Thank you for trying Sticky AMP!!

মানুষ কীভাবে সকাল দেখল

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সে অনেক দিন আগের কথা। পৃথিবীর বয়স তখন এত বেশি ছিল না। সে সময় খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষ বাস করত এখানে। দল বেঁধে তারা ছোট ছোট গ্রাম গড়ে তুলত নদীর পাড়ে। প্রচুর সম্পদে ভরপুর ছিল এই পৃথিবী। গাছে গাছে ছিল সুস্বাদু ফল। নদীতে প্রচুর মাছ। মানুষে-মানুষে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। ছিল সম্প্রীতি। ছিল ভ্রাতৃত্ব।

মানুষ তখন ঘুমাতে ভালোবাসত। খুব ভালোবাসত। তখন বৈদ্যুতিক বাতি ছিল না। টেলিভিশন ছিল না। মুঠোফোনও ছিল না। পড়ালেখা ছিল না। অফিস-আদালত ছিল না। ফলে মানুষ সন্ধ্যা হলেই ঘুমিয়ে পড়ত। বেলা করে ঘুম থেকে উঠত। দু-চারটি ফল-মূল খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ত। তখনো ঘড়ি আবিষ্কার হয়নি। তাই মানুষ কখন ঘুমাল, কখন উঠল কিংবা কত ঘণ্টা ঘুমাল—এসব হিসাব করার কোনো উপায় ছিল না। তা ছাড়া কাজের অত তাড়াও তো ছিল না। ফলে মানুষ ঘুমাতেই বেশি পছন্দ করত। একা একা নয়, সবাই দল বেঁধে ঘুমাত। নাক ডেকে ঘুমাত। ডেকে তোলার মতো কেউই জেগে থাকত না।

সুন্দরবনের খুব কাছাকাছি ছোট্ট একটি গ্রাম। গ্রামের কোনো নাম ছিল না। আসলে নাম রাখার প্রয়োজনও পড়েনি। পুরো গ্রামে গোটা তিনেক ঘর ছিল। পরিবারে সদস্যসংখ্যা অবশ্য একটু বেশি। এই গ্রামে বাস করত দুটি হাঁস। একটি ছোট্ট দোচালা ঘরের পাশে শুয়ে থাকত। মানুষের ফেলে দেওয়া খাবারগুলো খেত। আর সারা দিন টইটই, টইটই করে ঘুরে বেড়াত। নদীর জলে ঘুরে বেড়াত। সন্ধ্যা হলে আবার ফিরত ওই দোচালা ঘরটার কাছে। একদিন এক সকালবেলা, একটি হাঁস প্রতিদিনের মতো বেরিয়ে পড়ল। চলতে চলতে পৌঁছে গেল সুন্দরবনের কাছে। সেখানে বাস করত এক মোরগ। সারা দিন এ-ডাল, ও-ডাল করে উড়ে বেড়াত। আর ঘুমাত গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে। যেন শিকারির নজরে না পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মোরগটির সঙ্গে হাঁসটির খুব ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। গল্পে গল্পে সন্ধ্যা হয়ে আসে। ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়, কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়তে চায় না। অবশেষে মোরগটি চলল হাঁসের সঙ্গে। লোকালয়ে। ততক্ষণে সন্ধ্যা, গাঢ় সন্ধ্যা নেমেছে।

যতক্ষণে হাঁস ও মোরগ লোকালয়ে এসে পৌঁছেছে, ততক্ষণে মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই কোনো শব্দ না করে, হাঁস তার বন্ধু মোরগকে নিয়ে বাড়ির এক পাশে চুপটি করে শুয়ে পড়ল। কিন্তু মোরগের তো খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস। অতএব, প্রতিদিনের মতো মোরগ সেদিনও খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠল। যথারীতি কুক কুরুক কুউউ, কুক কুরুক কুউউ বলে উচ্চ স্বরে ডাকতে থাকল। মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল মানুষের। সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ল। অসাধারণ এক সকাল দেখল মানুষ। ঝলমলে সকাল। লালচে, নরম, তুলতুলে সকাল। চারদিকে কেমন যেন একটা চকচকে, ঝকমকে কোমলতা। সবাই ভীষণ আনন্দে নেচে উঠল। বলে উঠল, কী অসাধারণ সকাল! কী সুন্দর এক সকাল!

তারপর গ্রামের সবাই মিলে মোরগকে অনুরোধ করল, সে যেন আর বনে ফিরে না যায়। হাঁসও তার মোরগ বন্ধুকে একই অনুরোধ করল। সবার অনুরোধে মোরগ লোকালয়ে থেকে গেল। আর ফিরল না বনে। ও না, ভুল বললাম। শুধু একবার সে ফিরেছিল, তার বান্ধবী মুরগিকে লোকালয়ে নিয়ে আসতে। সেই থেকে মোরগ বাস করে লোকালয়ে। মানুষের সঙ্গে। মানুষ ডাকলে কাছে আসে। আর তাড়া দিলে দূরে চলে যায়।

হাঁস ও মোরগের বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ তখন থেকে এক ঘরে রাখা হয় তাদের। সেই থেকে মোরগ খুব সকালে মানুষের ঘুম ভাঙায়। সেই থেকে মানুষ দেখতে পায় একটা সুন্দর সকাল।