Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্রাম্যগান, আধুনিকতা ও জসীমউদ্দীন

জসীমউদ্‌দীন (১ জানুয়ারি ১৯০৩—১৩ মার্চ ১৯৭৬)। প্রতিকৃতি: আরাফাত করিম
>আজ কবি জসীমউদ্‌দীনের মৃত্যুদিন। তাঁর কাব্য-সাহিত্যের উৎস সন্ধানে কবির নতুন এক জগতের দিকে ফিরে তাকাতেই এই লেখা

চর ভদ্রাসন গ্রামটা ফরিদপুর জেলা শহর থেকে ১৬ মাইল দূরে। সুযোগ পেলেই জসীমউদ্‌দীন সেখানে রাতে গান শুনতে যান। একবার সেখানে সারা রাত মুর্শিদা গান শুনলেন গ্রামবাসীর সঙ্গে। ভোরবেলা গানের সুর মনের মধ্যে ভাজতে ভাজতে হাতমুখ ধুচ্ছেন। এমন সময় ওই গ্রামের আইজদ্দী এসেই কবির হাত জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘কবিসাব! আমার বাড়িতে আপনাকে যাইতে অবি! আমার বাড়িওয়ালিকে আপনার দেখুন লাগবে। ওর ছাইলা হয়া নষ্ট হয়া যায়।’ জসীমউদ্‌দীন অবাক হয়ে বললেন, ‘তো আমি কী করব আইজদ্দী!’ এবার আইজদ্দী আসল কথাটা পাড়ল। বলল, ‘হুনছি কবিরা আল্লার পিয়ারা। আপনি উয়ারে একটু দুয়া কইরা যান, যাতে উয়ার আর পুলা নষ্ট হয়া না যায়।’ আসল কথা হলো, গ্রাম এলাকায় সেই সময় সারা রাত মুর্শিদা গান হতো। সেই সব ভাব-গান সারা রাত গাইতে গাইতে অনেকের ‘জজ্‌বা’ এসে যেত। আর ভোররাতে সরলপ্রাণ গ্রামের লোকেরা ‘জজ্‌বা’ ফকিরদের কাছে নানা রকম বর প্রার্থনা করত। জসীমউদ্‌দীন এসবে বিশ্বাস করতেন না। গানের সুর আর কথা তাঁকে পাগল করে দিত। কখনো কখনো নিজেও গানে যোগ দিয়ে ভাব-তন্ময় হয়ে যেতেন। কিন্তু আইজদ্দী জসীমউদ্‌দীনকে ‘কামেল’ মনে করে তাঁর কাছেই বর প্রার্থনা করে বসেছে। সেবার কবি আইজদ্দীর বাড়ি গিয়েছিলেন এবং নানা পরামর্শ দিয়ে এসেছিলেন। গ্রামীণ গান এবং গ্রামের মানুষের সঙ্গে এই ছিল জসীমউদ্‌দীনের সম্পর্কের ধরন।

গানের সূত্রে গ্রাম-বাংলার আনাচকানাচে ঘুরে ঘুরেই জসীমউদ্‌দীন খুঁজে পেয়েছিলেন এরোন ফকির, পাঞ্জু ব্যাপারি, দিনু ফকির, যাদব ঢুলি, পরীক্ষিত, দানু মোল্লা, কবিরত্ন এম এ হক, হাজেরা, বিজয় সরকার, হরিবর, মনোহর, নিশিকান্ত, রাজেন সরকার, ইসমাইল প্রমুখ গানের মানুষদের। আর ঢুকে পড়েছিলেন গ্রামীণ গানের একেবারে মর্মের ভেতরে। জসীমউদ্‌দীনের আত্মজীবনীমূলক বই জীবনকথা এসব গ্রামীণ গানের মানুষদের কলকোলাহলে ভরা। সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠিত বড়সড় শহুরে কবি বা সাহিত্যিকের নামগন্ধও নেই।

