Thank you for trying Sticky AMP!!

জাপান যেভাবে আবারও ‘গ্রেট’ হতে পারে

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা কিছু উচ্চাভিলাষী নীতি ও ধারণা নিয়ে হাজির হয়েছেন। এর মধ্যে সরকারের সেবাকে পুরোপুরি ডিজিটাল করা এবং দেশের আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার নীতি অন্যতম। তবে তিনি ‍একটি বিষয় এখনো হাজির করেননি। ধারণাটি হলো ২০৩০ সালের মধ্যে জাপানকে এমন এক জায়গায় নেওয়া, যাতে দেশটি তার একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। আর সেই প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে জাপানের জনগণ।

আশির দশকেই বিশ্ব বুঝে গিয়েছিল যে জাপানের শক্তি তার জনগণের মেধা। ওই সময়ই উচ্চ বেতন, অধিক উৎপাদনশীলতা আর পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিশ্বের সেরা শিক্ষাব্যবস্থা ছিল জাপানে। আনুগত্যের বিনিময়ে জাপানের উচ্চমাধ্যমিক আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করা ব্যক্তিরা পেয়েছে জীবনভর প্রশিক্ষণ আর আত্ম–উন্নয়নের সুযোগ। তবে হ্যাঁ, এ সুযোগ পেয়েছে জাপানের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক, শুধু পুরুষেরা।

জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো সেরা। এ ব্যবস্থায় লিঙ্গবৈষম্য কাটিয়ে উঠতে আমূল উন্নয়নও ঘটানো হয়েছে। আশির দশকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করা নারীদের ১৫ শতাংশের কম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন। যেখানে ছেলেদের ক্ষেত্রে এ হার ৩৫-৪০ শতাংশ। শিক্ষায় নারী-পুরুষের এ পার্থক্যই বলে দেয়, জাপানে আজও কেন নারী নেতৃত্বের সংখ্যা খুবই কম। এখন অবশ্য জাপানে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করা মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার হার বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে। সে তুলনায় ছেলেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার হার এখন ৫৫ শতাংশ। কাজেই ভবিষ্যতে জাপানে নারী নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তুলনামূলক অনেক বেশি।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সুগা এমন এক মন্ত্রিসভার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা জনগণের জন্য কাজ করবে। এই প্রতিশ্রুতি রাখতে হলে তাঁকে জাপানের জনগণকে রাখতে হবে দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে। যাতে দেশটিতে ৩০ বছর ধরে চলে আসা সস্তা শ্রমের কৌশলে পরিবর্তন আসে। জাপানের হওয়া উচিত এশিয়ার সুইজারল্যান্ড। এশিয়ার যুক্তরাষ্ট্র হলে চলবে না

তবে জাপানে এখন শ্রমজীবীদের শিক্ষাগত অর্জনের সঙ্গে তাদের কাজের অস্বাভাবিক অসামঞ্জস্য বিরাজমান। এ বৈপরীত্যের মূল কারণ লুকিয়ে আছে ১৯৯০-৯২ সালে পুঁজিবাজারে ধস এবং সম্পদের মূল্য কমে যাওয়ার মধ্যে। এর ফলে সে সময় জাপানে ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছিল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল প্রতিযোগিতার বাজারে চীনের আবির্ভাবজনিত চাপ। সে সময় থেকে জাপানে সস্তা শ্রমের কৌশল নেওয়া হয়েছে (যদিও তারা এটা স্বীকার করবে না)।

১৯৯০ সালে জাপানের ৮০ শতাংশ শ্রমিককে স্থায়ী ও নিরাপদ চুক্তির আওতায় নিয়োগ করা হয়েছে। তবে ২০১৯ সাল নাগাদ প্রায় ৪০ শতাংশকে স্বল্পমেয়াদি অনিরাপদ চুক্তির আওতায় কাজ করতে দেখা গেছে। তার ওপর শ্রম দেওয়ার মতো তরুণ-যুবার সংখ্যা দেশটিতে দিনে দিনে কমছে। কর্মীর চাহিদা পূরণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কোটি কোটি নারী ও অবসরে যাওয়া মানুষকে। এই মানুষগুলোর সিংহভাগই স্বল্পমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাজ করছেন। তাঁদের অনেককেই কাজ করতে হচ্ছে ন্যূনতম মজুরিতে।

এ সস্তা শ্রমের কৌশল করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লাভজনক হয়েছে ঠিকই। তবে জাপানের সাম্প্রতিক দশকগুলোয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধীরলয়ে হওয়ার বড় একটি কারণও এটি। এদিকে বাড়ছে দারিদ্র্যও। সব মিলিয়ে জাপানের অবস্থা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো হয়ে উঠছে। নব্বইয়ের দশকের অর্থনৈতিক সংকটের পর বেকারত্বের হার ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া এড়াতে সস্তা শ্রমের কৌশল হয়তো জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে যথাযথ ছিল। কিন্তু তা কখনো দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হতে পারে না।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন, জাপান হবে এমন এক জায়গা, যেখানে নারীরা উদ্ভাসিত হবেন। পরের বছর নারীর কর্মসংস্থানের হারে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে জাপান। কিন্তু সস্তা শ্রমের কৌশল এখনো বিদ্যমান দেশটিতে। কাজেই নারীর কর্মসংস্থানের হারের সঙ্গে বাড়তে পারেনি তাঁদের কাজের মান।

নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে এ নিম্ন মজুরি, চাকরিতে নিরাপত্তাহীনতা জাপানে বিয়ে না করার প্রবণতা যেমন বাড়াচ্ছে, একইভাবে কম জন্মহারের জন্যও দায়ী এ ব্যবস্থা। ফলে দিনে দিনে কমছে দেশটির জনসংখ্যা, যা প্রকারান্তরে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।

গত মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সুগা এমন এক মন্ত্রিসভার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা জনগণের জন্য কাজ করবে। এ প্রতিশ্রুতি রাখতে হলে তাঁকে জাপানের জনগণকে রাখতে হবে দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে। যাতে দেশটিতে ৩০ বছর ধরে চলে আসা সস্তা শ্রমের কৌশলে পরিবর্তন আসে। জাপানের হওয়া উচিত এশিয়ার সুইজারল্যান্ড। এশিয়ার যুক্তরাষ্ট্র হলে চলবে না।

বিল এমট: দ্য ইকোনমিস্ট–এর সাবেক প্রধান সম্পাদক এবং জাপানস ফার মোর ফিমেল ফিউচার গ্রন্থের রচয়িতা