বাবা, ভালোবাসি
ছোটবেলা থেকেই দেখতাম, বাবাকে ভয় পেতে হয়। আমি একা নয়; এই বাড়ির সবাই বাবাকে ভয় পায়। রাশভারী স্কুলশিক্ষক, সর্বদা নীতির প্রশ্নে অটল। আর তার সঙ্গে দুই চোখে সহ্য করতে পারেন না বেয়াদবি। এসব কারণেই পান থেকে চুন খসলে শুনতে হতো কড়া বকুনি, কখনো কখনো উপরিও। এভাবেই জেনে গেলাম, বাবাকে ভয় পেতে হয়। বাবাকে যা বলার, বলতে হয় আমাদের সঙ্গে বাবার সূত্রধর যে মা, তার মাধ্যমে। বাবাকে যতটা ভয় পেতাম আমরা, তা আরও বাড়ত মায়ের কারণেই। মা হয়তো আমাদের চেয়েও বেশি ভয় পেত, কে জানে!
বড় হতে হতে শিখতে লাগলাম, বাবাকে লুকোতে হয়, বাবার কানে ভুলেও যেন অপকর্মের খবর না যায়—সেদিকে নজর রাখতে হয়, সতর্ক থাকতে হয়। রাগী মানুষটার বাড়তি রাগের কারণ হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা পোষণ করতাম না। কিন্তু আস্তে আস্তে এটাও জেনে গেলাম, যেকোনো সমস্যার সমাধান হবে তাঁর মাধ্যমেই! এটা লাগবে, সেটা লাগবে, ওটা করে দিতেই হবে, ওটা আটকাতে হবে, যেভাবেই হোক বাবার কাছে গিয়ে যদি বলে ফেলা যায়, আর চিন্তা নেই। একটা না একটা ব্যবস্থা হবেই হবে! এভাবেই নিজেদের প্রয়োজনে বাবার মাধ্যমে উদ্ধার পেয়ে, বাকি সময়টা আড়ালে থেকেই জীবনের এত বসন্ত পেরিয়ে এলাম।
এখন যৌবনের মুখোমুখি আমি দেখছি বাবাকে বৃদ্ধ হতে। বয়সটা বাড়ছে, বয়সের ছাপ ঘিরে ধরছে। আগের মতো শক্তি নেই, চাঞ্চল্য নেই, উদ্যম নেই। কিন্তু সেই মানুষটা আছে, যাকে এখনো আমি সেই ছোট্টবেলার মতোই ভয় পাই। সেই মানুষই আছে, এখনো বিপদে পড়লে সবার আগে যার শরণাপন্ন হই। সেই মানুষই আছে, যাকে কখনো সাহস করে বলা হয়নি, ‘বাবা, ভালোবাসি।’
অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: info@onnoalo.com