জসীমউদ্‌দীনের দাবি, গ্রামীণ গানের কবি-গায়কেরাই তাঁকে জসীমউদ্‌দীন করে তুলেছেন। রবীন্দ্রনাথ যখন তাঁর কবিতার সাবলীলতা ও ছন্দের সহজ গতির কথা বলেছিলেন, তার উত্তরে জসীমউদ্‌দীন বলেছিলেন, ‘ইহা যদি আমার গুণ হইয়া থাকে তবে এই শিক্ষা আমি পাইয়াছি আমার দেশের অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত কবিয়ালদের কাছ থেকে। তাহারাই আমার কাব্য জীবনের প্রথম গুরু। সেই যাদব, পরীক্ষিত, ইসমাইল, হরি পাটনী, হরি আচার্য—এঁদের কথা আমি যখন ভাবি আমার অন্তর কৃতজ্ঞতায় অশ্রুসিক্ত হইয়া ওঠে।’ জীবনকথা, স্মৃতির পট, চলে মুসাফির, ঠাকুরবাড়ির আঙিনায় ইত্যাদি বই পড়লে সহজেই বোঝা যায় গানই তাঁর আসল ঠিকানা। রঙ্গিলা নায়ের মাঝি, গাঙ্গের পাড়, জারি গান, মুর্শিদা গান, রাখালী গান গ্রন্থগুলো তাঁর গানপাগল মনের স্মারক হয়ে আছে। গ্রামীণ গানে জসীমউদ্‌দীনের ব্যুৎপত্তি এত খাঁটি আর গভীর ছিল যে, রবীন্দ্রনাথ তা বুঝতে পেরে তাঁকে শান্তিনিকেতনের মেয়েদের গ্রামীণ গান শেখানোর দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। দেশভাগের পর রেডিও পাকিস্তানে ‘এডিশনাল সং পাবলিসিটি অর্গানাইজার’ পদে যোগ দেন জসীমউদ্‌দীন। অবসরের আগ পর্যন্ত রেডিওতে এই পদেই কাজ করেছেন। তাঁর সারা জীবন কেটেছে গ্রামীণ গান সংগ্রহ করে করে। এই কবির যাপনের মধ্যেও ছিল গানেরই প্রাধান্য। তাঁর ঢাকার বাসা ছিল গ্রামীণ গায়ক আর আউল-বাউলদের আখড়া। এর সাক্ষ্য আছে কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের স্মৃতিকথায়, ‘১৯৪৮ সালের সেই সন্ধ্যায় তাঁর আশেপাশে কয়েকজন পল্লীগায়ক ছিলেন। মনে হয় বেদারউদ্দীন এবং মমতাজ আলী খানও সেইখানে ছিলেন। কানাই শীলও সেইখানে ছিলেন কিনা ঠিক মনে নেই। তবে তাঁরই মতো একজন বলে উঠলেন: কাইল বাড়িতে কীর্তনের আসর বসবে বলে শুনলাম, যাবেন না কি?’ (মাটি ও মানুষের কবি জসীমউদ্‌দীন [সম্পাদক: নাসির আলী মামুন], পৃষ্ঠা: ৬৮৪) গান জসীমউদ্‌দীনের এত মর্মের বিষয় ছিল যে, তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন (১৯৩৮–১৯৪৪) তখনো ফাঁক পেলে ফরিদপুর শহরে গিয়ে কবিয়াল বন্ধু কালিপদ দাসের সঙ্গে কবির লড়াইয়ে লিপ্ত হতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকা অবস্থায় ফরিদপুর শহরের নানা স্থান থেকে কবিগান গাওয়ার জন্য তাঁর কাছে নিমন্ত্রণ আসত। জসীমউদ্‌দীন খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, তিনি হতে চেয়েছিলেন কবিয়াল। আর কলকাতা থাকাকালে তাঁর তো রীতিমতো লোকগানের দল ছিল। এই দলে ছিলেন আব্বাসউদ্দীনও। আব্বাসউদ্দীনসহ অন্য শিল্পীদের পূর্ব বাংলার গ্রামীণ গান শেখাতেন তিনি। কোথাও বক্তৃতা করতে গেলে বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে বক্তব্যকে স্পষ্ট করার জন্য শিল্পীদের দিয়ে গাওয়াতেন গান। কলকাতায় বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকে সবাই যখন ইউরোপীয় ভাবধারার মদিরা পানে মত্ত, তখন তিনি গ্রামীণ গানের রূপ-রস-ঐশ্বর্যের ঝাঁপি খুলে দেখিয়েছেন কলকাতার মানুষদের। কলকাতার আলবার্ট হলে দর্শনীর বিনিময়ে কবিগানের আয়োজন পর্যন্ত করেছিলেন। গ্রামীণ গান সংগ্রহের জন্য তিনি ময়মনসিংহের গ্রামে গ্রামে বগলে বালিশ-কাঁথা নিয়ে ঘুরেছেন। রাতে থাকার জায়গার ঠিক ছিল না। কখনো মসজিদ-মাদ্রাসায়, কখনো অপরিচিত গৃহস্থকে অনুনয়-বিনয় করে কোনোমতে রাত গুজরান করেছেন। গানের সঙ্গে জসীমউদ্‌দীনের গভীর আর খাঁটি যোগ লক্ষ করেই কবি হিসেবে খ্যাতিমান হওয়ার পরও হেমাঙ্গ বিশ্বাস এক স্মৃতিকথায় জসীমউদ্‌দীনকে সাব্যস্ত করেছেন ‘লোকগানের প্রকৃত সাধন-ভজনকারী’ হিসেবে। তিনি তাঁর এক স্মৃতিকথামূলক রচনায় কবিকে বলেছেন, ‘গানের মুরশিদ’ ও ‘লোককবি’। দেশভাগের পর রেডিও পাকিস্তানে জসীমউদ্‌দীনের সহকর্মী কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম তো রীতিমতো তাঁকে ‘কবিয়াল ভাই’ বলে ডাকতেন। 

