Thank you for trying Sticky AMP!!

কোটা সংস্কার আন্দোলন

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাত নেতাই বর্তমানে কারাগারে আছেন। অন্যরা ভয়ে-আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের জন্য নির্ধারিত ছাত্রাবাসে তাঁরা থাকতে পারছেন না। এসব শিক্ষার্থী সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন গড়ে তোলেননি। তাঁরা সরকারি চাকরিতে যে ৫৫ শতাংশ কোটা আছে, তার সংস্কার দাবি করে আসছিলেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ‘কোটা থাকবে না’ ঘোষণা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিতও করেছিলেন। 

তারপরও কেন কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ নিল এবং কোটা সংস্কার নিয়ে অরাজক অবস্থা তৈরি হলো, সেটি আলোচনার দাবি রাখে। শুরু থেকে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। এরপর পুলিশের হামলা ও ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনীর একের পর এক আক্রমণের কারণে শিক্ষাঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একশ্রেণির নেতা-কর্মীর হাতে নিগৃহীত হয়ে আসছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের অবিমৃশ্যকারিতার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন, যার প্রমাণ কবি সুফিয়া কামাল হলে অভূতপূর্ব ছাত্রীবিক্ষোভ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি কাজ শুরু করার পর আশা করা গিয়েছিল, শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সেটি হয়নি। সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে এবং একপর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করে। ছাত্রলীগের যে নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর চড়াও হলেন, এমনকি হাতুড়ির ঘায় একজন শিক্ষার্থীর পা ভেঙে দিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি তারা। এটি কী ধরনের বিচার? কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে যে শিক্ষার্থীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খুবই
মামুলি ও অনির্দিষ্ট। আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, তাঁরা কেউই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আপ্তবাক্য উচ্চারণ করলেও সেটি কার্যত হচ্ছে না বা হতে দেওয়া হচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তির যে ধারায় রাশেদসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সেই ধারাটি বিতর্কিত এবং সরকারও বলেছে, এটি বাতিল করা হবে। তারপরও এই আইনকে হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে কোনটি উসকানি ও কোনটি সরকারের সমালোচনা, এই বিচার করার মালিক মন্ত্রী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয়। বিচার করবেন আদালত। কিন্তু সেই বিচারের আগেই ছাত্রনেতাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হলো কেন?

মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি পাওয়ার খোয়াব অনেক আগেই ভেঙে গেছে। এখন তাঁদের পড়াশোনাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একজন আটক শিক্ষার্থীর মা বলেছেন, তাঁর সন্তানকে ছেড়ে দেওয়া হোক, তিনি তাঁকে গ্রামে নিয়ে যাবেন। কতটা অসহায় হলে একজন দরিদ্র মা এই আকুতি জানাতে পারেন, সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখবেন কি?

একই ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় মার খাচ্ছিল, তখন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত হয়। কোটা সংস্কারের মতো এই আন্দোলনেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এখানেও আইন কেন নিজস্ব গতিতে চলল না? 

আটক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা প্রত্যাহার করা হোক এবং অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হোক। শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে এর বিকল্প নেই।