্ত গান।


একটি কলি ঝরে পড়ে আলে

আরেকটি জমিনে তড়পায়

কোথায় লুটানো পরাজয়

তোলে মুখ উজানো বর্শায়।


পেয়েছ কি তেমন সংকেত

বেজেছে কি গোধূলিসংগীতে

আবারও সন্ধ্যায় লুকোচুরি

আলেয়ার তাতানো ইঙ্গিতে।


ওহো, কী অনর্থ, পরশন

ত্বকে ত্বকে মরহিমবাহ

আবার কবরে হবে যেতে

অবারও অনন্তধূপ-দাহ।


দেখোনি হে সখী অনিমিখে

তুমি আমি আধা ছায়াকায়া

আধো রূপ খেয়েছে শ্বাপদ

আধো নাঙ্গা নখর বেহায়া।


তবু বোনো ভাষাবেলোয়াড়ি

শ্রুতিহীন ধ্বনির মর্মর

গোধূলি অরণ্য হৃদিরাগ

টুঁটিচাপা বিমনা ভ্রমর।


মিথ্যা এ সাঁজোয়া না-সময়

না-প্রেম না-মানুষি আভরণ

তারও চেয়ে নদী হলে ভালো

বিবসনা স্রোতসন্তরণ!

সেই ভেবে যেই তুমি নদী

ঝড় আনল সে চিরদরদি

সকল সম্ভাবনার পাড়

ভাঙে ওড়ে, ভাসে তবু যদি


বইঠার আঁচড়ে সরে পড়ে

জল’পরে ভাসা দাঁড়িকমা

মেঘে মেঘে বিজুলি পাগলি

করে হাস্যে মরণতরজমা।


তখনো নিকটে দুনিয়ায়

হন্তারক হাজারে হাজার

ছুরিতে গুলিতে মত্ত, কত

বসে প্রাণ-বিকানো বাজার।


কথাচ্ছলে খেলারোলে ভুলে

তখনো থামেনি জেনো খুন

শুধু আমরা বেঁচে গেছি আড়ে

শুধু তুমি জ্বলন্ত উনুন,


পোড়াবে নিশ্চল হিমাকাশ

নিথর বসন্ত, নিরর্থক

হাহুতাশ, নীরব বিদ্রোহ

প্রস্তর নয়ন নিষ্পলক


বসে গেছে জীবন-উৎসব

তরঙ্গে ফেনায় স্রোতে জলে

চিরগোধূলির লালিমায়

সুসময় তখন উচ্ছলে


আমাদের ক্ষুব্ধ দরিয়ায়

তটে তট ভাঙাচোরা খেলা

সন্ধ্যা নাই রাত্রি নাই সখী

বাজুবন্ধে আটকে থাকে বেলা


দুনিয়া হিসাব করে কত

রক্ত গেল, ঝরে পড়ল আয়ু

কত ছিন্ন হলো ধড়, বাহু

ফুরালো আড়ালে প্রাণবায়ু


আমরাও হয়তো অনেক

আগেই গিয়েছি ঝরে, নয়

ঝুলে আছি অশ্বত্থশাখায়

হয়তো প্রেতেরই অভিনয়


হা হা, হতে পারে, কী–বা তাতে

তুমি যে এখন নদী, বও

যুগলমন্থনে নয়া গীত

নয়া জন্মরূপকথা কও


শুনি আমি, শুনি আমি, কও

শুনি

আমি

কও...