জসীমউদ্‌দীনকে আমরা যে কবি হিসেবে পেয়েছি, তিনি তো গ্রামীণ গানের গর্ভ থেকেই উঠে আসা কবি। গ্রামীণ গানই তাঁকে স্বতন্ত্রধারার কবি করেছে। সে সাক্ষ্য জসীমউদ্‌দীনের জীবন ভালোভাবে ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। ১৯২০ সালে জসীমউদ্‌দীন একবার কলকাতায় গিয়েছিলেন। তখন তিনি রবীন্দ্রনাথের অনুকরণে কবিতা লিখতেন। কিন্তু সেবার কলকাতা থেকে ফিরে এসে তিনি মন দেন গ্রামীণ গান সংগ্রহে। এই গ্রামীণ গান সংগ্রহ করতে গিয়ে এর সান্নিধ্যে এসেই তাঁর কবিতা স্বরূপে ফিরে আসে। সেই সময়ের এক স্মৃতি জসীমউদ্‌দীন বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘আমি তখন সবে আইএ ক্লাসে উঠিয়াছি। আমার কবিতার রচনারীতি পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে। পূর্বে রবীন্দ্র-রচনার পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া যাহা লিখিতাম, বহু কাগজে তাহা ছাপা হইয়াছে। এমনকি প্রবাসী কাগজে পর্যন্ত আমার লেখা প্রকাশিত হইয়াছে। কিন্তু গ্রাম্য-জীবন লইয়া গ্রাম্য-ভাষায় যখন কবিতা রচনা করিতে আরম্ভ করিলাম, কেহই তাহা পছন্দ করিল না। কাগজের সম্পাদকেরা আমার লেখা পাওয়া মাত্র ফেরত পাঠাইয়া দিতেন। সবটুকু হয়তো পড়িয়াও দেখিতেন না। সে সময়ে আমার মনে যে কী দারুণ দুঃখ হইত, তাহা বর্ণনার অতীত। একবার গ্রীষ্মকালে দুপুরবেলা আমাদের গ্রামের মাঠ দিয়া চলিয়াছি, এমন সময় পিয়ন আসিয়া ভারতবর্ষ হইতে অমনোনীত “বাপের বাড়ির কথা” নামক কবিতাটি ফেরত দিয়া গেল। পিয়ন চলিয়া গেলে আমি মনোদুঃখে সেই ঢেলা-ভরা চষা-ক্ষেতের মধ্যে লুটাইয়া পড়িলাম।’ (জসীমউদ্‌দীন, যাঁদের দেখেছি, পৃষ্ঠা: ২৫)

এই কবিতা কলকাতার ‘আধুনিক’ চেতনার পত্রিকা কেন ছাপেনি! এর প্রধান কারণ এই নয় কি যে, এই কবিতা বাংলা কবিতার নিজস্ব আধুনিকতার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা! এই নয় কি যে, মধ্যযুগ থেকে গানের গভীরে নাভিপোঁতা বাংলা কবিতা-গানের সঙ্গে এ কবিতার লেনদেন আছে! ‘আধুনিক’ বাংলা কবিতা ইউরোপীয় কাব্যধারার ঝাঁপটায় যে-পথের নিকুচি করে এসেছে, সেই ফেলে আসা পথে এই কবিতা পা বাড়িয়েছে! কিন্তু ক্রমে যখন দীনেশচন্দ্র সেনের পৌরহিত্যে আর রবীন্দ্রনাথের লাইয়ে জসীমউদ্‌দীনের কবিতার শক্তি সম্পর্কে সবাই জানতে পারল, তখন ‘পল্লিকবি’র তকমা দিয়ে তাঁকে আলাদা করে রাখা হলো। কখনো কখনো ইউরোপীয় ধারার কাব্যকবিতার সঙ্গে মেলানোর জন্য বলা হলো, জসীমউদ্‌দীন ‘আধুনিক’। কিন্তু জসীমউদ্‌দীন তো কেরানিকুলের আধুনিকতার কাছে তাঁর ঋণ স্বীকার করেননি। তিনি ঋণ স্বীকার যা করার তা করেছেন ওই গ্রামীণ গানের কবি, গীতিকার আর গায়েনদের কাছে। ফলে এই কবিতা ফেরত আসাই স্বাভাবিক।

