Thank you for trying Sticky AMP!!

শবনম

বেলারুশ বিকেল। শরিফা ডালে লাফানো আরেকটা চড়ুই তোমার কথা মনে করিয়ে দিল, শবনম।

সেদিন আমরা বিলের ধারে বসেছিলাম, শরিফা খেতে খেতে হেসেছিলাম প্রচুর। জলের ওপর জোড়া পাখি ছিলো চুম্বনরত। নরম হওয়া আলোর ভেতর আমরা দেখছিলাম সেই অপূর্ব দৃশ্য।
বিকেল মানেই বিষণ্ণতার খাদ। মরে যাবার আগের রুগ্ণতা। গহিন-গহুরে পিছলে পড়েছি, উঠতে পারছি না। ওই তো দূর হতে ঘনিয়ে আসছে নিঃশব্দ সন্ধ্যা। পাখিরা পালক ফেরি করে ডেরায় ফিরতে দিয়েছে উড়াল। বুকের বাঁ পাশে চিনচিন ব্যথা নিয়ে—ধীরে—পৃথিবী ঢুকে পড়ছে গ্লোমি-গ্রাভস।

***
শবনম, ভাবো সেই সন্ধ্যাটির কথা, যখন
গোধূলির ভেতর দিয়ে হেঁটে আসছিল
লাঙল কাঁধে একজন মাঠের কবি, যিনি
মটির গর্ভ খুঁড়ে ফলান সোনালি শস্য
বলদ জোড়া তার সম্মুখে চলছিল
দৃশ্যে চারিদিকে তখন আঁধার
হাতির পালের মতো বুনো, নামছিল
সেই আলোতে সব ডুবে যাচ্ছিল
ভাটির বনে কত জোনাক জ্বলছিল
ভূতের মতো দাঁড়েয়ে ছিল সুপারির বন
আর সেই সন্ধ্যা ও ঘনিয়ে আসা
অন্ধকারের ভেতর
আমরা সজনেতলায় কুড়াচ্ছিলাম
ভাতের মতন সাদা সাদা ফুল,
যাদের মুখ হীরার মতন ভীষণ দ্যুতিময়—
দুজনার আজলায় তখন শুভ্রতার উৎসব
দুজনার মনের গহিনে আনাবিল আনন্দ লহর
শবনম, ভাবো সেই সময়ের কথা
যখন রচিত হলো এক অমর ইতিহাস
যখন রচিত হলো সময়ের শ্রেষ্ঠ কাব্য
যখন আঁজলাভরা দ্যুতিময় হিরের ফুল
তুলে ধরলে সম্মুখে আমার
আর উচ্চারণ করলে সেই শাশ্বত বোল—
'ভালোবাসি'

***
অনিমেষ এসব তাকিয়ে থাকা একদিন ফুরিয়ে যাবে!
এই সব সনাতন রোদ, সুবিমল বাতাসের ঘ্রাণ;
জল ও জোছনার ঢেউ যাবে মুছে—
আমাকে পাবে না আর সমুদ্র, ঝাউয়ের বন,
আমাকে পাবে না ভেনাসগামী বিদায়ী জাহাজ,
পাবে না বিকট হুইসেল—মাস্তলে, হাওয়ার সঙ্গমের ভেতর
একাকী দাঁড়িয়ে থাকা বিষণ্ণ কাপ্তান—
পাথর কুচির মতো দুচোখ শুধু ডুবে যাবে অতলান্তে—
তখন সাধের স্বপ্নেরা সব কোথায় রবে!
আলোর মতো যখন সমস্ত অন্ধকারও ফুরাবে!
আঙুল থেকে আঙুলের গিঁট যাবে সরে,
তোমার কণ্ঠ থেকে সমস্ত গান অজান্তে মেলাবে—
হয়তো দুপুর ডালে ঘুঘুর প্লেব্যাক বেজেই যাবে;
হয়তো ভাতঘুমে তোমাদের বেডরুম জবজবে ভীষণ—
জলের কিনারে নিমগ্ন মাছরাঙা পাখিটির ধ্যান কি রবে তখন!

অনিমেষ এসব তাকিয়ে থাকা একদিন ফুরাবে যখন—
শিল্পকলা, থিয়েটার, থাকবে না
হবেনা আর কবিতা লেখা কোনো দিন,
প্রেমিকার বিরহে রাত জাগা থাকবে না,
অন্যমনস্ক চোখে নক্ষত্রেরা আর জ্বলবে না,
অনর্থক ভুল-বোঝাবুঝি, মান-অভিমান
যাবে ঘুচে—চুমু ও সঙ্গমও নিষ্প্রয়োজন !

অনিমেষ এসব তাকিয়ে থাকা ফুরিয়ে গেলে—
তোমাকে আর মনে পড়বে না বনগ্রাম,
তোমাকে আর মনে পড়বে না সিরাজপুরের হাওড়,
তোমাকে আর মনে পড়বে না রেলস্টেশন,
তোমাকে আর মনে পড়বে না রেইনফল,
রঙ্গন, তোমাকে আর মনে পড়বে না—
পৃথিবীর সব রেখা যাবে মুছে; পোড়াবে না
গুঁজে রাখা বুকের মাঝে স্মৃতির দহন।
মায়ের সুবর্ণ-মুখ মনে পড়বে না আর,
সব প্রেম মৃত ঘাস হবে,
মরা ফড়িঙের ডানার মতো মাটিতে লুটাবে অথবা
ছাই হয়ে হাওয়ায় অন্তর্হিত অদৃশ্য ঘূর্ণন—
শুধু অবাক দীর্ঘশ্বাস থাকবে পড়ে চেনাজানা মলিন উঠোন!

অনিমেষ এসব তাকিয়ে থাকা গত হলে—
কোনো দিন পাব না আর সোনালু, হিজলের মৌসুম!
ডাহুকের ডাক থেকে বহুদূর পড়ে রবে অচল জীবন!
শবনম, আমাকে না পেয়ে অন্য বুকে ঝিনুক কুড়াবে তখন!