Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজীব আমাদের মতো জীবন নিয়ে ভণিতা করেনি

১ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন কবি, গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজীব আশরাফ। ‘হোক কলরব’, ‘প্রকৃত জল’, ‘নাম ছিল না’, রোদ বলেছে হবে’সহ অজস্র জনপ্রিয় গানের গীতিকবি তিনি। তাঁর অকালমৃত্যুর পর গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন অনেকেই। রাজীব আশরাফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কবি ও নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। বন্ধু বিয়োগের বেদনায় কলম ধরেছেন তিনি।

রাজীব আশরাফ

আপনি রাজীব আশরাফকে চেনেন না তো আপনি রাজীব আশরাফকে চেনেন না। কবি, গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রশিল্পী রাজীব আশরাফকে না চিনলেও মানুষ রাজীব আশরাফকে চেনাটা একটা অভিজ্ঞতাই। রাজীব আমার দেখা সেই মানুষ, যে কিনা নিজের জীবনকেই একটা এক্সপেরিমন্টাল আর্টওয়ার্ক করে তুলেছিল। সেটা করে ও ঠিক করেছিল, না ভুল করেছিল, তা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে।

রাজীব আশরাফ

তবে আমি এটুকু বলতে পারি, রাজীব আমাদের মতো জীবন নিয়ে ভণিতা করেনি। মুখে যা বলেছে, তার প্রতিফলন ওর জীবনচর্চায় রেখে গেছে। বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রতিফলনের ধরন বদলেছে।

আমি রাজীবকে চিনি ২০০০ সাল থেকে। গত ২৩ বছরে রাজীবের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব, একসঙ্গে কাজের সম্পর্ক, নানান আসক্তিতে জড়ানো থেকে শুরু করে মুখ দেখাদেখি বন্ধের মতো ঝগড়াও হয়েছে আমাদের। মাঝের তিন বছরের যোগাযোগবিচ্ছিন্নতার সময়েও একটা মাসও যায়নি আমি কারও না কারও সঙ্গে রাজীবের সঙ্গে আমার কাটানো সময় নিয়ে গল্প করিনি। সেই গল্প করতে করতে রাজীবের ওপর রাগ হতো আবার ওর প্রতি ভালোবাসাও উপচে পড়ত। যেকোনো সময়, যেকোনো পরিস্থিতি, যেকোনো স্থানকে নিজের অনুকূলে নিয়ে এসে সেখান থেকে জীবনের পূর্ণ রস আস্বাদনের এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল আমার বন্ধু রাজীবের। আমরা বেশির ভাগই আমাদের শ্রেণি আরামের বাইরে গিয়ে মানুষকে বুঝতে, জানতে, ভালোবাসতে পারি না। রাজীব জরুরি এই ক্ষমতাটা রপ্ত করেছিল। শিল্পীর জন্য যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হয়।

রাজীব হলো আমার জীবনের সেই মানুষ, যাকে একই সঙ্গে সহ্য করা যায় না, আবার সহ্য না করেও থাকা সম্ভব না। যার ওপর ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়, রাগ হয় আবার ভালো না বেসে থাকাও সম্ভব হয় না। রাজীবের চলে যাওয়া আমাকে কাঁদাচ্ছে, রাগাচ্ছে, শূন্যতার অনুভূতি দিচ্ছে।

আমার মতে, রাজীব আশরাফ ছিল এ দেশে আমাদের প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান শিল্পী। আমরা বেশির ভাগই যেখানে চর্চা করতে করতে, পাথরে পাথর ঘষে কোনো কিছু অর্জন করেছি, অর্জনের চেষ্টা করছি, সেখানে রাজীব ভেতর থেকে প্রতিভাবান ছিল।

রাজীব আশরাফের নিজের তোলা সেই ছবি, যা তিনি কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের অফিসে বসে তুলেছিলেন মৃত্যুর সপ্তাহ দুয়েক আগে

শয়তানটার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় মাস দুয়েক আগে। ফোন দিয়ে বলল, দেখা করবে, অফিসে আসবে। যে সময় তার আসার কথা ছিল, তার এক ঘণ্টা আগে চলে এসেছিল। কাজ শেষ করে আমার আসতে লাগল ৪০ মিনিটের মতো। অপেক্ষা করতে করতে নানান অ্যাঙ্গেলে নিজেই নিজের ছবি তুলে আমাকে ইনবক্স করল। এটা একমাত্র রাজীবের পক্ষেই সম্ভব।

রাজীব হলো আমার জীবনের সেই মানুষ, যাকে একই সঙ্গে সহ্য করা যায় না আবার সহ্য না করেও থাকা সম্ভব না। যার ওপর ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়, রাগ হয়, আবার ভালো না বেসে থাকাও সম্ভব হয় না। রাজীবের চলে যাওয়া আমাকে কাঁদাচ্ছে, রাগাচ্ছে, শূন্যতার অনুভূতি দিচ্ছে। গুডবাই মাই ওয়ানস পার্টনার ইন ক্রাইম।