জসীমউদ্‌দীনের কবিতা তাঁর জীবনের পরতে পরতে লেপ্টে থাকা গ্রামীণ বা ‘গ্রাম্যগানের’ (জসীমউদ্‌দীন তাঁর লেখায় ‘গ্রাম্যগান’ শব্দটি বারবার ব্যবহার করেছেন) সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা। ‘কবর’ কবিতা রচনার বেশ পরে তিনি হরি আচার্য নামে এক কবিয়ালের সান্নিধ্য লাভ করেন। তাঁর কবির ঝংকার ও বঙ্গে কবিগান বই দুটি পড়ে জসীমউদ্‌দীন বলেছিলেন, ‘আপনার রচিত নিমাই সন্ন্যাস গানটি যদি আমি আগে শুনিতাম তবে হয়তো আমার “কবর” কবিতা রচনা করিতাম না।’ অর্থাৎ হরি আচার্যের গান আর ‘কবর’ একসুতায় গাঁথা। ‘কবর’—গ্রামীণ গানের গর্ভ থেকে উঠে আসা কবিতা। একই কথা খাটে তাঁর নকসী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট ও অপরাপর অধিকাংশ কাব্যকবিতা সম্পর্কে। জসীমউদ্‌দীন নিজে তাঁর নকসী কাঁথার মাঠ কাব্যের ‘নিবেদন’ অংশে বলেছেন, ‘...আমি প্রাচীন পল্লী-কবিদের অনেক পদ কোন কোন চরিত্রের কথোপকথনে জুড়িয়া দিয়াছি।’ লক্ষ করলে দেখা যাবে, গানের সঙ্গে গভীর সুরে ঝংকৃত বলেই রাখালী কাব্যগ্রন্থে ১৮টি কবিতার পাশাপাশি ‘সিঁদুরের বেসাতি’, ‘সুজন বন্ধুরে’, ‘মনই যদি নিবি’, ‘বৈদেশী বন্ধু’ ও ‘গহীন গাঙের নাইয়া’ শিরোনামের পাঁচটি গ্রামীণ গান স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ভাটিয়ালি সুরে রচিত ‘গহীন গাঙের নাইয়া’ গানটি পরবর্তীকালে আবাসউদ্দীনের কণ্ঠে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও লাভ করে। সিঁদুরের বেসাতি মূলত ‘মেয়েলি গানের সুরে উত্তর-প্রত্যুত্তরের ভঙ্গিতে রচিত’ একটি গীতিনাট্য। মাগো জ্বালায়ে রাখিস আলো কাব্যগ্রন্থের ‘ভাইটাল গাঙ’ কবিতাটি পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবেন, এটি আসলে কবিতার ছদ্মাবরণে গান।

এভাবে বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের ঘোষিত গানগুলোর বাইরে নানা কবিতার মধ্যে হামেশাই উঁকিঝুঁকি দিয়েছে জসীমউদ্‌দীনের গান-অন্তঃপ্রাণ সত্তাটি। ফলে কবির কাব্য-কবিতার মূল্যায়ন তাঁর ‘গ্রাম্যগান’ ও বাংলার নিজস্ব আধুনিকতার সাপেক্ষেই করা উচিত। কিছুতেই তা ‘আধুনিক কবি’ বা ‘পল্লিকবি’—এমন বর্গে বিচার্য নয়। জসীমউদ্‌দীন ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় আধুনিকতার বিপরীতে গানের সঙ্গে রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত মধ্যযুগের বাংলা কবিতার ধারাবাহিকতায় বেড়ে ওঠা নিজস্ব আধুনিকতার সাধক। সঙ্গে এ-ও বলা দরকার যে এই কবির যাবতীয় কাব্য-কবিতা গ্রামীণ গান বা ‘গ্রামগান’ থেকেই উপজাত।