কবিতা
মাসুদুজ্জামান
মায়াস্পর্শ
ফিরে গেলে কোন শহরের রৌদ্রগন্ধ কুসুমবনে
বকুলঘ্রাণে জড়িয়ে ছিলাম তোমার শরীর ত্বকে
চুলখোলা পৃথিবীপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে দৌড়ে গেছি
ঈর্ষাকাতর জিবগুলি তখনো লকলক করছিল
ও আমার নির্জন রক্তজবা ও আমার ধরিত্রীবধূ
স্বপ্ন আর চুমুতে এখনো কি মিশে আছ তুমি?
তোমার কবিতার পাণ্ডুলিপি ডানায় জড়িয়ে
একটা শালিক একদিন আমাকে পৌঁছে দিয়ে
বলেছিল, এ হলো রক্তপুঁথি হৃদয়কাহন গল্পস্বল্প
দুটি শিশুর ভ্রুণ এখানে অক্ষরে অক্ষরে সুপ্ত
এই কবিতা মিথুনমিশ্রিত স্বেদ আর নুনে তৈরি
এর প্রতিটি পঙ্ক্তিতে লেখা আছে লেলিহান
গোধূলির সোনালি পালক আর ধানের কুহক
প্রথম যেদিন এসেছিলে আরক্ত রক্তজবার রং
শাশ্বত নারীর অতৃপ্ত বাসনারা প্রজাপতি হয়ে
উড়ছিল, বুঝি কোনো মায়াভ্রমর যতিচিহ্নহীন
ঘুরে ঘুরে খুঁজছিল আরেক মায়াশরীরের স্পর্শ
কুশল ইশতিয়াক
পরিচয়
কোনো এক প্রাচীন পাথরে তোমার
মুখ খুঁজে পাওয়া যায়। বুঝতে পারি,
কোনো মিল নয়—এ মুখ তোমার।
ভাবি, একটি জীবন কাটিয়েছ পূর্বে,
কারও সাথে বুঝি প্রেম ছিল, সংসার।
আশ্চর্য ব্যাপার, আমিও ভেবেছিলাম
মনে মনে, পাথরে আঁকব তোমাকে।
অনেক অনেক দিন পরে কেউ খুঁজে
পাবে। ভাবতে থাকবে, কারও সাথে
তোমার প্রেম ছিল, সংসার...
জহির হাসান
আমি মেয়েদেরতে দূরে দূরে থাকি
কেউ ভালোবাসি কয়ে যদি স্পর্শ করি বসে ফের!
ফলে আমি যদি ফের হলুদ কুটুম পাখি হই যাই!
আমি যদি ফের মানুষ
হওয়ার কথা পুরাই ভুলি যাই!
আমারে যদি ফের বহুকাল জংলায়
গাছে গাছে
কাটাইতে হয়!
অসহ্য আকাশের ভাঁওতা বিস্তার
আমারে ফের ফাঁস করতেই হয় যদি!
আমি মেয়েদেরতে দূরে দূরে থাকি!
উপল বড়ুয়া
শুক্রবার
প্রতিটা শুক্রবার আসে এক বৃহদাকার
ডানাওয়ালা ঘোড়ায় চড়ে
তারপর তারা মুখের ভেতর গলে যায়
হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো।
শুক্রবারের মানুষ সিনেমা দেখে,
প্রেমিকার পাশে শুয়ে থাকে একা
শিশুরা খেলে যেহেতু তাদের বন্ধের দিন এবং
ভুলে যায় রূপকথা
বৃহদাকার সেই থুত্থুড়ে ডানাওয়ালা
ঘোড়া নিঃসঙ্গ ঘাস খায় মাঠে
সন্ধ্যায় ফের শুক্রবারকে পিঠে তুলে
উড়ে যায় আরেক দেশে।
এভাবে সে প্রতিটি ভ্রমণে তোমাদের জন্য
আনে রংবেরঙের ছুটি।
অনামিকা তাবাসসুম
অস্পষ্ট দুরবিন
অস্পষ্ট দুরবিন
ফিরিয়ে দেয় প্রতিবিম্ব
দেখা হয় না হাড়ের ভেতর
কুণ্ডলী পাকায়
কতটা খড়কুটো। কতটা ম্লানমুখী গোধূলি
ক্রমশ ক্ষয়ে যায় নাইলনের দিন
দেখা হয় না বুকের ভেতর
কতটা বিঁধে আছে শেষ বড়শির ছিপ।