নিরাপদ খাদ্যের প্রত্যাশা
আমাদের দেশের মানুষ যা যা খায়, তার মধ্যে এমন একটিরও নাম এখন বলা যাবে না যেটি ভেজাল বা বিষমুক্ত হিসেবে নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়। ভাত, মাছ, মাংস, শাকসবজি, ফলমূল থেকে শুরু করে কোনো ধরনের খাদ্যকেই এখন আর নিরাপদ খাদ্য হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। এক দিনে আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সরকার ও প্রশাসনের অব্যাহত গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে পরিস্থিতি আজ এ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেটাও বিক্ষিপ্ত এবং এ ক্ষেত্রে দূরদর্শিতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারটি জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত এমনই এক বিষয় যে, এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ছাড় দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। অথচ খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন ও নানা ধরনের রাসায়নিকের ব্যবহার, কৃষিকাজে বিচার-বিবেচনাহীনভাবে কীটনাশকের ব্যবহার, ফল পাকাতে রাসায়নিকের ব্যবহার, মাছের চাষ, হাঁস-মুরগি বা গবাদিপশু পালতে গিয়ে মানুষের জন্য ক্ষতিকর নানা রাসায়নিকের ব্যবহার আমাদের দেশের সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যকে বিষাক্ত করে তুলেছে। আমাদের দেশে পুরো খাদ্যচক্রের মধ্যেই যেভাবে বিষ ঢুকে গেছে, তাতে মনে হচ্ছে জাতি হিসেবে আমরা ধ্বংসের দিকেই এগোচ্ছি।
ফরমালিন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, নানা ব্যবস্থার কথা শোনা গেছে; এর পরও খাদ্যে এই বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, দেশে শিল্প খাতে ফরমালিনের প্রয়োজন ৪০ থেকে ৫০ টন, কিন্তু গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২০৫ টন। অর্থাত্ এই বাড়তি ১৫০ টনের বেশি ফরমালিন খাদ্যের সঙ্গে দেশবাসীর পেটে গেছে। বিভিন্ন বাজার ফরমালিনমুক্ত ঘোষণা করা হলো, অথচ সেখানে নিয়মিত কোনো পরীক্ষাই করা হয় না।
এটা এখন পরিষ্কার যে, বর্তমান উদ্যোগ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও একটি শক্তিশালী ফুড অ্যান্ড ড্রাগ প্রশাসন ধরনের কিছু গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য এখন আলাদাভাবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আবার খাদ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে সবগুলো একই মান ও পদ্ধতিও অবলম্বন করে না, পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে। ফলে প্রয়োজন একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী একক প্রতিষ্ঠান। আমলানির্ভর না হয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি হবে বিশেষজ্ঞনির্ভর এবং সেখানে থাকবে না কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের খবরদারি। সামগ্রিকভাবে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করাই হবে তাদের কাজ। আশা করি, সরকার দ্রুতই এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নেবে।
আরও পড়ুন
-
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনা, বন্ধ প্রাক–প্রাথমিক
-
চুয়েট বন্ধ ৯ মে পর্যন্ত, তবে দুই শর্তে হল খোলা
-
অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল, অভ্যুত্থানেই পুরো পরিবারসহ খুন হলেন আফগান প্রেসিডেন্ট দাউদ খান
-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রত্ব শেষ, তবু হলে থাকছেন নেতারা
-
কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে বসে ছিল পুলিশ, পরে মৃত্যু