Thank you for trying Sticky AMP!!

শারদীয় পদাবলি

অলংকরণ: সাব্যসাচী মিস্ত্রী

মহাদেব সাহা
শরৎ 

কাশবনে শরৎ নেই, শরৎ আমার মনে
আমি তাকে প্রথম দেখি ভাদ্রের বর্ষণে,
উছলে পড়ে জ্যোৎস্না জলে, নৃত্য করে চাঁদ
তারই জন্য আমার এই ব্যাকুল সেরেনাদ;
উঠানভরা শারদশশী আমায় বলে—আয়
ভালোবাসার পাঠ নিয়েছি শারদ–পূর্ণিমায়,
সেই শরতের গন্ধে আমি এমন দিশেহারা
দুচোখ ভরে ফোটে আমার হাজার রাতের তারা;
এই শরতে তোমার চোখে শিউলিফোটা ভোর
শারদনিশির ডাকে আমি ছেড়েছি ঘরদোর।

শরৎ তোমার মিষ্টি হাতের পরশ যদি পাই
সহস্র রাত জেগে থাকি, আনন্দে গান গাই,
শরৎ তোমায় কিনেছি যে চোখের জলের দামে
ভালোবাসার হলুদ চিঠি পাঠাই নীল খামে,
কাশবনে শরৎ নেই, শরৎ আমার মনে
শরৎ তোমায় বেধে রাখি জন্মের বন্ধনে।

মিনার মনসুর
বালিকাদের ব্যালে নৃত্য 

যদি বলি অন্ধকার—তারা নেই মিথ্যে বলা হবে।
শিশুটি হাসে। শিশুটি আজও হাসে। কামরাঙা মেয়েটি ঠিক বাড়িয়ে দেয় তার ভেজা ঠোঁট। তখনই তিমির জটিল জঠর ফুঁড়ে তারারা ফোটে আর প্লাস্টিকের বাগানজুড়ে চলতে থাকে নেত্রকোনানিবাসী গুণমুগ্ধ শুভ্রবসনা বালিকাদের ব্যালে নৃত্য। তুমি চাও বা না চাও।
এদিকে আমাজনভুক একটি প্লাস্টিকের দানব টপাটপ গিলে খাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ষড়বর্ণ যত গান আর কাজলা দিদির বিখ্যাত সেই বাঁশবাগান। তার মাথার ওপর বেমক্কা ঝুলে থাকা চাঁদটিকে নিয়ে শিশুরা বড় আতঙ্কে আছে। তুমি মানো বা না মানো।

কামরুজ্জামান কামু
শরৎ 

কার্যকারণের মতো এ জীবনের
গভীরে ডুব দিয়ে, পাখি
পেয়েছ নীল আকাশ, ডানার উদ্ভাস
দুইটি অবারিত আঁখি

এই যে ব্রিজ থেকে ওই যে কাশবন
শরৎ এল নাকি বেলা
আহা কী সুন্দর নদীর দুই তীর
নামো না করো না গো খেলা

উতলা এ হৃদয় এখানে ব্রিজপারে
যদি বা রেখে যাই কভু
খেলতে এসে তাহা গোপনে তুলে নিয়ে
আবার ফেলে দিয়ো, প্রভু

শিহাব সরকার
অচেনা 

বৃষ্টি ঝরে, ঝরেই চলেছে সকালে-সন্ধ্যায়
ঝরুক না অঝোরে আরও কিছুকাল,
আমার এখন শরতে ভয়
নির্মেঘ আকাশের রৌদ্রে ভয়
তবু ভুলে বেরিয়ে পড়ি, আমার শ্বাসকষ্ট

তেলরঙে, জলরঙে, স্কেচে পোর্ট্রেটে,
মারদাঙ্গা বায়োস্কোপ ছেড়ে আমি ঢুকেছিলাম
আলোছায়া নাকি অন্ধকার-পাতাল গ্যালারিতে
বেরোতে চাইনি আর কোনো বসন্তমেলায়।

