Thank you for trying Sticky AMP!!

অবাক করা ১৮

লীরা কম্পিউটারটা অবাক হয়ে দেখে। এটাই সেই ঐতিহাসিক যন্ত্র! একবিংশ শতাব্দীতে মানুষ নাকি এর ওপরই সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ছিল। লীরার অনলাইন অ্যাসাইনমেন্টের বিষয় হলো ‘ঐতিহাসিক শতাব্দী’। সে ঠিক করেছে, একবিংশ শতাব্দী নিয়েই সে লিখবে।

‘কোড ১২১৩ ’, লীরা তার রোবটটাকে ডাকে।

‘ইয়েস, ম্যাম।’

‘টাইম মেশিনে এটা কত তম সাল?’

‘এক সেকেন্ড ম্যাম...টাইম মেশিনে একবিংশ শতাব্দী সেট করা ছিল। তবু আমি চেকিং ইউনিটে দেখে আপনাকে সালটা জানাচ্ছি...এটা ২০১৮ সাল।’

‘বিশ্বাস করতে পারছি না! আমরা ২ হাজার বছর আগে ফিরে গেছি! ১২১৩, টাইম মেশিনের জন্যই আমি তোমাকে কিনেছি। থ্যাংক ইউ। কিন্তু এটা কার বাসা?’

‘চেকিং ইউনিট সিক্সটি ফোর, লঞ্চিং, ডাউনলোডেড। ম্যাম, এখানে থাকেন মি. রহমান, মিসেস রহমান ও তাঁদের একমাত্র ছেলে রুহান।’

‘গ্রেট।’

লীরা কম্পিউটার অন করে। ১২১৩ কাজের রোবট, তাকে শিখিয়ে দিচ্ছে।

হঠাৎ লীরা যেন কারও চিৎকার শুনল। মাথা ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকায় সে। ‘কে?’

একটা ১২-১৩ বছরের ছেলে চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি বলো তুমি কে? আমি এ রুমের মালিক, রুহান।’

‘আমি লীরা। আমি ৪০২৫ সাল থেকে টাইম মেশিনে করে এসেছি। আমার রোবট-১২১৩।’

‘টাইম মেশিন!’ রুহান চিৎকার দিয়ে ওঠে। ‘তোমাদের আছে?’

লীরা তো অবাক। ৪০২৫ সালে টাইম মেশিন এখানে-সেখানে ছড়িয়ে থাকে, অথচ ২০১৮ সালে ছিলই না!

‘হ্যাঁ, আছে।’ ১২১৩ বলে।

‘তুমি রোবট!’ রুহান আরও অবাক।

‘হ্যাঁ।’

‘তোমরা আমার কম্পিউটারে হাত দিলে কেন?’

লীরা তখন তাকে পুরোটা বুঝিয়ে বলে। অ্যাসাইনমেন্টের কথা বলে। রুহানকে লীরা জিজ্ঞেস করে, ‘কম্পিউটার চালাতে পারো?’

‘হ্যাঁ, পারি।’

‘আমাকে শেখাবে?’

রুহান লীরাকে সব শেখাতে থাকে। লীরা লিখে নেয় খাতায়। তারপর লীরাকে রুহান বলে, ‘তুমি কানামাছি খেলো?’

‘সেটা কী?’

‘ও, তুমি তো ৪০২৫ সালের। বুঝবে না। এটা একটা খেলা। আচ্ছা...তোমাদের মাঠ আছে?’

‘নাহ।’

‘স্কুলেও মাঠেও নেই?’

‘আমাদের তো কোনো স্কুলই নেই। তোমাদের ভাষায় বলা যায়...আমরা পড়ালেখা করি অনলাইনে। আমাদের রাস্তায় নামতে হয় না। ঘরে বসেই সব করা যায়। রাস্তায় থাকে গরিবেরা।’

‘তোমরা তাদের সাহায্য করো না?’

‘না। আমাদের মনে কোনো দয়ামায়া নেই।’

বলতে বলতে লীরার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। ৪০২৫ সাল তো আর ২০১৮ সালের মতো বোকা বোকা সাল নয়। ওখানে মানুষ প্রতিযোগিতা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। লীরা যদি ২০১৮ সাল থেকে একটা মানুষ ধরে নিয়ে যেতে পারে, তাহলে সে নিশ্চয়ই অ্যাসাইনমেন্টে অন্যদের চেয়ে বেশি নম্বর পাবে। লীরা এবার রুহানকে বলল, ‘তুমি আমার সঙ্গে যাবে?’

‘হ্যা, অবশ্যই!’ রুহান মহাখুশি।

লীরা চোখে ইশারা করতেই ১২১৩ বুঝে ফেলে, সে কী চাইছে। সে সিস্টেমিক অপারেটর দিয়ে রুহানের শরীরটা অবশ করার কাজ শুরু করে দেয়।

রুহান চিৎকার করে, ‘এ কী! আমার কী হচ্ছে? কী করছ তোমরা?’

‘তোমাকে আগেই বলেছি রুহান, আমাদের কোনো দয়া নেই। তোমাকে আমরা স্যাম্পল হিসেবে নিয়ে যাচ্ছি। তোমাকে দেখিয়ে আমি ফার্স্ট হব।’

হাত অবশ হওয়ার আগেই রুহান ঝটপট কম্পিউটারে কী যেন লিখল। লীরা দেখার আগেই কাকে যেন একটা ই-মেইল পাঠিয়ে দিল। লীরা আর ব্যাপারটা খুব একটা পাত্তা দিল না।

৪০২৫ সালে ফিরে লীরা দেখল, সব বদলে গেছে। মানুষের মনে অনেক দয়া। ধনী-গরিবে ভেদাভেদ নেই। কী করে এমন হলো? সে জানল, প্রায় ২ হাজার বছর আগে রুহান নামের একটা ছেলে নাকি আগেই মানবজাতিকে সাবধান করে দিয়েছিল, তাই মানুষ আর ভুল পথে পা বাড়ায়নি।


সপ্তম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা