Thank you for trying Sticky AMP!!

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের রথী-মহারথীদের সক্রিয় অংশগ্রহণসর্বস্ব গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি বড় সাফল্য। আর এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ; সাধুবাদ পেতে পারেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও। ক্ষমতাসীন দল যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করছে না— নেতাদের এই দাবি আরও একবার প্রমাণিত হলো। এটা বলা অতিশয়োক্তি হবে না যে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে।
তবে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই জাতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার নিশ্চয়তা দেয় কি না, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। যদিও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গত চারটি সিটি নির্বাচনের মতোই গাজীপুরের নির্বাচনেও কারচুপি কিংবা নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ তোলার জন্য অত্যন্ত উদ্গ্রীব ছিল। তাদের আচার-আচরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে নির্বাচনে হেরে গেলে তারা কারচুপির ঢালাও অভিযোগ তুলতে পারত। বিরোধী দলকে এই অভিযোগ করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গাজীপুরের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলাজনিত তেমন সমস্যা হয়নি কিংবা নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের কারচুপির অভিযোগ না তোলা কিন্তু প্রমাণ করে না যে গাজীপুরের নির্বাচন কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার থেকে একেবারেই মুক্ত ছিল; বরং এই নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপকভিত্তিক অভিযোগ ছিল।
আরেকটি কথা হলো, স্থানীয় সরকারের একটি নির্বাচনে উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সদর্প পদচারণ কাম্য ছিল না। এটাও প্রীতিকর ছিল না যে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনটি নির্দলীয় মেজাজে হতে না দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া। লক্ষণীয় যে নির্বাচন কমিশন এ ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব দেখিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে এটা উচ্চারণ পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি যে এই নির্বাচন এ রকম তীব্র দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্য বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে আর ভোট ডাকাতির নির্বাচন সম্ভব নয়। সেদিন বাসি হয়ে গেছে। আমরা তাঁর মতের সঙ্গে একমত হতে পারলে সন্তুষ্ট হতাম। কিন্তু আমরা মনে করি, গাজীপুরসহ পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিরোধী দলের সেনা মোতায়েনের দাবি নাকচ হওয়া সত্ত্বেও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া এবং হেরে যাওয়ার পরও সরকারি দল দ্বারা কোনো সহিংসতা না ঘটানো প্রধানত নির্বাচন কমিশনের নয়, সরকারি দলের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। তবে সামগ্রিক বিচারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর আইন অনুযায়ী নাগরিকদের প্রতি যথোচিত আচরণের এটা মানদণ্ড কি না, সেটা যাচাই করার সময় এখনো আসেনি; বরং এটাই প্রতিভাত হয় যে সরকারি দল না চাইলে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা অনেকটা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে কাজ করে দেখাতে পারে।