Thank you for trying Sticky AMP!!

উন্নয়নশীল দেশের সামনে বড় বাধা

রয়টার্স ফাইল ছবি।

আমরা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সংকটময় পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছি। প্রায় তিন দশক ক্ষিপ্র গতিতে ধাবিত হওয়া উদীয়মান বাজারগুলো এখন নিজেদের গতি হারাতে শুরু করেছে। উন্নয়নশীল দেশে আবার বেকারত্বের হার বাড়তে শুরু করেছে। জীবনমান ধরে রাখতে মানুষকে দিনরাত লড়াই করতে হচ্ছে। 

এই অবস্থায় এখন নতুন অর্থনৈতিক কৌশল অনুসরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু কথা হলো সেই ধরনের অভিনব অর্থনৈতিক কর্মকৌশলের মডেল কোত্থেকে আসবে এবং সেই ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব কে দেবে? 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পূর্বাভাসকে অনেক সংযমী মনে হচ্ছে। এই পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, চীন, ভারত, সাব সাহারান আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার অর্থনীতির সূচক অদূর ভবিষ্যতে আরও নিচের দিকে যাবে। এসব অঞ্চলে ‘প্রবৃদ্ধির অবসান’ ঘটতে যাচ্ছে বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে এবং উদীয়মান বাজারের অপ্রতিরোধ্য স্পৃহাকে খাটো করা হবে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর নীতিনির্ধারকেরা সত্যি সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়েছেন এবং বাজারের গতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য তাঁরা নতুন নতুন কৌশল আরোপের কথা চিন্তা করছেন। 

অর্থনৈতিক সংকট কাটানোর জন্য অতীতে সরকারগুলোর সামনে একটি ‘রেডিমেড’ বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধানসূত্র থাকত। সেটি হলো তথাকথিত ‘ওয়াশিংটন কনসেনসাস’। বিশ্বায়ন, বেসরকারীকরণ ও ব্যাষ্টিক অর্থনীতির স্থিতি নিয়ে সামগ্রিক কৌশলের পক্ষে প্রচার চালানো পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের পরিচালক জন উইলিয়ামস এই টার্মটির প্রবক্তা। 

মূলত ওয়াশিংটনভিত্তিক আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় এই কথিত সমাধানসূত্র অতীতে অনুসরণ করা হতো। কোনো দেশ অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে এই তথাকথিত ‘ওয়াশিংটন কনসেনসাস’ অবলম্বন করা হতো। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো দ্রুততার সঙ্গে অর্থনৈতিক অবস্থানকে টেনে তোলায় সেটি এখন আর আগের মতো কার্যকর হয় না। 

 ওয়াশিংটন কনসেনসাসের বিকল্প হিসেবে এখন উন্নয়নশীল দেশগুলো নতুন সমাধান চায়। দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ অতীতে সংকটে পড়লেই আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ হতো এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ত। সংকটের তাৎক্ষণিক সমাধান হলেও এটি দীর্ঘ মেয়াদে দেশগুলোকে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলত। 

তবে এখন সেই সমাধানসূত্র অনেকটাই অচল। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো—এই দুই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মনে করেন, জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশীয় প্রান্তিক জনগণের উন্নয়ন আগে দরকার। এই কৌশলকে তাঁরা ‘গোয়িং স্মল’ কৌশল হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই কৌশল অনুযায়ী, হতদরিদ্রদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করার চেয়ে মশারি বিতরণ করাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ম্যালেরিয়ার কবল থেকে বাঁচতে পারে। তাঁরা শিশুদের মধ্যে চকলেট বিতরণের চেয়ে কৃমিনাশক বড়ি বিতরণকে অগ্রাধিকার দেন, যাতে তারা সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে। তাঁরা মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশের প্রধান চালিকা শক্তি হলো প্রান্তিক জনগণ। দেশের অর্থনীতি তারাই গতিশীল রাখে। অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গেলে আগে তাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে। তাঁরা মনে করেন, যারা উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, তারা যদি সন্তোষজনক নিম্নতম মজুরি পায়, তাহলে উৎপাদনে গতিশীলতা আসবে। 

তবে এই তত্ত্বও যে সব দেশের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে, তা বলা যাবে না। অনেক দেশে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে এতটাই অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যেখানে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোও সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন সেই মানুষেরা ম্যালেরিয়ার হাত থেকে বাঁচতে মশারি বা কৃমির হাত থেকে বাঁচতে কৃমির ওষুধ চায় না। তারা পেটপুরে খাবার চায়। সেটির জোগান দিতে গেলে মশারি দেওয়া সম্ভব হয় না। অর্থাৎ হয় তারা না খেয়ে মরে, নয়তো ম্যালেরিয়ায় মরে। দিন শেষে তারা মরে, অর্থাৎ উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হয়। 

এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য সমন্বিত সমাধান সূত্র দরকার। 

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

অরবিন্দ সুব্রাহ্মানিয়াম ভারত সরকারের সাবেক মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা 

হোশ ফেলমান অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান জেএইচ কনসালটিংয়ের পরিচালক