Thank you for trying Sticky AMP!!

দূরপাল্লার ট্রেন

স্কুল থেকে পালিয়ে দূরপাল্লার ট্রেন ধরে আমরা চলে গেলাম চট্টগ্রামের পাহাড়তলি স্টেশনে। আমার বাবা ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত জানতেন না যে তাঁর ছেলে কোথায় আছে এই মাঝরাতে? সঙ্গে ছিল আমার দুজন সহপাঠী। পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে, তার বিন্দুমাত্রও ধারণা ছিল না আমাদের। মনে মনে ভীষণ ভয় কাজ করছিল। এরই মধ্যে স্টেশনে দাঁড়িয়ে একজন কান্নাকাটি শুরু করে দিল। তার কান্নাকাটি দেখে আমরা বাকি দুজনও ভয় পেয়ে গেলাম। স্টেশনের এক পথচারী আমাদের এই অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কোথা থেকে এসেছি কিংবা কোথায় যাব? আমরা তাঁর প্রশ্নের কোনো জবাব দিচ্ছি না। কারও কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে তিনি প্রস্থানের আগে শুধু বলে গেলেন, যদি ভুল করে কোথাও থেকে এসে থাকি, তাহলে যেন খুব তাড়াতাড়ি ফিরতি ট্রেনে উঠে পড়ি। কারণ, ওই ট্রেনই ছিল শেষ ট্রেন।

>

সেদিন বাকি দুজনের ফ্যামিলি মেম্বারদের সঙ্গে আমি আমার বাবাকে দেখে রীতিমতো অবাক হলাম। অন্য দুজনের বাবা, ভাই না হয় যোগাযোগ করে এসেছে, কিন্তু আমার বাবা! তিনি আমার খোঁজ পেলেনই–বা কীভাবে?

আমাদের হাতে বাকি কোনো টাকাপয়সা ছিল না। সেটা ছিল শীতের মৌসুম। ফলে তিনজনই থরথর করে কাঁপছিলাম আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। শেষ অবধি কোনো পথ না পেয়ে ওই ট্রেনেই উঠে পড়তে বাধ্য হলাম আমরা। একটা সিটে গিয়ে কোনোরকম ঝুপড়ি মেরে বসেছিলাম। ট্রেন ছাড়ল। এবার কোথায় গিয়ে নামতে পারব, তা–ও জানি না। হঠাৎ যাত্রীদের মধ্য একজন আমাদের সন্দেহ করে বসলেন। নিজের সিট থেকে উঠে এসে জিজ্ঞেস করা শুরু করলেন, আমরা কোথায় যাব? তাঁর ঘন ঘন প্রশ্নে একজন ভীত হয়ে কেঁদেকেটে পুরো ঘটনা খুলে বলল। তিনি যখন জানতে পারলেন আমাদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা। বাকি যাত্রীদেরও ঘটনাটা খুলে বললেন। তাঁরা আমাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক পরিবারের মুঠোফোন নম্বর জানতে চাইলেন। আমি ছাড়া বাকি দুজনই তাঁদের নম্বর দিয়ে সহযোগিতা করল। আমার মনে তখনো ভয় কাজ করছিল। যোগাযোগ হলো তাদের পরিবারের সঙ্গে। আমরা নামলাম পরবর্তী স্টেশনে। বাড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে।

তবে সেদিন বাকি দুজনের ফ্যামিলি মেম্বারদের সঙ্গে আমি আমার বাবাকে দেখে রীতিমতো অবাক হলাম। অন্য দুজনের বাবা, ভাই না হয় যোগাযোগ করে এসেছে, কিন্তু আমার বাবা! তিনি আমার খোঁজ পেলেনই–বা কীভাবে?

সেদিন এমন একটা ঘটনার জন্য তিনি আমাকে কিছুই বলেননি। আর আমি, আমি নিজে কখনো বলতে পারিনি—বাবা, সরি।

অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: info@onnoalo.com