ভোর থেকে নতুন রৌদ্রের পাখি ও পতঙ্গেরা
ডেকে যাচ্ছে নিরবধি। আহা, কত কত ফুল
মাটির সোঁদাগন্ধ আসছে নদীতীর থেকে,
দরজা খুলি যেন রৌদ্রে নিশি-পাওয়া

কেউ চেনে না আমাকে, অশ্রুসমুদ্র সাঁতরে
পাড়ে এলে মানুষ মানুষের অচেনা।

মারজুক রাসেল
শরতের কাজকাম 

ইংলিশ প্যান্ট আর স্যান্ডো পরে শরৎ—গায়ে রোদ ছায়া ঘাম অন্ধকার শুকায়—শিউলি ফোটায়, ঝরায়—তাল পাকায়—সাদা ড্রেস—কাশ ফুল—মেয়েদের—ইশকুল ছুটি দেয়—পাখির বাসা ভাঙা না-ভাঙার দ্বন্দ্বে ভোগে—‘দুইটা কুকুর দুই দিকে মুখ, একটা চতুর্পাশে’—আরতিতে নাচে—সূর্য ডোবার শব্দ শোনায় প্রতিমা ডোবার অনেক আগে—ধূপগন্ধ—মেঘফুল শোঁকার পর হাতের তরল জ্যোৎস্না মোছে নারকেলগাছ।

রুবী রহমান
শরৎকালের কবিতা একখানা

আলতাফ তো চেয়েই বসে আছে
শরৎকালের কবিতা একখানা
চলতে–ফিরতে কত হুলুস্থুল
সেসব কথা কারুর তো নেই জানা

শরৎ এল আলোর ভেলায় ভেসে
শিউলিতলা গন্ধে ম–ম করা
সাদা ফুলে জাফরান রং বোঁটা
যেনবা সে আলোর সহদোরা

এত আলোর মধ্যে তবু দেখি
ছায়ার মতো মেঘ জমেছে মনে
কেউ যে নেই তা ধ্রুব সত্য বলে
বিফলতা জাগছে ঈশান কোণে

আলতাফকে বলছি সংগোপনে
সংসারে নেই ঝুট–ঝামেলার শেষ
শরৎ–আলোয় জীবন যদি ভাসে
ভাসিয়ে দিয়ো। স্বপ্ন যে অশেষ

শামসেত তাবরেজী
শারদীয়

একবার বাইরে আসো, ওহে, ও গোপন
দেখে যাও বহির-উঠানে ছায়া নাশ করছে সকাল,
ওপরে নিমের ডাল এ বুঝি তারি কারসাজি
কামিনেরা কাজে গেছে, আপু, তুমি দেখিছ স্বপন!

বল্লাল সেনের বাড়ি, মাটি খুঁড়ে হয়েছে প্রকাশ
সাত পল্লা আকাশ হচ্ছে সাড়ে সাত শ নিরাকার ঢেউ,
কী করো ভিতরে তবে? বাচ্চারা নাচছে উঠানে
এ রকমই রবে কি শরৎ, যতক্ষণ না পড়ে আরও কটি লাশ!

পিয়াস মজিদ
রক্তশোভা শরৎ

আমারও শরৎ ছিল;
শেফালির স্তূপ, কাশের গুচ্ছ
আর আলোর অরুণ।
বড় হতে গিয়ে মানুষ যেভাবে
গলা টিপে হত্যা করে
তার ভেতরের সরল শরৎ,
এভাবে আমিও
অলীক সুগার স্ট্রিটে
হাঁটতে গিয়ে দেখি
হারিয়ে ফেলেছি
জীবনের জরুরি সব
বিষাক্ত লাবণি।
অথচ আমার ভেতরবাড়ির মাঠেও
হাঁক দিত
অপু ও দুর্গার শারদীয়া ফেরিঅলা,
সন্দেশ, তিলগজা, বাতাসা...।
আবারও শরৎ এল,
এইবার জীবনের
ঋতুহীন যত জটিল অর্জন
খুন করে, লাল রক্তমাখা আমি
অপু ও দুর্গার সাথে ছুটতে থাকব
মহাপৃথিবীর শারদীয় মাঠে;
একরত্তি সাদা বাতাসার দিকে।