Thank you for trying Sticky AMP!!

আজ আকাশে চাঁদ দেখা দেওয়ার আগে

মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। হাতিরঝিল, ঢাকা, ৩ জুন ২০২০ ছবি: লেখক

আজ বিকেলে ঢাকায় এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। ভারতে 'নিসর্গ' ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেতে পেতে এখানে পাতলা ফিনফিনে সাদা শাড়ির মতো জলধারা। সেই শাড়ির আবছায়া ভেদ করে দিব্যি রোদ মাথা গলিয়ে কাঁচের জানালায় জ্বলে ওঠে। গলির মাথায় তখনো বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছিল শ্রমিকেরা। আর ছাতা মাথায় হঠাৎ হঠাৎ কেউ তাদের পেরিয়ে বাড়ি ফিরছিল। আমিও গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাতে বৃষ্টির ছোঁয়া নিচ্ছিলাম। এমন বৃষ্টিতে নাকি অভিশাপ কেটে যায়।

যত দূর দেখা যায় আশেপাশের সবগুলো বহুতল বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ।এমনভাবে বন্ধ যেন বহুদিন ওগুলোতে কোনো মানুষের হাত পড়েনি। আমার মতোই এ-ঘর থেকে ও-ঘর, এ-ঘর থেকে ও-ঘর--এই হলো দিনপঞ্জি। একসময় সন্ধ্যা নামল, মসজিদ থেকে প্রার্থনার আহ্বান নিয়ে। জহির রায়হানের ভাষায় প্রতিদিন এখন নামে, 'হাজার বছরের পুরনো সেই রাত।' এই দুমাসে যেন একই রকম প্রতিটি রাত। একরকম নিঃসাড়, মুখস্ত। কেবল সুন্দর প্রতিদিন ঢাকার বাতাস।

>জহির রায়হানের ভাষায় প্রতিদিন এখন নামে, 'হাজার বছরের পুরনো সেই রাত।' এই দুমাসে যেন একই রকম প্রতিটি রাত। একরকম নিঃসাড়, মুখস্ত। কেবল সুন্দর প্রতিদিন ঢাকার বাতাস।

আর একমাত্র সরব মোবাইলের স্ক্রিনের জমাট বিতর্ক। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন, ভারতে হাতির মৃত্যু কিংবা সদ্য বানানো খাবারের ছবি অথবা হঠাৎ হঠাৎ টুপ করে স্ক্রিনে ভেসে আসা কারও কারও অনেক দিনের শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখ। আচ্ছা, শ্মশ্রুমণ্ডিত বানানটা কি ঠিক আছে? তারিখের মতো এসব ব্যাপারেও আজকাল দ্বিধা জন্মাচ্ছে। কোথাও কোথাও আজ ঝিলিক দিয়ে উঠছে উজ্জ্বল চোখের কাফকার ছবি। আজ তাঁর ছিয়ানব্বইতম মৃত্যুদিন। এই সময়টাকে কাফকা কীভাবে আঁকতেন? গ্রেগর সামসার মতো আমাদের রাত্রিদিনগুলোকে? ঘুম থেকে উঠে নিজেকেও কি একইরকম লাগে না? ওই তেলাপোকাটার থেকেও ছোট এই পরিসর। আবার অনেক দিন পর সামসার মতোই ধ্যানমগ্নতার সময়।

এইসবের তল খুঁজে পেতে না পেতে আমার পাঁচ বছরের কন্যা হঠাৎ দৌড়ে এসে উত্তেজিত স্বরে বলল, 'দ্যাখো, দ্যাখো, বারান্দায় এসে দ্যাখো! চাঁদ উঠেছে! চাঁদ উঠেছে!' আমি দৌড়ে গেলাম। বারান্দায় মিহি ঠান্ডা একটা বাতাস। সেই একই বাতাস কি মেঘের সাথে খুনসুঁটি করে চাঁদের সাথে লুকোচুরিতে মেতেছে? অনেক আগে সুনীল তাঁর এক বইয়ে লিখেছিলেন, রাকা হলো সেই চাঁদের আলো, যার সাথে মেঘ লুকোচুরি করে। মনে হলো, আজ রাকা এসেছে। এমন আনন্দ হলো! আমরা গ্রিলের মধ্য দিয়ে হাত বাড়িয়ে চাঁদের আলো-বৃষ্টি ধরার চেষ্টা করলাম।