Thank you for trying Sticky AMP!!

ওদের পাশে দাঁড়াতে পারে কানাডা

এ ঘটনায় বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। প্রথম অভিযোগ ওই ভবন ও ভবনে স্থাপিত কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে। দুর্ঘটনার আগের দিন ভবনটিতে ফাটল দেখা দিলেও তাঁরা তা আমলে নেননি, বরং কর্মীদের ওই ভবনে কাজে যেতে তাঁরা বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য কোনো কর্মীকে তাঁর কর্মস্থলে যেতে বাধ্য করা মোটেও সমীচীন নয়।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রানা প্লাজার ওই ভূমিটির বৈধ মালিক ছিলেন হিন্দু পরিবারের এক সদস্য। ভবনমালিক সোহেল রানা জোর করে তাঁকে ওই ভূমি থেকে উচ্ছেদ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রানা রাজনৈতিক পর্যায়ের পেশিমানব হিসেবে পরিচিত। অর্থের বিনিময়ে তিনি মিছিল-সমাবেশে বিক্ষোভ করার জন্য লোকজন সরবরাহ করে আসছিলেন। রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও মিছিল করে এসব মানুষ সাধারণ নাগরিকদের নৈমিত্তিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে।

এসব মানুষ ভয়ংকর হলেও ভবনধসের ঘটনার মূল কারণ হচ্ছে ব্যাপক দুর্নীতি বা সঠিকভাবে আইনের প্রয়োগ না হওয়া।

তবে আমাদের কেবল ভবনের নিরাপত্তার দিকে নজর দিলেই চলবে না, এসব নারী পোশাককর্মীর স্বল্প মজুরি ও তাঁদের শোচনীয় কর্মপরিবেশের বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে, যে বিষয়টিকে পোপ ফ্রান্সিস ‘ক্রীতদাসের শ্রম’ বলে তিরস্কার করেছেন।

এই আতঙ্কজনক শ্রম-পরিস্থিতির চূড়ান্ত দায়ভার বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই বহন করতে হবে। এসব সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক নেতাদের কাঁধে বর্তেছে। কারণ, তাঁরাই কেবল দুর্নীতি নির্মূল ও আইন প্রয়োগ করতে পারেন। মৌলিক এই মূল কারণগুলোর পরিবর্তন না হলে ভবিষ্যতে আরও এমন বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটবে।

বাংলাদেশের জন্য পোশাকশিল্প খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। এই খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে, এর মাধ্যমে দেশের বিপুলসংখ্যক নারী আর্থিকভাবে সবল হচ্ছেন। অল্পবিস্তর হলেও এই শিল্প এসব নারীকে আয়ের উৎস জোগাচ্ছে। তাঁদের এই ক্ষমতায়ন গরিব দেশটিতে উল্লেখযোগ্য সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সামাজিক উন্নয়নসূচকেও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। যেমন সাক্ষরতা বেড়েছে, শিশুর মৃত্যুহার কমেছে।

এই আয় ছাড়া পুরুষ-প্রভাবিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নারী জিম্মি হয়ে থাকবেন। এতে সামাজিকভাবে তাঁদের অবনমন ঘটবে এবং তাঁরা বঞ্চিত হবেন। বাংলাদেশে নারীর সাম্প্রতিক অগ্রগতি মৌলবাদী ধর্মীয় সংগঠনগুলোর হুমকির মুখে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অর্থে এসব সংগঠন আর্থিকভাবে সবল।

বাংলাদেশে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের (দুটি দলেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী) ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার রাজনীতির পরিণামে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠছে মৌলবাদীরা। একটি গোষ্ঠী  সম্প্রতি নারীর অধিকার খর্ব করার দাবি তুলেছে। ইসলামি শিক্ষার নামে তারা ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতিরও বিলোপ ঘটাতে চায়।

বাংলাদেশকে মৌলবাদীরা যাতে আরেকটি আফগানিস্তানে পরিণত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই দেশটিকে দুর্বল করে দিতে পোশাক ক্রেতাদের বর্জনের বিষয়টি, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কর্মজীবী নারীর স্বার্থ রক্ষা করবে না।

শ্রমের মান নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার যে সনদ রয়েছে, এতে অন্যতম স্বাক্ষরদাতা বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক শ্রম ও নিরাপত্তার মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনুসৃত রেকর্ড পুনরায় আশ্বস্ত করার মতো নয়। কয়েক মাস আগে একটি পোশাক কারখানায় আগুন লাগার ঘটনায়ও বাস্তবানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কাজেই এসব ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে কেবল আশ্বাস দিলেই তা যথেষ্ট হবে না।

যা-ই হোক, এসব ট্র্যাজেডি রোধে কানাডা সরকার কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। সমাধানের অংশ হিসেবে রিটেইল কাউন্সিল অব কানাডার পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে পোশাক কারখানার সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক চুক্তিতে সামাজিক দায়িত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

পোশাক আমদানিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার যেহেতু শতাধিক কোটি ডলারের বাণিজ্য রয়েছে, কাজেই অটোয়া সেখানে তাদের প্রভাব খাটাতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তা হবে তাৎপর্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কানাডা বলতে পারে, আমাদের বাজারে প্রবেশ করতে হলে বাংলাদেশকে আইএলও সনদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে।

বাংলাদেশে বড় হয়ে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, এতে আমি দেখতে পাচ্ছি যে কানাডা একটি কল্যাণকর শক্তি। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের নারীদের দুর্দশা কমানো যেতে পারে।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া

l অমিত চাকমা: সভাপতি, ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, কানাডা